Wednesday, June 17, 2015

রাজধানীর ৬০ ভাগ রাস্তাই ভাঙাচোরা:যুগান্তর

রাজধানীর কেল্লার মোড় শ্মশান ঘাট থেকে লালবাগ চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। এটির পিচ ঢালাই-ইট-খোয়া উঠে মাটি বেরিয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। কিন্তু এসব গর্ত দেখে প্রথমে বোঝার উপায় নেই। কারণ কিছুক্ষণ আগে হওয়া বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলো টইটুম্বুর। এর মধ্যেই যাত্রী নিয়ে চলছে রিকশা-অটোরিকশা ও প্রাইভেট কার। কোনো রিকশা কাত হয়ে যাচ্ছে, আবার কোনোটি উল্টিয়ে পড়ছে। আহত হচ্ছেন চালক ও আরোহ
ী। পানিতে আটকে যাচ্ছে কোনো কোনো অটোরিকশা। হাঁটুপানি ভেঙে পার হচ্ছেন পথচারীরা। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেল, সড়কটির এমন বেহাল দশা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধীন এ এলাকার বাসিন্দাদের এ দুর্ভোগ নিত্যদিনের। অথচ ২০১২-১৩ এবং ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫- এ তিন অর্থবছরে প্রায় কোটি টাকার সংস্কারকাজ করা হয়েছে সড়কটিতে। কিন্তু কিছুদিন ভালো থাকার পরই আবার ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে প্রতিবারই। সংস্কারের ছয়-সাত মাসের মাথায় ফিরে গেছে আগের বেহাল অবস্থায়। এই বেহাল দশা শুধু রাজধানীর কেল্লার মোড় শ্মশান ঘাট থেকে লালবাগ চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কটিতেই নয়, এ মুহূর্তে রাজধানীর প্রায় ৬০ ভাগ রাস্তারই একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গত সাড়ে তিন বছরে রাজধানীর প্রধান সড়ক, গলি এবং উপগলি মিলিয়ে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে প্রশাসক শাসিত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এই অর্থের অর্ধেকই লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। ২০১১ সালের নভেম্বরে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিভক্তির পর সরকার মনোনীত প্রেষণের আমলারা (প্রশাসক) দুই সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করেছেন। নতুন করে আবার সড়ক মেরামতের জন্য আগামী অর্থবছরে ১ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছে দুই সিটি কর্পোরেশন প্রকৌশল বিভাগ। সড়ক মেরামতে প্রতি অর্থবছরে মোটা অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখা হলেও কোনো কার্যকরী ফল আসছে না। ঠিকাদারসহ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেই এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। লুটেপুটে খাচ্ছে জনগণের দেয়া ট্যাক্সের টাকা, অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। অনুসন্ধান ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সাধারণত রাজধানীর সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কার করা হয় ন্যূনতম ৫ বছরের টেকসইয়ের চিন্তা করে। কিন্তু এসব সড়ক ৬ মাস বা এক বছর না পেরোতেই ভেঙেচুরে একাকার হয়ে যাচ্ছে। শর্ত অনুযায়ী, কাজ সম্পন্ন করার এক বছরের মধ্যে যদি কোনো সড়ক ভেঙে যায়, সে ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জমা থাকা ১০ শতাংশ জামানতের টাকা দিয়ে ভাঙা রাস্তার পুনঃসংস্কার করার কথা। কিন্তু এটি কার্যকর হচ্ছে না। ফলে রাজধানীর সড়ক উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে বছরে শত শত কোটি টাকা খরচ হলেও কাক্সিক্ষত সুফল পাচ্ছেন না রাজধানীবাসী। শুধু পকেট ভারি হয়েছে ঠিকাদার ও দুই সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্টদের। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সংস্থার অর্থের সংস্থান না থাকলে বাকিতে কোনো কাজ করানোর বিধান নেই। কিন্তু প্রশাসকদের সময়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে এ ধরনের কাজ হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার। ফলে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেসব সড়ক সংস্কার বা উন্নয়নকাজ করানো হয়েছে তার ব্যয়ের সিংহ ভাগই লোপাট হয়েছে। কারণ বাকিতে কাজ করানোয় সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের মনিটরিংও করা হয়নি। আরও জানা গেছে, প্রশাসকদের সাড়ে ৩ বছরে রাজধানীর সড়ক উন্নয়ন এবং সংস্কার বরাদ্দের অর্ধেকের বেশি লোপাট হয়েছে। আর বাকি টাকা দিয়ে নিুমানের মালামাল ব্যবহার করে কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে কাজ শেষ করা হয়েছে। এসব কারণেই মূলত রাজধানীর সড়কগুলো সংস্কারের অল্প দিনের মধ্যে আবার পুরনো চেহারায় ফিরে যায়। রাজধানীর সড়কগুলোর খারাপ অবস্থার জন্য দায়ী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা, প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারদের সমন্বয়ে গড়ে উঠা একটি ‘সিন্ডিকেট’। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে কাজ বাস্তবায়ন পর্যন্ত একযোগে লুটপাটের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করেছে তারা। এ ক্ষেত্রে দুই সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ বিভাগও বড় ভূমিকা পালন করছে। বড় বড় টেন্ডারগুলোতে পছন্দের লোকদের পাইয়ে দিতে নামসর্বস্ব কিছু জাতীয় দৈনিকে ‘চুক্তির’ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ঘটনাও ঘটেছে। এসব টেন্ডারের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত পত্রিকাগুলো ক্রয় করে নিত ‘সিন্ডিকেট’। এ কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এসব কাজে অংশ নিতে পারেননি। ফলে সিন্ডিকেটভুক্ত ঠিকাদাররা সামান্য কিছু কাজ করে অর্থ লুটপাট করেছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে এমন ঘটনা ঘটেছে অহরহ। এসব ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত করলেও পরে রহস্যজনক কারণে তা থেমে যায়। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তির উদাহরণ নেই। কারণ হিসেবে জানা গেছে, তদন্তকারী কর্মকর্তারা ‘ম্যানেজ’ হয়ে যাওয়ায় এসব অনিয়মের কোনো শাস্তিই হয় না। সিটি কর্পোরেশন সূত্রমতে, রাজধানীর সড়কগুলোয় নিুমানের সংস্কার ও উন্নয়নকাজ করায় পিচ ঢালাই, ইট, বালি, সুরকি, খোয়া উঠে মাটি বেরিয়ে এসেছে। সড়কগুলোয় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার মৌসুম চলে আসায় প্রতিদিনই কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এসব সড়কে চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রাজধানীবাসীকে। দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। ডিএসসিসির এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, ‘বিভক্তির পর প্রশাসকরা নগর উন্নয়নের প্রতি কোনো গুরুত্ব দেননি। একেকজন ৬ মাসের জন্য এসেছেন, এই সময়ে তারা কীভাবে নিজের পকেট ভারি করা যায়, সেই চিন্তায় কাজ করেছেন। কোনো ধরনের টাকার ব্যবস্থা না থাকলেও ২৫০ কোটি টাকার ওয়ার্ক ওর্ডার দিয়েছেন বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিজেদের টাকায় কাজ করায় প্রকৌশলীদের তদারকি কম ছিল। আর এ সুযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নামকাওয়াস্তে কাজ করে বিল তুলে নিয়েছে। সেসব দায়ভার এখন নতুন মেয়রের কাঁধে পড়েছে। প্রকৌশলীদের অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই অনিয়মের সঙ্গে আঁতাত করতে হয়েছে।’ এই প্রকৌশলী বলেন, ‘এ ধরনের কাজের ওয়ার্ক ওর্ডার করতে ঠিকাদাররা সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্টদের কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছে। সংস্থার কর্তারা ঠিকাদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করায় ঠিকাদাররা ভালো করে কাজ করেনি। আর এসব কারণে রাজধানীর সড়কগুলোর চেহারা বদলায়নি। বরং নগরীর সড়ক এবং অন্যান্য উন্নয়ন কাজের মান অনেক পিছিয়েছে।’ ডিএনসিসির এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, ‘আমরা প্রকৌশলীরা দুর্নীতির ঊর্ধ্বে নই। বেতন দিয়ে সংসার চলে না বলে আমরাও বিভিন্ন কাজের পার্সেন্ট নিয়ে থাকি। তবে এটা ৫-১০-এর বেশি হয় না। প্রশাসকদের সময়ে যেভাবে অর্থ লুটপাট হয়েছে, অন্য কোনো সময় তা হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘মেয়রদের সময়ে মোট বরাদ্দের ৮০ ভাগ কাজ হয়েছে। মেয়র, প্রকৌশলী এবং ঠিকাদাররা মিলে সর্বোচ্চ ২০ ভাগ লুটপাট হয়েছে। কিন্তু বিগত সাড়ে তিন বছরে প্রশাসকদের সময়ে ডিএনসিসিতে স্মরণকালের দুর্নীতি হয়েছে। তারা আমাদের ব্যবহার করে এসব অনিয়ম করেছেন। আমাদের সংস্থার প্রকৌশলীরা বাধ্য হয়েই এসব কাজ করেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক চাপ ছিল বলেও জানান তিনি।’ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ঠিকাদারি সমিতির এক সদস্য জানান, সিটি কর্পোরেশনে ব্যবসা করতে হলে পদে পদে পার্সেন্ট দিতে হয়। শুরু হয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে। এরপর টেন্ডার কন্ট্রোল করতে সংস্থার শীর্ষকর্তা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব, প্রধান প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করতে হয়। ৫ পার্সেন্ট থেকে ১০ পার্সেন্ট পর্যন্ত দিতে হয় এসব কর্মকর্তাদের। সর্বশেষ বিল উঠাতে ম্যানেজ করতে হয় হিসাব বিভাগকে। ক্ষেত্রবিশেষে অডিট বিভাগকেও ম্যানেজ করতে হয়। দুই মেয়র যা বললেন : জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হক যুগান্তরকে বলেন, অতীতে ডিএনসিসিতে অনেক অনিয়-দুর্নীতি হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছি। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। তবে পুরনো বিষয় নিয়ে আমি ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাই না। তিনি বলেন, আমি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছি সড়কগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করি, আগামী ৬ মাসের মধ্যে সড়ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন দেখতে পাবেন নগরবাসী। ডিএসসিসির মেয়র মো. সাঈদ খোকন বলেন, প্রশাসকদের সময় ডিএসসিসিতে অনেক অনিয়ম হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি। আপনার কাছ থেকেও শুনলাম। আমি এসব অনিয়ম কঠোর হস্তে দমনের চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, রাজধানীর সড়কগুলোর মান উন্নয়নে কাজ শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হবে। বেহাল দশা : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অভিজাত আবাসিক এলাকা বনানী। এ এলাকায় ২০১১-১২, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সড়ক সংস্কারে প্রায় ১০ কোটি টাকার কাজ করা হয়েছে। ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করিয়েছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বলে জানা গেছে। সম্প্রতি বনানী ৭ এবং ১১ নম্বর সড়কে গিয়ে দেখা গেছে বেহাল চিত্র। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় জমে আছে পানি। বৃষ্টির পানিতে সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে আছে। এসব সড়কে কাদাপানি মেখে চলাচল করতে হচ্ছে অভিজাত বনানীর বাসিন্দাদের। এ ছাড়া গাবতলী থেকে বাবুবাজার পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কটি ঢাকার দ্ইু সিটি কর্পোরেশনে পড়েছে। এ সড়কটির চিত্র অত্যন্ত করুণ। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। এসব সড়কে এখন পানি জমে থাকায় পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। ফলে যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন যানবাহন চালকরা। ভাঙাচোরা সড়কে চলাচলের জন্য গাড়ির ফিটনেস দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ সড়ক সংস্কারে ১৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আরও জানা গেছে, রাজধানীর গুলশান-১ এলাকার বেশির ভাগ সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। অথচ ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গুলশান এলাকার সড়ক উন্নয়নে ২২ কোটি টাকা ব্যয় করেছে উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এ ছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড থেকে রামপুরা এবং রামপুরা থেকে পল্টন পর্যন্ত সড়কের চেহারাও খুবই খারাপ। এ সড়কের সংস্কার এবং উন্নয়নের দুই সিটি কর্পোরেশন গত তিন অর্থবছরে প্রায় ১৪ কোটি টাকা খরচ করেছে। মালিবাগ-শান্তিনগর এলাকার সড়ক সংস্কারে আলাদাভাবে কাজ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। এরপরও এ সড়কে পিচ ঢালাই দুর্বল হয়ে গেছে। সামন্য বৃষ্টিতেই পিচ ঢালাই উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর ব্যস্ততম ভাঙাচোরা এ সড়কে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। পুরান ঢাকার জুরাইন, গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী, চকবাজার, মৌলভীবাজার সড়কগুলো গত তিন অর্থবছরে সড়ক সংস্কারের নামে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা খরচ করে ডিএসসিসি। অথচ এসব এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষ চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এবারের বর্ষায় এ সড়কে কীভাবে মানুষ চলাচল করবেন তা নিয়ে শংকায় রয়েছেন এলাকাবাসী। নবনির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলররাও দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। বর্ষার আগে নতুন করে সড়কের সংস্কারকাজ করা যাবে না। সেহেতু বর্ষার ভোগান্তিতে নগরবাসীর সমালোচনা সহ্য করতে হবে তাদের। ডিএনসিসির উত্তরা আবাসিক এলাকার ৭, ৮, ৯ এবং ৪ ও ৬ নম্বর সড়কের চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মডেল আবাসিক এলাকার সড়কগুলো অযত্ন-অবহেলায় বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে সিটি কর্পোরেশন। জানা গেছে, গত অর্থবছরে মডেল উত্তরা এলাকার সড়ক উন্নয়নে ২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যে কেউ এখন উত্তরার সড়কগুলো ঘুরে দেখলে বুঝতে পারবে কত নিুমানের কাজ করেছে ঠিকাদাররা। আর এসব কাজের যাচাই-বাছাই না করেই বিল দিয়ে দিয়েছে ডিএনসিসি, অভিযোগ এলাকাবাসীর। ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে রাজধানীর সড়কগুলো সংস্কারের পরও ভালো রাখা যায় না। এর মধ্যে অন্যতম বিভিন্ন সেবা সংস্থার অতিমাত্রায় খোঁড়াখুঁড়ি। এমন ঘটনা ঘটে সংস্কারের এক মাসের মাথায় জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা ওয়াসা সড়কটি খুঁড়ে পানির লাইন বা সুয়ারেজ লাইনের কাজ করে। এসব কাজে বাধা দেয়া যায় না। এমন অসংখ্য কারণ রয়েছে। সড় সংস্কারের লুটপাটের ঢালাও লুটপাটের অভিযোগ সঠিক নয়। তবে সুস্পট কোনো অভিযোগ পেলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে।’ অন্যদিকে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘রাজধানীর সড়কগুলোর জলাবদ্ধতা এবং খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ঠিক রাখা যায় না। এ কারণে প্রায় প্রতিবছরই সংস্কার করার প্রয়োজন হয় বেশিরভাগ সড়ক। এটা রুটিন কাজ ডিএসসিসির। দুর্নীতির কারণে এমনটি হয়ে থাকে এমনটি সঠিক নয়। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে যে অনিয়ম হচ্ছে না, সেটা বলব না।’ জামানতের টাকা আগে পরিশোধ করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ডিএসসিতে যোগদান করেছি অল্প কিছুদিন। আমি এসব ব্যাপারে কিছুই জানি না। এসব ব্যাপারে আমি খোঁজখবর করে দেখব। কোনো ধরনের অনিয়ম হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’  

No comments:

Post a Comment