রাজধানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিবন্ধিত প্রায় সাড়ে আট লাখ গাড়ি আছে। রাজপথ থেকে অলিগলি দাপিয়ে বেড়া
নো এসব গাড়ির মধ্যে অন্তত পাঁচ লাখই কোনো না কোনো ত্রুটির কারণে চলাচলের যোগ্যতা হারিয়েছে। তবে তাতে মালিক বা চালকদের তেমন কোনো বিপত্তিতে পড়তে হয় না। কারণ ‘অযোগ্য’ এসব গাড়ি রাস্তায় নামানো হলে ‘বন্ধু’ হয়ে পাশে দাঁড়ায় পুলিশ। তাদের নির্ধারিত হারে টাকা দিলেই মিলে যায় ‘যোগ্যতার’ টিকিট। এ ক্ষেত্রে বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তারাও কম যান না! নিয়ম অনুযায়ী ফিটনেস সনদের জন্য বিআরটিএতে গাড়ি নিয়ে যেতে হবে। সেখানে পরীক্ষার পর সনদ দেওয়ার কথা। তবে বাস্তবে গাড়ি না নিয়ে গিয়েও ঘুষ দিয়ে বের করে আনা হয় চলাচল যোগ্যতার সনদ। গাড়ির মালিক, ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ করছে। কালের কণ্ঠের সরেজমিন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ চিত্র। পরিসংখ্যান অনুসারে, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও গাড়িগুলোকে চলাচলের অনুমতি দেওয়ায় রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনাও বাড়ছে। আর এসব গাড়ির নিচে চাপা পড়ে রাজধানীতে দিনে গড়ে একজনের প্রাণ যাচ্ছে। এর পরও চাঁদার উৎস টিকিয়ে রাখতে ট্রাফিক পুলিশ সচল রাখছে এসব অচল গাড়ি। পরিবহন শ্রমিকরা পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়, তবে চাঁদাবাজি বন্ধ হয় না। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, কাগজে-কলমে রাজধানীতে ফিটনেস সার্টিফিকেটবিহীন গাড়ি আছে ৯৩ হাজার ৬০৪টি। আবার সার্টিফিকেট থাকলেও চলাচলের যোগ্যতা নেই প্রায় চার লাখ গাড়ির। কারণ বিআরটিএতে গাড়ি উপস্থিত না করে ঘুষ দিয়ে বের করে আনা হয় চলাচল যোগ্যতার সনদ। আর এ কাজটি করছেন গাড়ির মালিকরাই। এর কোনোটিই বসে নেই, ট্রাফিক পুলিশকে ঘুষ দিয়ে দিব্যি চলছে রাস্তায়। গত বুধবার পল্লবীতে পূরবী সিনেমা হল পার হয়ে একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ল সারি সারি গণপরিবহন। কোনোটির জানালার কাচ নেই, রং নেই; কালো ধোঁয়ায় পেছনের নম্বর প্লেট হয়ে আছে ‘অদৃশ্য’। রং লাগানো গাড়ি খুঁজতে গিয়ে বিহঙ্গ পরিবহনের টিয়া রঙের একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-জ-১১-৩২৩৭) চোখে ধাক্কা খেল। সামনের বাঁ দিকের চাকার ত্রুটি সারানো হচ্ছিল। গাড়িচালক মো. কাউসার অন্য আরেকজনকে নিয়ে চিন্তামগ্ন। কী হয়েছে জানতে চাইলে কাউসার বলেন, ‘গাড়িটি মিরপুর থেকে সদরঘাট পথে চলাচল করে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুটি ট্রিপ দিতে পেরেছি। মিরপুরে এসে দেখি ব্রেক ধরছে না। ধীরে ধীরে গাড়ি এখানে এনেছি।’ জানা গেল, ৩৬ আসনের গাড়িটি চলতে চলতে হঠাৎ থেমে যায়। চলাচলের যোগ্যতার সনদ (ফিটনেস সার্টিফিকেট) আছে কি না জানতে চাইলে কাউসার তা দেখাতে পারেননি। গাড়িতে থাকা বিভিন্ন কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেল, ২৮ অক্টোবর একটি মামলা হয়েছে। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে দিতে হবে জরিমানা। চালক কাউসার নিজেই সন্দিহান গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে কি না। আরো জানা গেল, রাজধানীর মিরপুর-সদরঘাট ও গুলশান-নতুনবাজার রুটে বিহঙ্গ পরিবহনের ১৩২টি গাড়ি চলাচল করে। এর অর্ধেকই চলাচলের উপযোগী নয়। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর শাহবাগের রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে এ পরিবহনের একটি বাস সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই ফিরোজা বেগম (৪০) ও চান বুরু (৩৫) নামে দুজনের প্রাণহানি ঘটে। মোটরসাইকেল ছাড়া বাস-মিনিবাস বা প্রাইভেট কারের মতো গাড়ির বছরে একবার ফিটনেস পরীক্ষা করাতে হয় বিআরটিএ অফিসে নিয়ে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারের ঘরে নিয়মিত আয়কর ও ফি দিয়ে তা না করে পুলিশকে ঘুষ দিয়ে মালিকরা রাস্তায় চালাচ্ছেন চার লাখ ৯৩ হাজার ৬০৪টি গাড়ি। সরকারের কোষাগারে অর্থ না দিয়ে পুলিশকে গাড়িপ্রতি গড়ে মাসে ঘুষ দিচ্ছেন কমপক্ষে ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা। এর বাইরেও পুলিশের জন্য মালিক আলাদা ‘ঘুষ’ বরাদ্দ রাখেন। এটি আবার তাঁরা প্রকাশ্যে বলতেও চান না। কারণ বলে দিলেই ঘুষের হার বেড়ে যাবে। এখন এই ঘুষ দিনে গাড়িপ্রতি ১৪০ থেকে ৫০০ টাকা। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, গাড়ির নির্মাণকালীন নকশা অক্ষত থাকা, ব্রেক-গিয়ার ঠিক থাকা, দরকারি বাতি থাকা, কালো ধোঁয়া বের না হওয়া, রংচং ঠিক থাকলে সাধারণত কোনো গাড়িকে ফিট বলা হয়। মোটরযান আইন অনুসারে ফিটনেস পেতে অন্তত ৩০ ধরনের কারিগরি ও বাহ্যিক বিষয় পরীক্ষা করতে হয়। কিন্তু বিআরটিএতে খালি চোখে গাড়ি দেখে এই সনদ দেওয়া হয়। বিআরটিএ মিরপুর অফিসে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় ফিটনেস পরীক্ষার জন্য। এসব পরীক্ষা করার জন্য মেকানিক্যাল অ্যাসিসটেন্ট আছেন মাত্র দুজন। বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, বিআরটিএ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে এখনো দাঁড়াতে পারেনি। একেক সময় একেক সরকার একেকভাবে বিআরটিএর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। বিআরটিএর দুর্বলতার সুযোগে পুলিশি চাঁদা-বাণিজ্য চলছে। পরিবহন খাতের গবেষক রেজাউল করিম বলেন, রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় মালিকদের বিভিন্ন সমিতি বিআরটিএ চালাচ্ছে। প্রতিদিন সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের সেবা দিতেই বেশি ব্যস্ত থাকে সংস্থার কর্মকর্তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিহঙ্গ পরিবহনের মালিক ২২ জন। এই পরিবহন কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসিরুদ্দিন খোকনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একটি গাড়ি ঢাকা শহরে তিন-চার মাস চলার পর আনফিট হয়ে যায়। আমরা আমাদের কম্পানির রংচটা গাড়িগুলো ওয়ার্কশপে দিয়েছি।’ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ফিটনেস সনদ বা অন্যান্য কাগজপত্র থাকলেও অজুহাত দাঁড় করিয়ে গাড়িতে রেকার লাগিয়ে ডাম্পিং করার ভয় দেখিয়ে ঘুষ নিচ্ছে পুলিশ। ট্রাফিক পুলিশ ও মহাসড়ক পুলিশের কাজই হচ্ছে গাড়ি আটক করে ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়া। এ কারণে অনুপযুক্ত গাড়ি রাস্তায় বের করে টাকা দিয়েও পার পেয়ে যায় চালকরা। আর এই টাকা যাচ্ছে মালিকের পকেট থেকে। শ্রমিক নেতারা পুলিশকে ঘুষ বা চাঁদা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও মালিকরা তা স্বীকার করতে নারাজ। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহর এনা পরিবহনের ৩০টি বাস চলাচল করত মিরপুর-মতিঝিল রুটে। ক্ষতি হওয়ায় সাত মাস আগে এর মধ্যে দুই কোটি টাকা কমে বিক্রি করে দিয়েছেন ২৮টি গাড়ি। একই রুটে ওই সব গাড়ির নাম এখন হাজি পরিবহন। যানজটসহ বিভিন্ন যন্ত্রণার কারণে নগরে গাড়ি চালানো যাচ্ছে না মন্তব্য করে এনায়েত উল্লাহ বলেন, সরকার ট্যাক্সি ক্যাবের মতো শুল্কমুক্ত আমদানির সুযোগ দিলে নতুন গাড়ি নামাতে পারতেন মালিকরা। পুলিশকে কেন ঘুষ দিচ্ছেন মালিকরা- প্রশ্ন করা হলে এই পরিবহন নেতা বলেন, ‘পুলিশ যেন হয়রানি না করে সেটাই আমরা চাইব।’ তার বেশি কিছু তিনি বলতে চাননি। অবৈধ গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর গত সোমবার থেকে রাজধানীর মিরপুরের বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে ফিটনেস পরীক্ষা করানোর ও লাইসেন্স নিতে ভিড় করছেন মালিক-চালকরা। বুধবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলারসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি সারি সারি দাঁড়িয়ে। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী ‘বাংলার তরী’ হিউম্যান হলারের সামনের অংশ বিধ্বস্ত। চালক মো. বশির বলেন, ‘সকাল ১০টায় এসেছি। ফিটনেস পরীক্ষা করাব। সব মিলে দিতে হচ্ছে চার হাজার ৬০০ টাকা। এ গাড়িচালক জানান, মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদের পাশের স্ট্যান্ডে এ ধরনের ২০০ গাড়ির প্রতিটি থেকে পুলিশের জন্য দিতে হচ্ছে ১৩০ টাকা। টাকা না দিলে কী হয় প্রশ্ন করলে বশির বলেন, ‘না হইলে গাড়ি চলতে দেয় না।’ একজন গাড়িমালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, চার বছর ধরে গাড়ির রুট পারমিট দেওয়া হচ্ছে না। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুলিশ চাঁদাবাজি করছে। রুট পারমিট দেওয়া হলে সরকার তিন মাসে গাড়িপ্রতি কমপক্ষে ৪০০ টাকা রাজস্ব পেত। গাড়ি নামালেও সরকারকে আমরা রাজস্ব দিতে পারছি না। তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশকে চাঁদা না দিলে আমাদের গাড়ি চলে না।’ রাজধানীতে চলাচল করে ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এর কোনোটির ফিটনেস নেই, কোনোটির নেই ডিজিটাল নম্বর প্লেট। এটা নিতে সারিতে অপেক্ষারত (ঢাকা মেট্রো-থ ১৩-৪০৭১) অটোরিকশার বিভিন্ন অংশ ছিল বিধ্বস্ত। চালক মো. স্বপন মিয়া বললেন, মালিকের সাত-আটটি গাড়ি আছে। গাড়ির রং নেই, এত দুরবস্থা হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এইডা মালিক জানে। মালিকের বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। সিএনজি অটোরিকশাচালকরা জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, শেওড়াপাড়া, ফার্মগেট, ঝিগাতলা, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অটোরিকশা কম চলাচল করে। কারণ যেকোনো অজুহাতে এসব স্থানে ট্রাফিক পুলিশ ভয় দেখিয়ে চাঁদা নেয়। সিএনজি অটোরিকশা মালিক মনির হোসেন জানান, আগে ১০টি গাড়ি ছিল। পুলিশের যন্ত্রণায় বেচে দিয়েছেন সাতটি। মিরপুর-গুলিস্তান রুটে ইটিসি পরিবহনের ৮৫টি গাড়ি চলাচল করত। এখন করে ৫০টি। ৩৫টিই নষ্ট। ৫০টির মধ্যে ১৫টি গাড়ির ফিটনেস সনদ নেই। এসব গাড়ির মালিক মোট ৩০ জন। কারো গাড়ি একটি, কারো তিনটি। পরিবহন কম্পানির সুপারভাইজার সুনীল চন্দ্র মিত্র শাওন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে বিআরটিএতে গিয়ে একটি গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করাতে গেলে ঘুষ না দেওয়ায় করাতে পারিনি। পরে মালিক ৫০০০ টাকা দিলে সনদ পাওয়া যায়।’ কাকে ঘুষ দিতে হয়েছে তা তিনি বলতে রাজি হননি। ইটিসি পরিবহনের একটি বাস (নম্বর ঢাকা মেট্রো-জ ১১-২১০৮) বুধবার দুপুরে পল্লবীতে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন চালক মো. মুন্না। তিনি জানান, আগামী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁর গাড়ির ফিটনেসের মেয়াদ আছে। তাঁর সহকারী মুরাদ বলেন, পথে প্রতিদিন ৩০০-৫০০ টাকা চাঁদা নেয় ট্রাফিক পুলিশ। কাগজ থাকলেও লাভ নাই, ঘুষ দিতেই হয়। পরিবহন খাতের গবেষক ও গাড়িচালকদের কাছ থেকে জানা গেছে, মোটরযান নবায়ন করার সময় ফিটনেসগত ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও তা নবায়ন করা হয়। বিআরটিএ কার্যালয়ে ১০০ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ৫ থেকে ১৫টি পর্যন্ত অতিরিক্ত আসনসহ অনুপযোগী যাত্রীবাহী বাসের ফিটনেস সনদ পেতে অসুবিধা হয় না। বিআরটিএ থেকে মোটরযানের উপযুক্ততার কোনো সনদ না নিয়েই যাত্রী ও মালবাহী মোটরযানে ইঞ্জিন, বডি ও রং পরিবর্তন করে কিংবা গাড়িতে রিকন্ডিশন্ড ইঞ্জিন সেট করার পর গাড়ি রাস্তায় চালানো যায়। তবে এ ধরনের গাড়ি পুঁজি করে চাঁদাবাজি করছে ট্রাফিক পুলিশ। গাড়ির চালকরা মামলা থেকে রক্ষা পেতে তাৎক্ষণিকভাবে মাসিক বিট, মাসোহারা বা ঘুষ দেন। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা, ঢাকা-ধামরাই-ঢাকা ও ঢাকা-টঙ্গী-গাজীপুর-ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে বিভিন্ন কম্পানির অনুপযোগী বাস চলাচল করছে বেশি। অবৈধ গাড়ি ও চালকের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিযানের অভিজ্ঞতা থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজধানীর বাসগুলোর অর্ধেকের ফিটনেস সনদ নেই। প্রাইভেট কারগুলোর একটি বিশেষ অংশ ফিটনেসবিহীন। বিমানবন্দর সড়কে অভিযান চলাকালে বৃহস্পতিবার (গতকাল) পাজেরো গাড়িও দুই বছর ধরে ফিটনেসবিহীন দেখতে পেয়েছি। ৫০০-১০০০ টাকায় জাল লাইসেন্স মিলছে। তাই সরকারকে টাকা না দিয়ে আসল লাইসেন্স না নিয়ে চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন।’ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, মালিকরা ফিটনেস পরীক্ষা, রুট পারমিট নেওয়া ও আয়কর জমা না দিয়ে পুলিশকে ঘুষ দিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছেন। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই খাত কখনোই সরকারের নিয়ন্ত্রণে ছিল না, এখনো নেই। বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিআরটিএতে দালালদের ঘুষ দিয়ে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করে সনদ নেওয়ার অভিযোগ পুরনো। ফিটনেস পরীক্ষার সময় তাই বিআরটিএ অফিসগুলোতে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আকস্মিকভাবে উপস্থিত হচ্ছেন। আমি নিজেও আজ (গতকাল) বিআরটিএ মিরপুর অফিসে গিয়ে অবস্থা দেখেছি।’ বিআরটিএর চেয়ারম্যান বলেন, ‘লাইসেন্স দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তদারকি আরো বাড়াচ্ছেন। ৭৫ বছরের পুরনো আইনে বিআরটিএ চলছে। এ আইন পরিবর্তন করে সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এই আইনে বিআরটিএর এই ক্ষমতা আরো বেড়ে যাবে।’ অনুপযুক্ত গাড়ি চাঁদা বা ঘুষে রাস্তায় নামা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যাপারটি পুলিশের। বিআরটিএর পাশাপাশি জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়েই পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনা যাবে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত একাধিক সভায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা পুলিশের চাঁদাবাজি বা ঘুষের অভিযোগ তুলে ধরেন। আমাদের মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন দাবিসংবলিত স্মারকলিপিতেও চাঁদাবাজি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়। আমরা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বারবারই অনুরোধ করছি।’ তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজির বিষয়ে নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে আমরা খতিয়ে দেখি ও ব্যবস্থা নিই। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা এ ধরনের অভিযোগ কিছুদিনের মধ্যে তোলেননি। এর আগে যত অভিযোগ এসেছে, আমরা খতিয়ে দেখেছি।’
No comments:
Post a Comment