পূর্ণিমার প্রভাবে জোয়ার, অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের অভাব। তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও খাল-বিলের মাছ। ত্রাণের অপেক্ষায় রয়েছেন পানিবন্দি মানুষ। যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর- দৌলতখান ও মনপুরা : ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ও ভবানীপুর ইউনিয়নের বেড়িবাঁধ ভেঙে
সাতটি গ্রাম মেঘনার জোয়ারে তলিয়ে গেছে। জনজীবনে সৃষ্টি হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। সৈয়দপুর ইউপির ৮নং ওয়ার্ডের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার বিকালে গুপ্তগঞ্জ সংলগ্ন পুরাতন বেড়িবাঁধও জোয়ারের চাপে ভেঙে গেছে। এতে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্লাবনকবলিত এলাকার গুটিকয় মানুষের হাতে মঙ্গলবার রাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিড়া-গুড় পৌঁছে দেয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী শুধু সৈয়দপুর ইউনিয়নেই আমনের বীজতলা, স্থানীয় এবং উফশী আউশ ও সবজিসহ ৩০০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। পাঁচদিন ধরে মনপুরা উপজেলার মানুষ জোয়ারের পানির সঙ্গে বসবাস করছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এদিকে মেঘনার পানি বিপদসীমার ৪.৩ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গল ও বুধবার জোয়ারের চাপে নতুন করে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের তালতলা স্লুইস সংলগ্ন প্রায় আধা কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে চারটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত জোয়ারের পানিতে ডুবে তিন শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ডিমলা (নীলফামারী) : উজানের ঢলে তিস্তা নদীর অববাহিকায় দুই দিনের মধ্যে আবারও বন্যার কবলে পড়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সকালে তা বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খুলে দেয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি স্লুইস গেট। তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা নদী সংলগ্ন বাইশপুকুর চর গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। মহেশখালী : কক্সবাজারের উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালীর সমুদ্র তীরের ঘটিভাঙ্গাসহ বেশ কিছু এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে অসংখ্য ঘরবাড়ির হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। কলাপাড়া ও দশমিনা : কলাপাড়ার লালুয়ার চারিপাড়া ও মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর বেড়িবাঁধ ভেঙে দুটি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রতিদিন দুই দফা জোয়ারের পানিতে ওই ১৫টি গ্রামের অধিকাংশ মানুষ জোয়ারের পানিতে ডুবছে আর ভাটায় শুকাচ্ছে। সাগরের অস্বাভাবিক জোয়ারে কুয়াকাটা সৈকত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। অপরদিকে বেড়িবাঁধ ভেঙে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্ধার তৎপরতা নেই। এখনও পৌঁছেনি ত্রাণ। পিরোজপুর ও জিয়ানগর : পিরোজপুর জেলার অভ্যন্তরীণ পাঁচটি নদ-নদীতে জোয়ারের স্রোতের তীব্র থাবা এখনও অব্যাহত। ফলে বেড়িবাঁধগুলো আরও হুমকির মুখে রয়েছে। কচা নদীর প্রবল স্রোতের তোড়ে ইতিমধ্যে বাঁধের অনেক স্থানে ফাটল ও ভেসে গেছে। অধিকাংশ স্থানে জলাবদ্ধতার ফলে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না মানুষ। গো-খাদ্যের তীব্র অভাবে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। উপকূলীয় জিয়ানগর উপজেলায় নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে। হিজলা : বরিশালের হিজলা উপজেলায় ছয়টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে গেছে। মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের স্রোতে বেড়িবাঁধটি পুরাতন হিজলা বন্দর দিয়ে ভেঙে ৫০টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গত পাঁচদিনের চেয়ে গতকাল ৩-৪ গুণ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানের ফসলি জমি ও বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। কৃষকের পানের বরজের পান ঝরে পড়তে শুরু করছে। কাঁঠালিয়া (ঝালকাঠি) : বিষখালী নদীর পানি বৃদ্ধিতে কাঁঠালিয়ার ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। চার দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছে অসংখ্য মানুষ। নদ-নদীগুলোতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার আমুয়া ফেরিঘাটের গাংওয়ে তলিয়ে গেছে। কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) : নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ক্লোজার বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের শত শত ঘরবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবনযাপন করছে। টঙ্গিবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ) : উজান থেকে নেমে আসা পানি এবং ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে টঙ্গিবাড়ী নিুাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার হাসাইল পদ্মা নদীতে পানির স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় কামারখাড়া ইউনিয়নের বড়াইল, বাঘবাড়ি অঞ্চলে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। হাসাইল পদ্মা নদী বাঁধের ধসে যাওয়া গারুরগাঁও নামক স্থানের বালুর বস্তা পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। এছাড়া উপজেলার নিুাঞ্চলের অনেক নিচু রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলাবাসীর চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। বামনা (বরগুনা) : উপজেলার জাফ্রাখালী আবাসনের বাসিন্দা সিডরদুর্গতদের জন্য নির্মিত আবাসনের বাড়ি তলিয়ে গেছে। খালের পাড় লাগোয়া ওই আবাসনের ঘরে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন জলমগ্ন হয়। আর আবাসনের এই ব্যারাক হাউসগুলো খাল ও নদী ভাঙনে বিলীনের আশংকা দেখা দিয়েছে।
No comments:
Post a Comment