কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে নৈরাজ্য আর বিড়ম্বনা বন্ধের লক্ষ্যে অনলাইনে ভর্তির আওতা আরো বাড়ানো হচ্ছে। আগামী বছর ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের কোনো কলেজে যেতে হবে না। ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে অনলাইনে সম্পন্ন হবে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস শুরুর দিন কলেজে উপস্থিত হবে। নতুন ব্যবস্থায় ভর্তির ক্ষেত্রে কোনো অপেক্ষমাণ তালিকা থাকবে না। শিক্ষার্থীরা ক্রমানুসারে নিজেদের পছন্দের কলেজের তালিকা দেবে। মেধাক্রম অনুসারে সেই তাল
িকার কোনো একটি কলেজে ভর্তির সুযোগ মিলবে। ভর্তির নীতিমালা অনুসারে ৫০০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অনলাইনে ভর্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে অনলাইনে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা টেলিটক মোবাইল ফোন থেকে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করে থাকে। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তি তালিকা প্রকাশ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে আসনসংখ্যার ২৫ শতাংশ অপেক্ষমাণ মেধাক্রম তালিকা কলেজের ওয়েবসাইট ও নোটিশ বোর্ডে প্রকাশ করা হয়। এই সুযোগে ছাত্রলীগের এক শ্রেণির নেতা-কর্মী বা অন্য প্রভাবশালীরা অপেক্ষমাণ তালিকা উপেক্ষা করে নিজেদের পছন্দের শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য অনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে। ভর্তি বাণিজ্যেও নেমেছে বিভিন্ন গ্রুপ। এ কারণে দেশের বিভিন্ন কলেজে হামলার ঘটনাও ঘটে। এই অভিজ্ঞতা থেকে ভর্তিব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এখান থেকে সারা দেশের অনলাইন ভর্তিব্যবস্থা সমন্বয় করা হয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বলেন, অনলাইনে ভর্তি শুরু হওয়ার পর সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তা সম্পন্ন হচ্ছে। ফলে ভর্তি বাণিজ্য সীমিত হয়ে এসেছে। এর পরও অপেক্ষমাণ তালিকা থাকার সুযোগ নিচ্ছে কেউ কেউ। তাই অপেক্ষমাণ তালিকা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বদলে একাধিক পছন্দের কলেজের তালিকা নিয়ে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে। এই নতুন ব্যবস্থা চালুর ফলে কলেজে ভর্তি বাণিজ্যের আর কোনো সুযোগ থাকবে না বলে তিনি জানান। এই ব্যবস্থা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে চালু রয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিদ্যমান এই ব্যবস্থায় কেউ ১০টি কলেজে ভর্তি হতে চাইলে ১০টি আবেদন করতে হয়। ফলে বারবার আবেদনের ফি গচ্চা যায়। কিন্তু নতুন নিয়ম অনুযায়ী টেলিটকের মাধ্যমেই আবেদন নেওয়া হবে। তবে ফি বাড়ানো হবে। আর বিদ্যমান ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের পছন্দের কলেজে ভর্তির জন্য আলাদাভাবে আবেদন করতে হয়। অনলাইনে ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রে ফি নেওয়া হয় ১২০ টাকা করে। নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের একটি মাত্র আবেদন করতে হবে। পছন্দের তালিকায় ১০ থেকে ২০টি কলেজের নাম উল্লেখ করা যাবে। মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা- এই বিভাগ অনুযায়ী সম্মিলিত মেধা তালিকা তৈরি করা হবে। সেখান থেকে পছন্দের কলেজের অগ্রাধিকার ও কলেজে আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে বরাদ্দ করা হবে। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির উপযোগী সারা দেশের প্রায় তিন হাজার কলেজের মধ্যে থেকে ৭৪৩টিতে এবার অনলাইনে ভর্তির কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে কোনো কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর সেখানে গিয়ে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় ভর্তির কাজে কোনো কলেজে যেতে হবে না। আবেদন থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন হবে। ভর্তির অর্থ জমা দিতেও শিক্ষার্থীকে কলেজে যেতে হবে না। অনলাইনে পরিশোধ করতে পারবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে, নতুন এই পদ্ধতি চালুর ক্ষেত্রে নটর ডেম কলেজ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াতে পারে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভর্তি নীতিমালা মানছে না, আদালতে চ্যালেঞ্জ করে পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। ঢাকা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক শাহেদুল খবির চৌধুরী জানান, ২০১১ সাল থেকে কলেজে অনলাইনে ভর্তি শুরু হওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে নৈরাজ্য হ্রাস পেয়েছে। দেশের ৯৫ শতাংশ কলেজে এবার ভর্তি নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি। কিছু জায়গায় যতটুকু সমস্যা হয়েছে, অপপ্রচার হয়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি। ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ অনলাইনে সম্পন্ন করা গেলে সরকারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে।
No comments:
Post a Comment