সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের কেউ নিজেকে ‘বাঙালি’ বলে স্বীকার না করলে তাকে বন্দিশিবিরে পাঠানোর নীতি থেকে সরে আসারও পরামর্শ দিয়েছে। গণতন্ত্রমুখী সংস্কারের বিষয়ে মিয়ানমার পেছন দিকে হাঁটছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এ রকম সতর্কবার্তার পাশাপাশি ওই আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির এক শীর্ষ কর্ম
কর্তা। খবর রয়টার্স, এএফপি ও বিবিসির। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বসবাস করে। সে দেশের সরকার দীর্ঘদিন ধরে তাদের নাগরিক বলে অস্বীকার করে আসছে। এর জেরে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে রোহিঙ্গারা বর্ণবাদী পরিস্থিতির মতো এক প্রতিকূল পরিবেশে রয়েছে। ২০১২ সালে মুসলিম-বৌদ্ধ দাঙ্গায় অন্তত এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপ-উপদেষ্টা বেন রোডস গতকাল বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমরা নতুন একটি পরিকল্পনা চাই; যে পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পাবে।’ রোহিঙ্গাদের কেউ নিজেকে বাঙালি বলে স্বীকার না করলে তাকে বন্দিশিবিরে পাঠানোর যে নীতি মিয়ানমার সরকার নিয়েছে, তা থেকে সরে আসতে বেন রোডস দেশটির কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই নীতি ‘সর্বজনীন অধিকারের’ লঙ্ঘন। মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির বিষয়ে মার্কিন উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁকে আরও উচ্চকণ্ঠ হতে হবে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতা জোট আসিয়ান ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট ইস্ট এশিয়ার সম্মেলন উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে মিয়ানমার সফরে আসেন বেন রোডস। পেছনে হাঁটছে মিয়ানমার: গণতন্ত্রের পথে যাত্রার জন্য সংস্কার কার্যক্রমের ক্ষেত্রে মিয়ানমার আবার পেছনের দিকে হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মিয়ানমার সফরে যাওয়ার আগে থাইল্যান্ডভিত্তিক সাময়িকী ইরাবতীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। ওবামা তাঁর এমন মন্তব্যের কারণ হিসেবে মিয়ানমারে সাংবাদিকদের হয়রানি ও রোহিঙ্গাবিরোধী নীতিসহ বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেন। ওবামা বলেন, ‘দেশে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমারকে আরও অনেক দূর যেতে হবে।’ কিছু কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়া, সংবিধান সংশোধন-প্রক্রিয়া এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে অস্ত্রবিরতি’—এ সবই ইতিবাচক বিষয়। কিন্তু ২০১০ সালের নভেম্বরে সংস্কার-প্রক্রিয়ার শুরুতে যতটা দ্রুত আশা করা হয়েছিল, ততটা দ্রুত এগুলো করতে পারেনি মিয়ানমার। ওবামা আরও বলেন, ‘কিছু বিষয়ে সংস্কারে অগ্রগতি হলেও অন্য বিষয়গুলোতে গতি মন্থর হয়েছে, এমনকি পেছন দিকে হেঁটেছে মিয়ানমার।’ গতকাল অং সান সু চিসহ কয়েকজন এমপির সঙ্গেও বৈঠক করেন ওবামা। আজ শুক্রবার তিনি মিয়ানমারের নেত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও বিস্তারিত বৈঠক করবেন যার পর সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন রয়েছে। গতকালের ওই বৈঠকের পর ওবামা বলেন, ‘এটি ছিল মিয়ানমারের ক্রান্তিকালে এ পর্যন্ত অর্জনগুলোকে সংহত করার প্রক্রিয়া নিয়ে একটি চমৎকার আলোচনা।’ ইরাবতী কে ওবামা বলেন, ‘সু চি মিয়ানমারের সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়া ও আগামী বছর অনুষ্ঠেয় পার্লামেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে কী ভাবছেন, আমি তা জানতে আগ্রহী। ওই নির্বাচনকে অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য করতে যুক্তরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীভাবে সহায়তা করতে পারে, তাও জানতে চাইব।’ এর আগে ২০১২ সালের নভেম্বরে মিয়ানমার সফর করেন বারাক ওবামা। সেটা ছিল কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রথম মিয়ানমার সফর। এনএলডির আহ্বান: সংবিধানের ৫৯এফ ধারা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে মিয়ানমারের বিরোধী দল এনএলডি। সংবিধানের এই ধারার কারণে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না এনএলডির নেত্রী অং সান সু চি। গতকাল পার্লামেন্টের মুক্ত আলোচনায় ওই ধারা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে এনএলডির মুখপাত্র উইন মিন্ত বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বীদের যদি ফাঁদে ফেলে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে।’ রোহিঙ্গাদের পক্ষে বান কি মুনের আহ্বান: জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনও রোহিঙ্গাদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আসিয়ান ও ইস্ট এশিয়া সম্মেলনে উপলক্ষে নেপিডো গিয়ে মিয়ানমারের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ আহ্বান জানান। গত বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বান কি মুন বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যে বৈষম্য ও সহিংসতার মুখোমুখি হচ্ছে, তাতে আমি উদ্বিগ্ন। রাখাইন রাজ্যের জনগণের মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদার প্রতি সবার সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।’
No comments:
Post a Comment