পাকিস্তানের কাছ থেকে পারমাণবিক বোমা কেনার ‘কৌশলগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে সৌদি আরব। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতার ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দল মার্কিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন এ কথা। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কারণে তার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব বেশ কিছুদিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। খবর দ্য সানডে টাইমস ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার। তিন দশক ধরে মিত্র পাকি
স্তানের পারমাণবিক প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছে সৌদি আরব। এ ছাড়া পাকিস্তানের জ্বালানি তেলের দামের ক্ষেত্রে ভর্তুকি বাবদ শত শত কোটি ডলার দিয়েছে দেশটি। অনেক দিন ধরে ধারণা করা হচ্ছিল, সৌদি আরব চাইলে পাকিস্তানের কাছ থেকে পারমাণবিক বোমা নিতে পারে। গত মাসে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে দেশটির সঙ্গে ছয় বিশ্বশক্তির (জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য রাষ্ট্র ও জার্মানি) মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, তা সৌদি আরবকে ক্ষুব্ধ করে। সৌদি শাসকদের অভিযোগ, আগামী মাসে চুক্তিটি চূড়ান্ত করা হলে, সৌদি আরবের ‘শত্রু’ শিয়া-অধ্যুষিত ইরান পারমাণবিক বোমা বানানোর সুযোগ পাবে। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সানডে টাইমসকে বলেছেন, পাকিস্তান ও সৌদি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে পরমাণু বিষয়ে দীর্ঘদিনের চুক্তি রয়েছে। আর এ অবস্থায় সৌদি আরব আরও এগিয়ে যাওয়ার ‘কৌশলগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে। তবে সৌদি আরবকে এরই মধ্যে পাকিস্তান পরমাণু প্রযুক্তি বা বোমা সরবরাহ করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ কাজে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সদর দপ্তরে শত শত মানুষ যুক্ত আছেন। সৌদি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সমঝোতা চুক্তি সৌদি আরবকে পারমাণবিক বোমা সংগ্রহের পথে আরও ঠেলে দিয়েছে। সৌদি আরবের সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান প্রিন্স তুর্কি বিন ফয়সাল সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় এক সম্মেলনে বলেন, ‘ইরানের যা থাকবে, আমাদেরও তা থাকতে হবে।’ ইরানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শান্তি স্থাপনের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সুন্নি-অধ্যুষিত সৌদি আরব ও তার আরব মিত্রদেশগুলো। একজন মার্কিন সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের শান্তি চুক্তি রয়েছে। এখন সৌদি আরব কৌশলগত সিদ্ধান্ত এগিয়ে নিতে চাইছে। পাকিস্তান সাধারণত বাইরে পরমাণু প্রযুক্তি বা অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে অস্বীকার করে। কিন্তু এ বিষয়ে পাকিস্তানের ভূমিকা বিতর্কিত বলে অভিযোগ আছে। পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সামরিক সহযোগিতা আছে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারে প্রবেশের অনুমতি দেশটির প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ও অন্য নেতাদের দেয় না। কিন্তু সৌদি আরবের কর্মকর্তাদের সাদরে সে সুযোগ দেয়। যুক্তরাজ্যের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড ডেভিড ওয়েন বলেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের মধ্যে যে ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতা রয়েছে, তার ভিত্তিতে অনেক আগে থেকেই মনে করা হয়, সৌদি আরব চাইলেই পাকিস্তানের কাছ থেকে পরমাণু বোমা পেতে পারে। যুক্তরাজ্যের একজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, পশ্চিমা সামরিক নেতারা মনে করেন, সৌদি আরব পরমাণু বোমা সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁরা আরও আশঙ্কা করছেন, তুরস্ক ও মিসরের মতো মধ্যপ্রাচ্যের অন্য শক্তিগুলোও হয়তো একই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ও বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা দেখা দেবে।
No comments:
Post a Comment