নয় দিন ধরে চলছে বিমান হামলা, সঙ্গে তিন দিন ধরে সীমিত পরিসরে স্থল হামলাও। নবম দিনে এসে বুধবার ফিলিস্তিনে নিহতের সংখ্যা গিয়ে ঠেকেছে ২০৭-এ। আহতের ক্ষেত্রে তা প্রায় ১৮শ’। এ সময়ে ধুলোয় মিশে গেছে ১১শ’র বেশি ঘর-বাড়ি ও স্থাপনা। সব হারিয়ে ১৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ছেড়েছেন গাজা। ধ্বংসস্তূপে একাকার রক্ত, কান্না আর দীর্ঘশ্বাস। এর মধ্যেই এ রক্তপাত ও ধ্বংসলীলা আরও বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে ইসরাইল। বুধবার দেশটি হুশি
য়ারি দিয়ে জানিয়েছে, বিমান হামলা আরও তীব্র করা হবে। সেই সঙ্গে ব্যাপক মাত্রায় শুরু হবে স্থল অভিযানও। আর এ থেকে ‘বাঁচতে’ পূর্ব ও উত্তর গাজা থেকে নিরীহ অধিবাসীদের অবিলম্বে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা। সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে গাজায় লিফলেট ও রেকর্ড করা টেলিফোন-বার্তা পাঠানো হয়। গাজার উপকণ্ঠের দুই জেলা সেইজিয়া ও জয়তুনের অধিবাসীরা এ লিফলেট ও ফোন-বার্তা পান। এতে বলা হয়, ‘আমরা যা বলছি শুনুন, তা না হলে আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্যদের জীবন বিপন্ন হবে। আপনারা নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান। হামাস জঙ্গি ও তাদের নেতাদের ধ্বংস করতে শিগগিরই জোরালো অভিযান চালানো হবে।’ ওই বার্তায় বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টার মধ্যেই বেসামরিক অধিবাসীদের সরে যেতে বলা হয়। এ দুই জেলায় প্রায় এক লাখ অধিবাসী রয়েছে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা দফতরের কর্মকর্তাদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে অনুরূপ হুমকি। তারা বলছেন, গাজা সীমান্তে হাজার হাজার সৈন্য সমাবেশের মধ্য দিয়ে তেল আবিব প্রস্তুতি নিচ্ছে স্থল অভিযানের। উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা আমোস গিলাদ বলেন, ‘হামাসের রকেট হামলা বন্ধ না হলে আমাদের গাজায় প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।’ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থাও ইসরাইলি সৈন্যদের অস্ত্র মজুদ, পরিষ্কার ও প্রস্তুতির ছবি প্রকাশ করে এদিন। আর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “সামরিক অভিযান চালানো ছাড়া তার হাতে কোনো ‘বিকল্প নেই’। যখন কোন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মানাই হচ্ছে না, এর একমাত্র জবাব হতে পারে গুলি।” ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুধু মঙ্গলবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ৯৬ লক্ষ্যবস্তুতে সফল হামলা চালিয়েছে বিমান বাহিনী ও নেভি। বিপরীতে ইসরাইলের আকাশে ১৫০টি রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। নয় দিনের এ অভিযানে এ সংখ্যা ১ হাজার ২৬০। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ বুধবার জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় এদিন পর্যন্ত ২০৭ জন মারা গেছেন। যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। বুধবার জ্যেষ্ঠ হামাস নেতা মাহমুদ আল আজহারের বাড়িতেও বোমাবর্ষণ করা হয়। তবে হামলার সময় তিনি বাড়িতে ছিলেন না। বুধবার গাজায় সকালেই ইসরাইলি বিমান হামলায় তিন বেসামরিক লোক নিহত হন। ইসরাইলি বোমা হামলার নবম দিনে এসে বুধবার গণমাধ্যমগুলোয় খবর মিলেছে একজন ইসরাইলির মৃত্যুর। এ সংঘাতে ইসরাইলি নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনা এটাই প্রথম। তবে ইসরাইলের দেশটির সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, মঙ্গলবার রাতভর হামাসের রকেট হামলায় তাদের ১০ জন মারা গেছেন। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলা ও সহিংসতার অবসানে সোমবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল মিসর। এ প্রস্তাবে সম্মত হয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে ‘যুদ্ধবিরতি’র ঘোষণাও দিয়েছিল তেল আবিব। কিন্তু ৬ ঘণ্টা না যেতেই ফের বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। অন্যদিকে এটিকে আত্মসমর্থনের সমতুল্য আখ্যা দিয়ে ‘যুদ্ধবিরতি’র প্রস্তাব শুরু থেকেই প্রত্যাখ্যান করে হামাস। কায়রোতে হামাসের মুখপাত্র মুসা আবু মারজুক বলেন, মিসরের দেয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে গাজার অর্থনৈতিক অবরোধ নিয়ে কিছু বলা হয়নি, যা বহু ফিলিস্তিনের দুর্দশার বড় কারণ। তাই এ প্রস্তাব হামাস প্রত্যাখান করেছে। উল্টো হামাসের সমালোচনা যুক্তরাষ্ট্রের : বরাবরের মতোই হামাসের রকেট হামলার সমালোচনা করেছে ইসরাইলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। ভিয়েনায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এ বিষয়ে বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দেয়ার পরও হামাস যেভাবে একের পর এক রকেট হামলা চালাচ্ছে, তার নিন্দা জানানোর মতো কঠোর ভাষা আমার জানা নেই।’ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরাইলের সর্বশেষ হামলার সূত্রপাত ইসরাইলি তিন কিশোরকে সম্প্রতি অপহরণ ও হত্যা নিয়ে। হামাসই ওই ঘটনা ঘটায় বলে মনে করে ইসরাইল। তবে হামাস তা অস্বীকার করে আসছে। পরে ফিলিস্তিনি এক কিশোরকে একইভাবে হত্যা ও অপহরণের পর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। এরপর গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে এমন দাবি তুলে ‘অপারেশন প্রটেক্টিভ এজ’ শুরু করে ইসরাইল। ইসরাইলের পক্ষ থেকে হামাসের রকেট হামলা বন্ধের উদ্দেশ্যে এই অভিযানের কথা বলা হলেও জাতিসংঘ বলছে ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহতদের বেশির ভাগই সাধারণ নাগরিক।
No comments:
Post a Comment