উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করেন অনেক আইনবিদ। তাঁদের মতে, এটি হলে বিচার বিভাগকে ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ হিসেবে থাকতে হবে। অবশ্য ভিন্নমতও প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। এক দল আইনবিদ মনে করেন, সংসদকে এমন ক্ষমতা দিয়ে সংবিধান সংশোধন করা হলে বিচার বিভাগ শুধু ক্ষতির মুখেই পড়বে না, বিচার বিভাগ পৃথক করার সার্থকতা নষ্ট হবে। বিচারক নিয়োগে
দলীয়করণ বাড়বে। আর এক সরকারের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের সময় নিয়োগ দেওয়া বিচারপতিদেরও বিদায় নেওয়ার পালা শুরু হবে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বিচারপ্রার্থীরা। অবশ্য আরেক পক্ষের মতে, সংসদের হাতে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা দিয়ে সংবিধান সংশোধন করা হলে তাতে অন্যায়ের কিছু নেই। তবে এ ক্ষমতা ব্যবহারের ওপরই নির্ভর করবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। বর্তমানে বিচারপতিদের অভিশংসন বা অপসারণে সংসদের বা সরকারের কোনো হাত নেই। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে বিচারকদের দক্ষতা ও আচরণ তদন্ত করে যদি কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয় তবেই রাষ্ট্রপতি বিচারককে অভিশংসন করতে পারেন। ১৯৭৮ সালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের এই বিধান সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়। বিশিষ্টজনদের কারো কারো মতে, এই বিধানটি বিচার বিভাগকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিল। ইচ্ছা করলেই সরকার যখন তখন কোনো বিচারককে অপসারণ করতে পারত না। এর আগে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ৯৬ অনুচ্ছেদে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ছিল জাতীয় সংসদের হাতে। উচ্চ আদালতে বিচারকদের নিয়োগ নিয়ে এমনিতেই নানা সমালোচনা রয়েছে। যে দলই ক্ষমতায় আসে তাদের অনুগত লোকদের উচ্চ আদালতে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার নজির রয়েছে। এ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. রুহুল আমীন আইনজীবীদের এক সভায় বলেছিলেন, দেশে বিচারক নিয়োগ নিয়ে মহাপ্রলয় ঘটে গেছে। এর ধাক্কা আগামী ২০ বছরেও সামলানো যাবে না। আইনজীবীদের কারো কারো মতে, বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে দেওয়া হলে অপসারণ নিয়েও মহাপ্রলয় ঘটবে। ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর আগের সরকারের নিয়োগ দেওয়া ১০ বিচারককে প্রধান বিচারপতির সুপারিশ উপেক্ষা করে বাদ দেওয়া হয়েছিল। সংসদকে বিচারক অপসারণের দায়িত্ব দেওয়া হলে এমনটি বারবার ঘটবে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। এতে বিচার বিভাগের ভারসাম্য নষ্ট হবে। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে দেওয়া হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে হয়। সরকার যখন বিচার বিভাগের ওপর অসন্তুষ্ট হবে তখনই ইচ্ছামতো বিচারকদের অপসারণের সুযোগ পাবে। তিনি আরো বলেন, ১৯৭২ সালে সংসদের হাতেই বিচারকদের অপসারণের বিধান ছিল। কিন্তু ১৯৭৮ সালে সংবিধান সংশোধন করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান করা হয় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শক্তিশালী করার জন্য। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের জন্য সংসদকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবে পরিচালিত করা। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নেওয়ার পর বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে সংসদের ক্ষমতা বিনষ্ট করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়, যা বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়। বর্তমান সরকার রাজনৈতিক প্রভাব বিচার বিভাগের ওপর প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এতে কোনোভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। সংবিধান বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার যে এখতিয়ার দিয়েছে, তাও বিনষ্ট হবে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলে কিছুই থাকবে না। খন্দকার মাহবুব আরো বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যদি ক্ষুণ্ন হয়, তবে দেশের সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমার প্রথম কথা হলো, সংবিধানে এ ধরনের কোনো পরিবর্তন করতে হলে আবারও সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এই সংসদ এতই বিতর্কিত যে অধিকাংশ সংসদ সদস্য বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এই নির্বাচন নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন রয়েছে। তাই এই সংসদের সংবিধান পরিবর্তন করা উচিত নয়।’ তিনি বলেন, সংসদের কাছে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হলে বিচার বিভাগের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হবে। এ সরকার বিভিন্নভাবে ক্ষমতা সুসংহত করার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে সর্বতোভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। সর্বশেষ বিচারকদের অপসারণ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে, এটা তারই একটা অংশ। আসিফ নজরুল বলেন, উচ্চ আদালতের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা প্রাথমিক তদন্তের ক্ষমতা বিচার বিভাগের হাতে রাখা উচিত। এখন রাষ্ট্রপতি যে ক্ষমতাবলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে তদন্তের ভার ওই কাউন্সিলকে দিয়ে থাকেন, তেমনটিই হওয়া উচিত। বিচারকদের আচরণ ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দিলে তার ভিত্তিতে সংসদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারে। এভাবে পরিবর্তন হলে ভালো। কিন্তু যদি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাদ দিয়ে শুধু সংসদের ওপর ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়, তাহলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হবে। আসিফ নজরুল আরো বলেন, ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা নিয়ে সমাজে প্রশ্ন রয়েছে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে আরো কার্যকর কিভাবে করা যায় তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে।’ সরকার সমর্থক আইনজীবীদের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতা সংসদকে দেওয়ার অর্থই হলো বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারের পক্ষে রায় না দিলেই ওই বিচারক সরকারের রোষানলে পড়বেন। আর তাঁকে চাকরি হারাতে হবে। আইন অনুসরণ না করে সরকারের মুখের দিকে চেয়ে থাকতে হবে কী আদেশ তাঁকে দিতে হবে। আর এতে আইনের শাসন বলতে কিছু থাকবে না। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের আর বিএনপি শাসনামলে রাখা হবে না। তেমনি বিএনপি আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকদের আওয়ামী লীগ শাসনামলে রাখা হবে না। ভিন্নমত : উচ্চ আদালতে বিচারকদের অপসারণ নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তবে এটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত বলে তিনি জানান। গতকাল কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘আমি যেটুকু শুনেছি তাতে মনে হচ্ছে, পার্লামেন্ট ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপন করতে যাচ্ছে। মূল সংবিধানের ওই অনুচ্ছেদটি সামরিক শাসনামলে ১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় ঘোষণা মারফত নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়। সামরিক বিধি দ্বারা সংবিধানের দাঁড়ি-কমাও পরিবর্তন করা যায় না। কাজেই সামরিক সরকারের ঘোষণাপত্র মারফত নতুন করে প্রতিস্থাপিত ৯৬ অনুচ্ছেদের সুপ্রিম কাউন্সিল গঠনের বিধান একেবারেই অবৈধ ছিল। যদিও তা ১৯৭৮ সালের পরে পঞ্চম সংশোধনী দ্বারা বৈধ করার প্রয়াস চালানো হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করা হয়। কাজেই সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ যদি বায়াত্তর সালের সংবিধানে ফিরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে বেআইনি কিছু হবে না। ভারতসহ বহু রাষ্ট্রে এ ধরনের ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। কাজেই এটা অন্যায় কিছু নয়।’ সাবেক প্রধান বিচারপতি বলেন, ব্রিটিশ হাউস অব কমনস ১৬৮৯ সালে, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ১৭৮৭ সালে এবং ভারতের লোকসভা ১৯৫০ সালে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে দিয়েছে। এ ধরনের ব্যবস্থা আরো দেশে চালু রয়েছে। এ দেশে হলে অসুবিধার কিছু নেই। তবে এই ক্ষমতা থাকা নির্ভর করে ক্ষমতা ব্যবহারের ওপর। ক্ষমতা ব্যবহারের ওপরই নির্ভর করবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তথা এ দেশের ভবিষ্যৎ। যদি সংসদকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং ক্ষমতা যদি প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয় বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহৃত হয়, এর দায়দায়িত্ব সংসদকেই নিতে হবে। বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আমাদের সংসদ এ ব্যাপারে যথেষ্ট দায়িত্বের পরিচয় দেবে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষার্থে সচেষ্ট থাকবে। এ সকল বক্তব্য আমার একান্ত ব্যক্তিগত।’ এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের উদ্যোগের বিষয়টি আমিও শুনেছি। সার্বভৌম সংসদ নিশ্চিত করার স্বার্থে এটা করা অনিবার্য। এটা করার জন্য আমি দীর্ঘদিন ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করে আসছি। সংসদীয় কমিটি থেকে সুপারিশ শুধু নয়, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ কমিটির পক্ষ থেকে আমরা একই সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু তখন সেটা করা হয়নি। দেরিতে হলেও এই উদ্যোগকে আমি অভিনন্দন জানাই।’ সরকারের এই উদ্যোগের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সংসদ আরো শক্তিশালী হবে বলে দাবি করেন প্রবীণ এই সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী-সংক্রান্ত মামলার রায়ে আদালত সামরিক শাসন ও শাসক যা করেছে, তার সবই অবৈধ ঘোষণা করেছেন। ফলে সামরিক সরকারের ৯৬ অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তও অবৈধ ছিল। তাই কোনো রকম কাটছাঁট না করে অনুচ্ছেদটি ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে সার্বভৌম সংসদের অঙ্গহানি হবে। তিনি আরো বলেন, এত দিন বিচারপতিদের কারো কাছে জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা ছিল না। এটা করা হলে বিচারপতিরাও সংসদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো সংসদ নৈতিক স্খলন বা অন্য কোনো কারণে বিচারপতিদের ইমপিচ করতে পারবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই বিধান রয়েছে। সুরঞ্জিত সেন বলেন, এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় সংসদে বিল আনবে। পরে বিলটি সংসদীয় কমিটিতে আসবে। সংসদীয় কমিটিতে এ বিষয়ে সবার মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বর্তমান সংবিধানের ৯৬(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “একটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থাকিবে, যাহা এই অনুচ্ছেদে ‘কাউন্সিল’ বলিয়া উল্লেখিত হইবে এবং বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকদের মধ্যে যে দুইজন কর্মে প্রবীণ তাহাদের নিয়া গঠিত হইবে।” বিচারকদের অবসর গ্রহণ ছাড়া তাঁদের পদ থেকে কোনোভাবেই অপসারিত করা যাবে না, যদি তাঁর অসামর্থ্য বা গুরুতর কোনো অসদাচরণ তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ না হয়। আর এ বিষয়টি রাষ্ট্রপতির নির্দেশে তদন্ত করবেন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। ৯৬(৬) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কাউন্সিল তদন্ত করার পর রাষ্ট্রপতির কাছে যদি এরূপ প্রতিবেদন দাখিল করেন যে কাউন্সিলের মতে কোনো বিচারক তাঁর পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে (শারীরিক ও মানসিক কারণে) অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বা গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হয়েছেন, তাহলে রাষ্ট্রপতি আদেশ দ্বারা ওই বিচারপতিকে অপসারণ করবেন। গত মহাজোট সরকারের আমলে হাইকোর্টে একটি মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করতে গিয়ে দেশের স্পিকারকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেওয়ার পর সরকারের একটি অংশ বিচারকদের অপসারণের ভার সংসদের হাতে ন্যস্ত করার দাবি তোলে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্পিকার থাকাকালে তাঁর দেওয়া এক রুলিংকে কেন্দ্র করে সংসদ ও বিচার বিভাগের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। তখন সংসদ সদস্যরা সম্মিলিতভাবে ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহালের দাবি তোলেন। নবম সংসদে সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে গঠিত বিশেষ কমিটিও একই সুপারিশ করে। কিন্তু সংসদ সেটা আমলে নেয়নি। চলতি দশম সংশোধনের শুরুতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে একই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। জানা গেছে, সংবিধান সংশোধনের খসড়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment