Friday, May 15, 2015

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ:প্রথম অালো

অনন্তর গতিবিধির ওপর হত্যাকারীরা দীর্ঘদিন নজর রেখেছিল বলে পুলিশের ধারণা সিলেটে হত্যাকাণ্ডের শিকার লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশের (৩২) কর্মস্থল সুনামগঞ্জের পূবালী ব্যাংকের জাউয়াবাজার শাখার ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার প্রায় এক বছরের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। অনন্তর গতিবিধির ওপর হত্যাকারীরা দীর্ঘদিন নজর রেখেছিল বলে ধারণা পুলিশের। খুনিদের শনাক্ত করা ও নজরদারি কত দিন ধরে ছিল—সেই ধারণা পেতে পু
লিশ ওই ফুটেজ সংগ্রহ করে। অনন্ত ওই ব্যাংকে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেভেলপমেন্ট অফিসার’ পদে চাকরি করতেন। গত মঙ্গলবার সকালে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নূরানী আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে বাসার কাছেই খুন হন তিনি। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একজন কর্মকর্তা গতকাল জানান, অনন্তকে হত্যা করার আগে তাঁর চেহারা চেনার জন্য অপরাধীরা গ্রাহক সেজে ওই ব্যাংকে গিয়ে থাকতে পারে। সেটা বিবেচনায় রেখে ব্যাংকের সিসি ক্যামেরার ফুটেজের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা হবে। এর বাইরে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের ওপর নজর রেখে তদন্ত চলছে। হত্যার দায় স্বীকার করে টুইটার বার্তা প্রকৃত ঘটনা আড়ালের চেষ্টা কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মহানগর পুলিশের কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, অনন্ত হত্যার তদন্ত কার্যক্রম সম্পূর্ণ পরিচালিত হচ্ছে ঢাকা পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী। কারণ, এর আগে ব্লগার রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান একই কায়দায় খুন হন। তাই তদন্তে ঘটনাস্থলকে মুখ্য বিষয় না ভেবে খুনিদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে তদন্ত কার্যক্রমে ডিএমপি ও ঢাকা ডিবির সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ইতিমধ্যে প্রত্যক্ষদর্শী একজনসহ পাঁচজনের বক্তব্য নিয়েছে। অনন্তর বাসা থেকে তাঁর ব্যবহৃত কম্পিউটারটি পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে এতে সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখছে। এর বাইরে তদন্তের স্বার্থে অনন্তর ব্যক্তিগত কক্ষ থেকে কিছু দেশি-বিদেশি বইও সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনন্তকে একাধিক প্রাণনাশের হুমকির তথ্যটিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখেছে পুলিশ। তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমত উল্লাহ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কাজ করছি। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই বলা সম্ভব নয়। পূর্ববর্তী ব্লগার ও লেখকদের খুনের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই অনন্তকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা প্রায় নিশ্চিত। এর সূত্র ধরেই ঘটনার পরম্পরাগুলো খতিয়ে দেখে তদন্ত চলছে।’ অনন্তর বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বলেন, ‘যেহেতু খুনটি হতে আমরা স্বচক্ষে দেখিনি, তাই কে বা কারা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেটা আমরা নিশ্চিত নই। তবে লেখালেখির কারণেই যে অনন্ত খুন হয়েছেন, সেটা আমরা নিশ্চিত। আমরা কেবল অনন্ত হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ প্রতিবাদমুখর সিলেট: অনন্ত হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বিকেলে নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদীচী সিলেট জেলা সংসদের উদ্যোগে অনন্ত হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ হয়। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র অনন্ত হত্যার প্রতিবাদে দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল দুপুরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে অনন্ত হত্যার প্রতিবাদে ‘সংহতি সমাবেশ’ অনুষ্ঠিত হবে। অনন্তর আদ্যশ্রাদ্ধ আজ: আজ শুক্রবার অনন্তর আদ্যশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে। অনন্তর বড় বোনের স্বামী ও সিলেট কর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সমরবিজয় শেখর জানান, ‘অপমৃত্যু’ হওয়ায় হিন্দু রীতি অনুযায়ী মৃত্যুর চতুর্থ দিন চতুর্থা পূরক শেষে আদ্যশ্রাদ্ধ সম্পন্ন করতে হয়। রীতি অনুযায়ী ইতিমধ্যেই সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

No comments:

Post a Comment