ম্যাচ যত বাড়ছিল, জার্মানদের জন্য ততই ভয় পাচ্ছিলাম। গঞ্জালো হিগুয়েইনের সুযোগসন্ধানী কোনো গোল বা লিওনেল মেসির দুর্দান্ত কোনো ফ্রি-কিক শেষ করে দিতে পারত সবকিছু। ব্রাজিলের সঙ্গে ৭-১ গোলে জয়ের পর জার্মানির কপালে জুটত বিষাদ। তবে ঘটনা হলো, সেই ঐতিহাসিক জয়ের পর জার্মানির চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছিল শুধুই সময়ের ব্যাপার। আর্জেন্টিনার সঙ্গে লড়াইটা হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি, আমি ভাবছিলাম ম্যাচ শেষ হবে টাইব্রেকারে। এও ভা
বছিলাম, আসলেই লাতিন আমেরিকা থেকে কোনো ইউরোপিয়ান দেশ কাপ নিয়ে ফিরতে পারবে না। ম্যাচ শেষ হওয়ার সাত মিনিট আগে মারিও গোটশের গোলটা তাই ছিল স্বস্তিদায়ক। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম আমি। জার্মানি যদিও ছিল শিরোপার যোগ্য দাবিদার, পর্তুগালকে প্রথম ম্যাচে ৪-০ গোলে হারিয়েই সেটা ওরা বুঝিয়ে দিয়েছিল ফুটবলবিশ্বকে। এর পরের জয়গুলো ছিল ন্যূনতম ব্যবধানে, এক ঘানার সঙ্গে কেবল কিছু সময় খেই হারিয়ে ফেলেছিল দল। কিন্তু কখনো মনে হয়নি খারাপ কিছু ঘটবে। এরপর তো ব্রাজিলের সঙ্গে সেই ৭-১ গোলের দুর্দান্ত জয়। ওই ম্যাচেই আসল জার্মানি বের হয়ে এসেছিল সব বাধার জাল ছিঁড়ে। যে দেশে হাজার হাজার ফুটবলপ্রতিভা, তাদের তাদেরই মাটিতে এভাবে হারানো ছিল অবিশ্বাস্য। তবে হেরে গেলেও আর্জেন্টিনাকে যোগ্য সম্মান আপনার দিতেই হবে। ওদের অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেমিফাইনালে খেলতে হয়েছে অতিরিক্ত সময়, এরপর টাইব্রেকার। ফাইনালের আগে বিশ্রামের জন্য ওরা সময় পেয়েছে মাত্র এক দিন। তবু ওরা জার্মানির সঙ্গে অসাধারণ খেলেছে। জার্মানির বিজয় কারও একার হাত ধরে আসেনি। সিজার লুইস মেনোত্তি, জোহান ক্রুইফ বা ভিসেন্তে দেল বস্কের মতো বোদ্ধারা যতই বলুন মূল কৃতিত্ব ম্যানুয়েল নয়্যারের বা টমাস মুলারের, যে পাঁচ গোল করে ছিল টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা, অথবা পাসিং মেশিন টনি ক্রুসের, কিন্তু আমি বলব, এই সাফল্য দুর্দান্ত এক দলীয় সমন্বয়েরই ফসল। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ক্রুস বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে চলে যাচ্ছে। কিছু বলার নেই আসলে, রিয়ালের মতো দলকে না বলা কঠিন। জার্মানির সাফল্য একটা দলের ক্রম-উন্নতির বিশাল এক উদাহরণ। ২০০৬ আর ২০১০ বিশ্বকাপে তৃতীয় হওয়ার পর এই শিরোপা। আরও ভালো করার ক্লান্তিহীন চেষ্টাই জার্মানির সাফল্য-রহস্য। ১৯৮৬তে আমার অধীনে দল ফাইনালে হেরে যায় ৩-২ গোলে। ম্যাচটা কালকের মতোই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। চার বছর পর আমরা ম্যারাডোনার দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে জিতে নিই শিরোপা। তখন আমি কিছু পরিকল্পনা শুরু করি যেমন ভালো হোটেলে থাকা, খেলোয়াড়দের অবসর কাটানোর সুযোগ দেওয়া, দলের চিকিৎসা সুবিধা উন্নত করা, ইত্যাদি। সেই ধারায় এখন সুযোগ-সুবিধা আরও উন্নত হয়েছে। গোলদাতা গোটশেকে নামানো ছিল বিশ্বসেরা কোচের অনন্য চিন্তাধারার নিদর্শন। অনেকেই খুব অবাক হয়েছিলেন ওকে মাঠে নামাতে দেখে। দেখার বিষয় লো দলের দায়িত্বে থাকেন কিনা। ও কিছুদিন আগে চুক্তি নবায়ন করেছিল, কিন্তু সেটা কেবল ২০১৬ পর্যন্ত। ও যদি চায় থেকে যেতে আমার মনে হয় জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের দ্বিতীয়বার ভেবে দেখার অবকাশ নেই। আমরা একটা অসাধারণ টুর্নামেন্ট দেখলাম। আয়োজন, উৎসাহ-উদ্দীপনা সব মিলিয়ে বিশ্বকে বুঁদ করে রেখেছিল এই বিশ্বকাপ। স্বাগতিক ব্রাজিল ছিল ফেবারিট, কিন্তু ওরা জিততে পারল না প্রত্যাশার চাপে ভেঙে পড়ে। নেইমারের ইনজুরিও একটা বড় কারণ। কিন্তু ব্রাজিল ফুটবলের জন্য এটাই তো শেষ নয়। আমি নিশ্চিত, চার বছর পর রাশিয়ায় আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন এক ব্রাজিলকে দেখব।
No comments:
Post a Comment