প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকার সম্পর্কে তাঁর দলের ভূমিকা কী হবে, এত দিন তা-ও স্পষ্ট করেননি। কিন্তু গতকাল বুধবার বাজেট বিতর্কে বিষয়টি স্পষ্ট হলো। বাজেট বিতর্কে সরকার সম্পর্কে তৃণমূল কংগ্রেসের মনোভাব স্পষ্ট করেন লোকসভায় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভালো কাজ করুন, আমরা সমর্থন করব।’ প্র
ধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর সরকারের প্রতি তৃণমূলের এই মনোভাব কয়েক দিন ধরে রাজধানীর অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়। নির্বাচনী প্রচারের সময় মমতা-মোদি সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছিল। এর অন্যতম কারণ, ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ প্রসঙ্গ। সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে শিষ্টাচার মেনে মোদিকে মমতা অভিনন্দন পর্যন্ত জানাননি। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-তৃণমূল সংঘাত এই মুহূর্তে চরমে। এরই মধ্যে হঠাৎ সরকারের ভালো কাজের সমর্থনের কথা প্রকাশ্য ঘোষণার কারণ কী, সে নিয়ে রাজধানীতে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেখানেই উঠে আসছে সারদাকাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তের ভূমিকা প্রসঙ্গ। সমর্থনের প্রথম চমক টেলিকম রেগুলেটরি আইন সংশোধনী (ট্রাই) বিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখ্য সচিব হিসেবে সাবেক আমলা নৃপেন্দ্র মিশ্রকে অধ্যাদেশ জারি করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সংশ্লিষ্ট আইনে ট্রাইয়ের চেয়ারম্যানের অবসরের পর কোনো সরকারি চাকরিতে নিয়োগ নিষিদ্ধ ছিল। বিজেপি সেই আইনকে সমর্থনও জানিয়েছিল। কিন্তু মোদির প্রিয় আমলাকে নিয়োগ দিতে সেই আইন পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায়। কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলও সেই সংশোধনী বিল উত্থাপনের বিরোধিতা করে। তৃণমূলের সৌগত রায় তীব্র বিরোধিতা করার তিন দিন পর ঢোঁক গিলে গত সোমবার দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিলটিকে সমর্থন জানান। সোমবারের ওই চমকের পর দ্বিতীয় চমক গতকাল বুধবার বাজেট বিতর্ক। সুদীপের ভাষণ আগাগোড়াই ছিল সংযত। বাজেটের বেশ কিছু প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা আগেই চালু করেছেন। যেমন কন্যাসন্তানের সামাজিক নিরাপত্তা ও তাদের বিকাশের জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্প। অরুণ জেটলিকে উদ্দেশ করে সুদীপ বলেন, ‘রাজ্যকে ধারের ভার থেকে বাঁচাতে আগের সরকারকে বহুবার বলা হয়েছিল। আপনাদের কাছেও সেই অনুরোধ থাকল।’ সুদীপ প্রস্তাব করেন, গঙ্গাকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তাতে কলকাতাকে যেন সম্পৃক্ত করা হয়। সর্দার বল্লবভাই প্যাটেলের স্ট্যাচুর জন্য বাজেটে ২০০ কোটি রুপি বরাদ্দের বিরোধিতা না করে তিনি বরং কলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দের জন্য একটা ওই রকম প্রকল্প করার অনুরোধ জানান। রেশন মারফত নিত্যপ্রয়োজনীয় একাধিক জিনিস সরবরাহের তালিকাও তিনি পেশ করেন। সেই সঙ্গে তিনি অনুরোধ করেন, বিদেশি লগ্নিকারীদের হাতে দেশটা ছেড়ে দেবেন না। সরকারকে তৃণমূলের হঠাৎ এই সমর্থনের দরাজ হাত বাড়ানোর কারণ কী, তা নিয়েই রাজধানীতে চলছে জোর জল্পনা। কংগ্রেস, সিপিএম তো বটেই, এমনকি বিজেপির কোনো কোনো নেতাও তৃণমূলের এই হঠাৎ পরিবর্তনের পেছনে সারদাকাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তও একটা কারণ বলে মনে করছেন। তৃণমূলের রাজ্যস্তরের একাধিক নেতা এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে।
No comments:
Post a Comment