Tuesday, July 15, 2014

রং মেখে প্রস্তুত হচ্ছে লক্কড়ঝক্কড় লঞ্চ:কালের কন্ঠ

ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১৬টি জেলার বিভিন্ন রুটে নিয়মিত ১০ হাজারের বেশি যাত্রী লঞ্চে চলাচল করে থাকে। ঈদ উপলক্ষে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এই সুযোগে অসাধু কিছু লঞ্চ ব্যবসায়ী চলাচলের অযোগ্য লক্কড়ঝক্কড় লঞ্চগুলো সংস্কার করে রং মেখে চাকচিক্যময় করে তোলে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। কেরানীগঞ্জের ৩০টি ডকইয়ার্ডে প্রায় অর্ধশত লঞ্চ সংস্কারের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে শ্রমিকরা। রমজানের শেষ স
প্তাহকে টার্গেট করে এসব লঞ্চ পানিতে ভাসানো হবে। এ অবস্থায় ঈদে ফিটনেসবিহীন এসব লঞ্চে ঝুঁকি নিয়েই বাড়ির পথে যাত্রা করতে হবে অনেক যাত্রীকে। যদিও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডাব্লিউটিএ) নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক সাইফুল হক খান জোর দিয়ে বলেছেন, ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলতে দেওয়া হবে না। গত রবিবার কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ, বড়ইতলা, চরকালীগঞ্জ, খেজুরবাগ, চরমীরেরবাগ এলাকার ডকইয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা গেছে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ নদীতে ভাসানোর তোড়জোড়। সকাল ১১টায় কেরানীগঞ্জ তেলঘাটে দেখা যায়, ঢাকা থেকে মাদারীপুরগামী দ্বীপরাজ নামের একটি লঞ্চ সংস্কার করছে বেশ কয়েকজন শ্রমিক। তেলঘাটের পাশেই সাত্তার খান নামের একটি বিশাল ডকইয়ার্ড। সেখানে গোমা-পাতাবুলিয়া রুটের এমভি প্রিন্স সোহাগ ও ঢাকা-কালাইয়া রুটের এমভি নাজমা খান নামের দুটি লঞ্চ মেরামতের কাজ চলছে। কথা হলো সাত্তার খান ডকইয়ার্ডের মালিকের ছেলে সোহাগের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদ এলেই লঞ্চের কাজ বেড়ে যায়। তবে আমাদের ডকইয়ার্ডে কেবল সার্ভিসিংয়ের কাজ করা হয়ে থাকে। লঞ্চ ফিটনেসবিহীন কি না সেটা আমাদের দেখার দায়িত্ব নয়।’ সাত্তার খান ডকইয়ার্ডের পাশেই খান ডকইয়ার্ড। সেখানে এমভি সুজন-২ (এম-২২১৪) নামের একটি লঞ্চে পাঁচ থেকে ছয়জন শ্রমিক কাজ করছে। শফিক নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘প্রতিবছরই ঈদ সামনে রেখে কাজের চাপ বেড়ে যায়। এখন মজুরিও বেশি।’ এমভি সুজনের সুপারভাইজার আবুবকর সিদ্দিক জানান, এই লঞ্চের মালিকের নাম রহিম খান। তাঁর নামেই ডকইয়ার্ডটির নাম করা হয়েছে। সুজন-২ লঞ্চটি মেরামত শেষে পানিতে নামার অপেক্ষায় রয়েছে। আওলাদ ডকইয়ার্ডে ঢাক-ডামুড্যা রুটের প্রিন্স আওলাদ নামে একটি লঞ্চের সংস্কারের ব্যাপক কাজ চলছিল। সেখানে কয়েকজন শ্রমিক রঙের কাজে ব্যস্ত। জালাল উদ্দিন নামের একজন রংমিস্ত্রি বলেন, ‘ঈদ এলে আমাদের পুরান লঞ্চে কাজ বেশি হয়। আমরাও ঈদের সময় পুরান লঞ্চকে নতুন করে তুলতে অনেক আনন্দ পাই। মজুরিটাও একটু বেশি নেওয়া যায়।’ প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের সুপারভাইজার আব্দুর রশিদ বলেন, ‘লঞ্চটিতে দুই মাস ধরে কাজ চলছে। এটি ঠিকঠাক করে রং করতে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হবে। টিকিট ভাড়া ধরা হবে ১৯৫ টাকা। আশা করছি ঈদে পুরো টাকা উঠে যাবে।’ প্রিন্স আওলাদ লঞ্চের পাশেই ঢাকা-হুলারহাট ও ভাণ্ডারিয়া রুটের শুভরাজ-২ (এম-৬৭৯০) নামের আরেকটি লঞ্চে জোড়াতালির পর রঙের কাজ চলছে পুরোদমে। লঞ্চটির সুপারভাইজার জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘লঞ্চের মালিকের নাম হাজী কামাল উদ্দিন। লঞ্চের তলিতে সামান্য সমস্যা ছিল। এ জন্য সার্ভিসিংয়ের কাজ করিয়েছি। কাজ শেষে ২২ রোজায় এটি পানিতে নামানো হবে। ঈদে টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে ২৫০ টাকা।’ কেরানীগঞ্জ বেবী ডকইয়ার্ডে ঢাকা-চাঁদপুর-নীলকমল রুটের বোগদাদিয়া-৯ ও ঢাকা-শরীয়তপুর রুটের রেডসান-২ লঞ্চের কাজ চলছে। বোগদাদিয়া-৯ লঞ্চের সুপারভাইজার নামেশ্বর জানান, লঞ্চের পাশে ও পেছনে কিছু সমস্যা ছিল। সেগুলো মেরামত করা হয়েছে। এখন রং করার কাজ ২০ থেকে ২২ রোজার মধ্যে সম্পন্ন করে লঞ্চটি নদীতে নামানো যাবে। রেডসান-২ লঞ্চের সুপারভাইজার কাঞ্চন হোসেন বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমাদের লঞ্চটির কাজ করানো হয়নি। তাই ঈদ উপলক্ষে কাজ করানো হচ্ছে। ১৮ রোজায় লঞ্চটি ভাসানো হবে।’ ঢাকা-চরফ্যাশন রুটে চলাচল করে ফারহান-২ নামের লঞ্চ। লঞ্চটির মালিক বরিশাল-৩ আসনের সংসদ সদস্য টিপু। ডকইয়ার্ডটির নামকরণও সংসদ সদস্য টিপুর নামেই। লঞ্চটির সুপারভাইজার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এক মাস ধরে কাজটি চলছে। ২০ রোজার দিকে লঞ্চটি নদীতে ভাসানো হবে।’ পাশেই মেরামতের কাজ চলছে ঢাকা-বরিশাল রুটের সুরভি-৭ লঞ্চের। এটির সুপারভাইজার হোসাইনুল কবির বলেন, ‘লঞ্চটির মালিকের নাম গোলাম মাওলা। প্রায় দুই মাস ধরে লঞ্চটির বিভিন্ন কাজ চলছে। কাজ শেষে ১৮ রোজার মধ্যে এটি বুড়িগঙ্গায় ভাসানো সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লঞ্চ মালিক বলেন, ‘৩০ বছর আগের ফিটনেসবিহীন লঞ্চও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে টাকা দিলেই চলাচলের অনুমতি মিলে যায়। একটি চক্র গোপনে আঁতাত করে কাজটি করে থাকে। যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে হলে উচ্চপর্যায় থেকে ফিটনেসবিহীন লঞ্চগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’ বিআইডাব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা) সাইফুল হক খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে শেষ এক সপ্তাহে লঞ্চে চার লাখ ২৮ হাজার ৬০০ যাত্রী বহন করা হয়। এ বছর আমরা পাঁচ লাখ যাত্রী লঞ্চে যাতায়াতে সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। ঈদের আগের সপ্তাহ থেকে ১৩০টি লঞ্চ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচল করবে। তবে যাত্রীসেবায় ফিটনেসবিহীন কোনো লঞ্চ চলাচল করতে দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করা হবে।’ সাইফুল হক খান জানান, ঈদের সাত দিন আগে ও সাত দিন পরে সদরঘাটের চারটি গেটে সব সময় সিসি ক্যামেরা দিয়ে মনিটরিং করা হয়। বিআইডাব্লিউটিএ চেয়ারম্যান আগামীকাল বুধবার মতিঝিলের প্রধান কার্যালয়ে সভা করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাবেন।

No comments:

Post a Comment