এক দিন আগেও যে শহরের অলিগলি ছিল ব্যস্ত এক দিনের ব্যবধানে তা প্রায় ফাঁকা। মার্কেটগুলোতে তেমন ভিড় নেই, রাস্তায় যানজট নেই, ফুটপাথে গায়ে গায়ে মানুষ নেই। তবে ভিড় বেড়েছে রাজধানীর টার্মিনালগুলোয়। জট বেড়েছে মহাসড়ক, জংশন ও ফেরিঘাটে। আজ রোববার বিকেল থেকে এই জট আরো তীব্র আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। আজকের অফিস শেষে অনেকে নাড়ির টানে বাড়ির উদ্দেশে ছুটবেন। আগামীকাল পর্যন্ত মানুষের ঢল থাকবে সড়ক-মহাসড়ক, রেল ও
নৌপথে। গতকালও রাজধানী থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। এ দিকে ঈদ বকশিশের নামে পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজির নৈরাজ্য অব্যাহত রয়েছে। অগণিত যাত্রীর গলা কেটে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নৌযানে আদায় করা হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। ট্রেনের ছাদ ভাড়া দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাজধানী ফাঁকা : এক দিনের ব্যবধানেই রাজধানী অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেছে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গত বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়েছে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা। গতকালও রাজধানীর স্টেশনগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। বাস, ট্রেন ও লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের দৃশ্য চোখে পড়ে। আর এভাবে মানুষ ঢাকা ছাড়ায় গতকালের রাজধানী অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়। গতকাল রাজধানীর কোথাও যানজট লক্ষ করা যায়নি। এমনকি, ব্যস্ততম মার্কেটগুলোর সামনেও যানজট ছিল না। এক দিন আগেও যেখানে মানুষের জট ছিল, গতকাল সেসব স্থান ছিল ফাঁকা। মার্কেটগুলোতে ক্রেতাও কমে এসেছে। জট বেড়েছে মহাসড়ক ও ফেরিঘাটে : রাজধানী ফাঁকা হলেও জট বাড়ছে মহাসড়ক ও ফেরিঘাটে। গতকাল সকাল থেকে শত শত যানবাহন জড়ো হয় মাওয়া ও পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। দুপুর পর্যন্ত ফেরিঘাটগুলোতে জট ছিল। গতকাল সকালে ৭০০ থেকে ৮০০ গাড়ি জড়ো হয় মাওয়া ফেরিঘাটে। তবে বেলা ৩টা নাগাদ গাড়ির চাপ কমে যায়। ৩টার দিকে হেলিকপ্টার নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা মহড়া দেন ফেরিঘাটে। তখন ফেরিঘাটে তেমন যানজট ছিল না। ফেরিঘাটগুলোতে সিরিয়াল ভেঙে যানবাহন পারাপারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, ঘাট নিয়ন্ত্রকরা টাকার বিনিময়ে যানবাহন ফেরিতে তুলছে। লঞ্চ ও ট্রেনে উপচেপড়া ভিড় : লঞ্চ ও ট্রেনে গতকাল উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী ও ছাদে চড়া যাত্রীদের সংখ্যাই বেশি। আগেভাগে যারা টিকিট কেটেছেন তাদের অনেকেই সিটে বসতে পারেননি বলেও অভিযোগ মিলেছে। সিরাজগঞ্জগামী যাত্রী শফিকুর রহমান বলেছেন, তার টিকিট থাকলেও তিনি সিট পাননি। ট্রেনে উঠে দেখেন আগেই তার সিট দখল হয়ে গেছে। যিনি সিট দখল করেছেন তাকে ওই সিট থেকে উঠিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলেও তারাও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে ওই যাত্রী অভিযোগ করেন। লঞ্চেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। গভীর রাতেই অনেকে গিয়ে লঞ্চে সিট দখল করেন। সারা দিন তারা অপেক্ষা করেন লঞ্চ ছাড়ার জন্য। এ দিকে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন তারা আগে থেকে কেবিনের টিকিট সংগ্রহ করলেও তাদের না জানিয়েই লঞ্চ ছেড়ে যায়। লঞ্চের ছাদে যাত্রী বহন নিষিদ্ধ থাকলেও প্রায় সব লঞ্চেরই ছাদেও উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় : প্রায় প্রতিটি পরিবহনেই অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। মাওয়া ও পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ ও সিবোটগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাত্রীরা জানান, কোনো কোনো পরিবহন দুই থেকে তিন গুণ ভাড়া আদায় করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সামনেই এই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হলেও সবাই চুপচাপ। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযোগ করেও কোনো ফল মিলছে না বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। বিআরটিসির তুঘলকি কাণ্ড : বিআরটিসি বাসের বেশির ভাগ রুটে আগে থেকে কোনো টিকিট বিক্রি করা হয়নি। এখন মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে। হাফিজুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, রংপুর যেতে সাড়ে ৪০০ টাকা ভাড়া। কল্যাণপুর কাউন্টার থেকে আগে কোনো টিকিট তারা বিক্রি করেনি। এখন তারা প্রতি টিকিট বিক্রি করছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এ দিকে কাউন্টার থেকে জানানো হয় এই গাড়িগুলো তারা লিজে চালাচ্ছে। এখানে সরকারের বেঁধে দেয়া ভাড়া কাজে আসবে না। যারা লিজে চালাচ্ছেন তারা যে ভাড়া নির্ধারণ করবেন সেই ভাড়ায় তাদের চালাতে হবে। সাত ঘণ্টা ফেরি আটকা : পাটুরিয়া রুটের ফেরি এনায়েতপুরী গতকাল বিকেল ৪টায় আটকে পড়ে ডুবোচরে। ওই ফেরিতে চারটি যাত্রীবাহী বাস এবং ১০টি ট্রাক রয়েছে। সন্ধ্যার দিকে বিআইডাব্লিটি-এর একটি জাহাজ সেটিকে উদ্ধারে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। রাতে নাজমুল মোরশেদ নামের এক বাসযাত্রী বলেন, তারা অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছেন। কিন্তু ফেরিটি উদ্ধারে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
No comments:
Post a Comment