অধ্যাপক পর্যায়ে পদোন্নতি দেয়ার পর পদায়ন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। শূন্য পদের চেয়ে বেশি পদোন্নতি এবং আগাম পদোন্নতি দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে নতুন পদায়নের জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। নতুন পদ না পেলেও ইনসিটু বা সংযুক্তিসহ ওএসডি হওয়ার জন্যও চলছে তদবির। ক্লাসরুম ছেড়ে নতুন অধ্যাপকদের গত দু’দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে দেনদরবার করতে দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার শি
ক্ষা ক্যাডারের ৩৬৬ কর্মকর্তাকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। জানা গেছে, অধ্যাপক পর্যায়ে শূন্য পদের সংখ্যা ২২৯টি। আগামী ডিসেম্বরে শূন্য হবে এ ধরনের পদের সঙ্গে ১০ শতাংশ ডিউটি পদ যোগ দিয়ে সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে প্রকৃত শূন্য পদের সঙ্গে আগাম হিসাবের পদ যোগ করে ৩৬৬ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এতে ২২৯ এর বাইরে ৭১ কর্মকর্তা নানাভাবে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। আর অবশিষ্ট ৬৭ কর্মকর্তার তেমন কোনো তৎপরতা নেই। কারণ তারা বয়স হওয়ার আগেই অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। আরও তিন মাস পর তাদের পদোন্নতি কার্যকর হবে। শেষ রক্ষা হয়নি ১৯৩ জনের। তাদের ‘ওএসডি’ করা হয়েছে। এটা মোট পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তার প্রায় ৫৩ ভাগ। ক্যাডার সার্ভিসের ইতিহাসে এ ঘটনা নজিরবিহীন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এখানেই শেষ নয়, এ পদের ‘ইনসিটু’ বাতিল করে ৪৩ জনকে পদায়ন করা হয়। এ সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হলেও ভিন্ন নামে নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত কিছু কর্মকর্তাকে আবার সেই ‘ইনসিটু’ই রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৬৭ জনকে আগাম ‘পদোন্নতি’ দিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের পদোন্নতি কার্যকর হবে আড়াই থেকে তিন মাস পর। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির পরদিন বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন অধ্যাপকরা দেনদরবার শুরু করেছেন। তাদের কেউ কেউ একই কর্মস্থলে নিচের পদে কাজ করতে চান। এ ব্যবস্থাকেই শিক্ষা ক্যাডারে ‘ইনসিটু’ (একধাপ নিচের পদে কর্মরত থেকে উপরের পদের বেতন নেয়া) বলা হয়। এটা সম্ভব না হলে তারা হয় ‘ওএসডি’ নতুবা ‘সংযুক্তি’ হতে চান। সূত্র জানায়, পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন জারির দিন মঙ্গলবারও এ নিয়ে ব্যাপক দেনদরবার হয়। যে কারণে ৩৬৬ জনের মধ্যে ১৯১ জনকে সংযুক্তিসহ ওএসডি এবং ২ জনকে শুধু ওএসডি করা হয়। জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান বলেন, ওএসডির তালিকা দেখে স্বভাবতই মনে হতে পারে, পদ ছাড়াই পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আসলে ৭ম ও ৮ম বিসিএসের অনেকেই পদোন্নতি বঞ্চিত আছেন। অথচ ১৩ বিসিএসেরও অনেকে তাদের সিনিয়র হয়ে গেছেন। এ জন্য ‘সমতা’ বিধানের লক্ষ্যে ১০ ভাগ সংরক্ষিত কোটায় কিছু পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এটা বেআইনি নয়। তিনি স্বীকার করেন, ‘ইনসিটু’, ‘ওএসডি’ এবং ‘সংযুক্তি’ পাওয়ার জন্য অনেকেই চেষ্টা-তদবির করছেন। কিন্তু আমরা সার্বিকভাবে শিক্ষার কথা চিন্তা করছি। তাই এ ব্যাপারে যথাসম্ভব কঠোর থাকার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে আমরা সুধীজনেরও সহায়তা চাচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানবিক কারণে কিছু ওএসডি ও সংযুক্তি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো ভুলভ্রান্তি বা মিসগাইড (ভুল বুঝিয়ে সুবিধা নেয়া) হয়ে থাকলে তা পর্যালোচনা করে ঠিক করা হবে। আগাম পদোন্নতি সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেক সময় ডিপিসি (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) সভা নিয়মিত ডাকা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া এটা ব্যয়সাপেক্ষও বটে। আগাম পদোন্নতির কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আগেই পদোন্নতির খবর জেনে গেলেন। তবে তিনি যথাসময়েই পদটি পাবেন। আর সংযুক্তির চিত্র ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলে যাবে। জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারে বর্তমানে মোট পদ রয়েছে ১৫ হাজার ১৭৭টি। মোট পদের মধ্যে অধ্যাপক ও সমমর্যাদার পদ ৮৩২টি। এর মধ্যে অধ্যাপক পদ শূন্য ছিল ২২৯টি। এ ছাড়া অধ্যাপক সমমর্যাদার অধ্যক্ষ পদে ৬৩টি, উপাধ্যক্ষ পদে ১৩ এবং ১০ ভাগ সংরক্ষিত পদের ৮৩টির মধ্যে ৬২টিসহ মোট ৩৬৭টি শূন্য ছিল। এর মধ্যে সরকার ৩৬৬ পদে পদোন্নতি দেয়। পদোন্নতির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এদের মধ্যে ১৯৩ জনকেই ওএসডি করা হয়েছে। এরা দেশের বিভিন্ন কলেজে সংযুক্তি হিসেবে থাকবেন। কিন্তু বেতন পাবেন মাউশি থেকে। নিয়ম অনুযায়ী সংযুক্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত হাজিরা দেবেন ও কাজ করবেন। তবে সংযুক্তির অতীত ইতিহাসে দেখা গেছে, কাজ করার রেকর্ড তেমন নেই। আবার ঢাকার বাইরে কেউ সংযুক্ত থাকলেও তিনি ওএসডির কারণে ঢাকার রেটে বেতন-ভাতা পাবেন। এর ফলে বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য ভাতা বেড়ে যাবে। এই পদোন্নতিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার লাভ হলেও শিক্ষার্থী এবং সরকারের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা। এ ব্যাপারে শিক্ষাসচিব যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার বাইরে সংযুক্তি এবং মাউশিতে ওএসডি থাকার সুযোগে যদি কেউ ক্লাস না নেন, তাহলে তাকে ধরা হবে। এ জন্য একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রথা, অনলাইনে হাজিরা এবং শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষককে পুরস্কৃত করা হবে। যারা সরকার তথা জাতিকে দেবেন, তারাও ব্যক্তিগতভাবে ভালো পদায়নসহ সুযোগ-সুবিধা পাবেন। জানা গেছে, শিক্ষা ক্যাডারে সহকারী অধ্যাপক ও সমমর্যাদার ৬৬০টি, সহযোগী অধ্যাপক ও সমমর্যাদার ৩৮৬টি পদ শূন্য রয়েছে। প্রভাষক ও সমমর্যাদার পদ শূন্য রয়েছে ১ হাজার ৫৩৩টি। সূত্র জানায়, এর মধ্যে সহযোগী অধ্যাপক পদের পদোন্নতি আগামী সপ্তাহেই হতে পারে। তখনও যদি অধ্যাপক পদের মতো ওএসডি, সংযুক্তি এবং ইনসিটু করা হয়, তাহলে এটাও জনগণের কোনো উপকারে আসবে না।
No comments:
Post a Comment