ঈদে বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়ক ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সড়কগুলো ২০ জুলাইয়ের মধ্যে মেরামতের তৎপরতা শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ব্যবহারকারী গাড়িচালকরা বলছেন, অর্থ খরচ করে আগামী ছয় দিনের মধ্যে যে মেরামতকাজ হবে এগুলো টিকবে না। বৃষ্টি ও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ‘সাময়িক মেরামত’ ভেসে যাবে। ফলে যে সড়কে মানুষ ঘরমুখো হবে ফিরতি পথেই সেগুলো ‘সাময়িক ভালো’ অবস্থা থেকে ‘ভয়াবহ’ রূপ নিতে পারে। সংশ্লিষ
্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণাই পাওয়া গেছে। আগে থেকে কোনো পরিকল্পনা না নিয়ে হঠাৎ করে ইট-বালু ফেলে সাময়িকভাবে মহাসড়ক-সড়কের গর্ত ভরাট করা হচ্ছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বেশির ভাগ স্থানে বিটুমিন ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। সওজ অধিদপ্তরে প্রকৌশলীদের কাছ থেকে জানা গেছে, গতকালও বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির কারণে মহাসড়কে মেরামতকাজ বিঘ্নিত হয়েছে। মেরামত করা অংশে বালু ও ইটের সুরকি সরে গেছে স্থানে স্থানে। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিব ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা নতুন করে মহাসড়ক পরিদর্শন শুরু করেছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন মহাসড়কের স্থানে স্থানে ইট ও বালু ফেলে গর্ত ভরাট করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের আগে প্রতিবছর এভাবে তড়িঘড়ি সড়ক মেরামত করা হলেও এটা মোটেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নয়। হঠাৎ চাপে স্থানীয় সরকার : চাপে পড়ে এবার রাস্তাঘাট মেরামতে উদ্যোগী হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত শুক্রবার রাজধানীতে ঈদে বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় সভায় রাজধানীর রাস্তাঘাট যান চলাচলের উপযোগী করতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান করা হয় স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কে এম মোজাম্মেল হককে। ওই সভায় যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁকে এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এই টাস্কফোর্সটি ৯ সদস্যের। স্বরাষ্ট্র, যোগাযোগ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, গণপূর্ত অধিদপ্তর, ওয়াসা, ঢাকা মহানগর পুলিশের মতো সংস্থার প্রতিনিধিরা এই টাস্কফোর্সে আছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর কমিটির ৯ সদস্য অবশ্য এক হয়ে সভা করতে পারেননি। তবে চাপে পড়ে টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব কে এম মোজাম্মেল হক ব্যক্তিগতভাবে গত রবি ও সোমবার রাতে ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো পরিদর্শন করেন। কে এম মোজাম্মেল হক গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাতে যানজট না থাকায় দুই দিন রাস্তাগুলো স্বস্তিতে পরিদর্শন করেছি।’ তিনি রাজধানীর মালিবাগ থেকে মগবাজার ও মেয়র ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো চিহ্নিত করেছেন জানিয়ে বলেন, মালিবাগ থেকে মৌচাক অংশ সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থায় ছিল। ইট ফেলে এই অংশ সংস্কার করা হয়েছে। তবে সংস্কার করা হলেও পানি জমে থাকছে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের জন্য মগবাজার থেকে মৌচাক অংশের সড়কের যান চলাচলের অংশ কমে গেছে। এই সড়কে যান চলাচলের অংশ বাড়ানোর জন্য প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। মোজাম্মেল হক বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা এখন ব্যবহারের উপযোগী। সেখানে রাস্তা নয় এখন বড় সমস্যা যানজট। কয়েক দিনের মধ্যে টাস্কফোর্সের সদস্যদের সভা হবে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তা যান চলাচলের উপযোগী রাখতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান। ওই আন্তমন্ত্রণালয় সভায় ২০ জুলাইয়ের মধ্যে রাজধানীর সব রাস্তা যান চলাচলের উপযোগী রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মহাসড়কে নির্বিঘ্নে চলবে না গাড়ি : সওজ অধিদপ্তরের অধীন ২১ হাজার ৪৮১ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে। অধিদপ্তরের সর্বশেষ সমীক্ষা অনুসারে, এর মধ্যে সাড়ে আট হাজার কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক নাজুক অবস্থায় রয়েছে। নাজুক অংশ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এক হাজার ২২৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। জানা গেছে, অধিদপ্তরের ৬৫টি সড়ক বিভাগের বেশির ভাগ বিভাগেই কাজ সময়মতো করা হয়নি। এ কারণে এবার ঈদে বাড়ি ফেরা নির্বিঘ্ন করতে জোড়াতালি দেওয়ার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। গত শনিবার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পরিদর্শনকালে ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সওজ অধিদপ্তরের সব সড়ক যান চলাচলের উপযোগী রাখা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। সওজ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেরামতকাজ পরিদর্শন করতে ১৬টি ভ্রাম্যমাণ দল থাকবে। মহাসড়ক থেকে পানি নিষ্কাশন ও তাৎক্ষণিক মেরামতের জন্য থাকবে জরুরি ভ্রাম্যমাণ দল। অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ছোট দারোগারহাট, বড় দারোগারহাট, সীতাকুণ্ড বাইপাস, কুমিরা বাইপাস অংশসহ বিভিন্ন স্থানে সংস্কারকাজ হয়েছে। তবে ওই সব অংশ অতিক্রম করে গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে আসা ট্রাকচালক আবদুল মুকিত কালের কণ্ঠকে বলেন, যেসব ইট দেওয়া হয়েছে সেগুলো ঠিকমতো বসানো হয়নি। এগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছ। বৃষ্টির পানিতে ভিজে নরম হয়ে যাচ্ছে। পদুয়াসহ বহু স্থানে এখনো গর্ত রয়ে গেছে। ট্রাকচালক আবদুস সবুর গতকাল দুপুরে মহাখালীতে আলাপকালে কালের কণ্ঠকে জানান, গাজীপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ীতে ইট ফেলা হয়েছে। এ সড়কে ভারী যানবাহনের চাপ বেশি, তাই এ মেরামত টিকবে না। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা, ভালুকা, সিডস্টোর, ত্রিশালসহ বিভিন্ন স্থানে মেরামত শেষ হয়নি।
No comments:
Post a Comment