Tuesday, July 15, 2014

জার্মানির নতুন ইতিহাস:কালের কন্ঠ

আর্জেন্টিনার সমর্থকদের কোলাহল থেমে গেছে রিও-তে। দেখা যাচ্ছে এখন জার্মানদের, তবে যতটা না জার্মান তার চেয়ে বেশি ব্রাজিলিয়ানরা জার্মানির বেশভূষা নিয়েছে। জিতেছে জার্মানি কিন্তু হুল্লোড় করছে তারা। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে প্রথম ইউরোপের দলের কাছে বিশ্বকাপ শিরোপা তুলে দিতে পেরে যেন বেজায় খুশি তারা! জার্মানরাও প্রথম দিকে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল স্বাগতিকদের ৭-১ গোলে হারিয়ে। এত গোলের জেরে না আবার পথে-ঘাটে জার্মান সমর
্থকদের হেনস্তার শিকার হতে হয়। সেটা হয়নি, সেমিফাইনাল হারের পর থেকেই সাধারণ ব্রাজিলিয়ানরা মেনে নিয়েছে জার্মান শ্রেষ্ঠত্ব, আর্জেন্টিনা ফাইনালে ওঠার পর থেকে সেটা আরো বাড়-বাড়ন্ত। স্বাগতিকরা পাশে থাকলে কি আর্জেন্টিনা পারত? সেটাও কঠিন হতো, কারণ লড়াইটা অনুমিত ছিল এ রকম- এক আর্জেন্টাইন শিল্পীর সঙ্গে জার্মান একাদশের লড়াই। বেশির ভাগ বোদ্ধার বাজি ছিল জার্মানির পক্ষে। কারণ এই দল জার্মান সিস্টেমে তৈরি, যেখানে প্রতিভার চেয়ে পরিশ্রম বড়, খেলার চেয়ে লড়াই বড়। দলের হার্ডডিস্কে যেভাবে বিশ্বকাপ শিরোপা সেট করে দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই তারা শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে। তাই শিল্পী উত্তুঙ্গ রূপ নিয়ে সবুজের বুক রাঙাতে না পারলে মাথা নোয়াতে হবে জার্মান সিস্টেমে। আর্জেন্টিনা সেটিই করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাতেই বিশ্বকাপের ৮৪ বছরের পরম্পরা ভেঙে জার্মানি গড়েছে নতুন ইতিহাস। এর আগ পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপ হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায় এবং চারটি শিরোপাই জিতেছে এই মহাদেশের ফুটবল দল। তাদের ভুবনে হানা দিতে পারেনি কোনো ইউরোপীয় দল। পঞ্চমবারে এসে সেই ইতিহাস ভেঙে শিরোপা নিয়ে যাচ্ছে আটলান্টিকের ওপারের জার্মানি। তাই ইওয়াখিম ল্যোভের বুক গর্বে ফুলে উঠছে, ‘ইউরোপের প্রথম দল হিসেবে আমরা শিরোপা জিতেছি লাতিন আমেরিকায় এসে। এটা আমাদের গর্ব, এই আনন্দ অটুট থাকবে আমাদের সারাজীবন।’ অথচ টুর্নামেন্টের আগে ইউরোপের দলগুলোর দক্ষিণ আমেরিকায় অনভ্যস্ততা, আবহাওয়ার সমস্যা এবং গরম নিয়ে খুব সোচ্চার হয়েছিল। ব্রাজিল নিয়ে খুব বিপদে ছিল। একমাত্র জার্মানিই এসব নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন ছিল না, যত প্রতিকূলতাই থাক সব কিছু জয় করার জন্য তারা শুরু থেকেই তৈরি হয়ে এসেছে ফুটবলের দেশে। এখানে শিরোপা জয় মানে বাড়তি সম্মান। এ জন্য তাদের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল দশ বছর আগে থেকেই। এক বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে তারা ফুটবলারদের মানোন্নয়নের প্রজেক্টে নেমেছিল। বিভিন্ন জায়গায় ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’ খুলে তরুণ ফুটবলারদের তৈরি করেছে নিখুঁতভাবে। তাই ইওয়াখিম ল্যোভ এই শিরোপাকে ওই প্রজেক্টের সাফল্য হিসেবে মানছেন, ‘ক্লিন্সম্যানের সঙ্গে দশ বছর আগে আমরা খেলোয়াড়দের মানোন্নয়নের কাজ শুরু করেছিলাম। এখন এর ফল পেয়েছি।’ মাঝে গত আট বছরে জার্মানি ইউরো এবং বিশ্বকাপে খুব কাছাকাছি গিয়ে ফিরে এসেছিল শূন্য হাতে। চোকার অপবাদের লেবেলটা গায়ে প্রায় লেগেই যাচ্ছিল, বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্যর্থ হলে হয়তো স্থায়ীভাবে লেগে যেত। ‘বছরের পর বছর আমরা পারফরম্যান্সের উন্নতি করেছি, যতক্ষণ না সাফল্য পাচ্ছি এটা প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হতো’, বলেছেন ৫৪ বছর বয়সী জার্মান কোচ। ২৪ বছর পর বদলি গোৎজের গোলে জার্মানদের ভাগ্য পাল্টে গেছে, বিশ্বকাপ জিতেছে। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে আর অপেক্ষার প্রহর এত লম্বা হবে না। গোৎজে-ম্যুলারদের নতুন প্রজন্ম জার্মান ফুটবলকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়। ল্যোভের স্বপ্ন সেটা একদিন স্পেনের মতো হবে, ‘আমরা চাই স্পেনের মতো ফুটবল খেলতে, তারা যেভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আধিপত্য করেছে ঠিক সেভাবে। সবাই তখন জার্মান ব্লু-প্রিন্ট অনুসরণ করবে।’ সেটার আয়োজন হিসেবে তো তাদের খেলায় যন্ত্রের সঙ্গে সৌন্দর্যের মিশ্রণ ঘটাতে চাইছে। বার্য়ান মিউনিখ নিয়েছে ফুটবল সৌন্দর্যের ফেরিওয়ালা পেপ গার্দিওয়ালাকে। আস্তে আস্তে জার্মান ফুটবল সৌন্দর্যের পূজারি হয়ে ২৪ বছর পর বিশ্ব জয় করেছে। পরিবেশের বৈরিতা উপেক্ষা করে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে শিরোপা জিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে। এখান থেকেই শুরু হয়েছে জার্মান সাফল্যের নতুন সাফল্যের ইতিহাস।

No comments:

Post a Comment