তাঁরা ছয়জন, কেউই পুলিশের সদস্য নন। তাঁদের হাতে থাকে হাতকড়া ও চাবি। আদালতে হাজিরা দিতে আসা জেএমবির জঙ্গি, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও আসামিদের হাতকড়া খোলা-বাঁধা ও আনা-নেওয়ার কাজ করেন তাঁরা। সরকারের কাছ থেকে তাঁরা কোনো বেতন-ভাতা পান না। তবে আসামিদের কাছ থেকে বকশিশ পান। চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মহানগর ও জেলা হাজতখানায় কাজ করছেন তাঁরা। আসামিদের আদালতে আনা-নেওয়ার কাজও করেন তাঁরা। পুলিশের কাজ তাঁরা কেন করছেন
? এর জবাব নেই পুলিশের কাছেও। অভিযোগ আছে, আসামিরা এঁদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। এঁদের সহায়তায় আসামি পালানোর আশঙ্কাও করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে ডাকাতি মামলার এক আসামি আদালত ভবন থেকে পালিয়ে যান, তাঁর খোঁজ পায়নি পুলিশ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন জেএমবির সামরিক কমান্ডার জাবেদ ইকবালসহ ১২ আসামি। তাঁদের কয়েকজনের হাতকড়া খোলার চেষ্টাকালে বিষয়টি মুখ্য মহানগর হাকিম মশিউর রহমান চৌধুরীর নজরে আসে। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে আজগর নামের ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। তাঁর কাছ থেকে হাতকড়া খোলার একটি চাবিও উদ্ধার করা হয়। বিচারক জানতে চান, আসামির হাতকড়া খোলার চাবি পুলিশের কাছে না থেকে সাধারণ ব্যক্তির কাছে কেন? বিচারক এ ঘটনা হাতেনাতে ধরার পরদিন গতকালও এ দৃশ্য দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের হাতকড়া খোলা-বাঁধার কাজ পুলিশের। সাধারণ লোককে দিয়ে এ কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আসামিদের কাছ থেকে টাকা নিয়েই তাঁরা চলেন। এতে আসামির পালানোর সুযোগ থাকে। কিছুদিন পর পর আদালত ভবন থেকে আসামি পালানোর ঘটনাও ঘটেছে। হাতকড়া খোলা-বাঁধা পুলিশের কাজ বলে স্বীকার করেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আসামিদের হাতকড়া খোলা-বাঁধার কাজ করছেন ওঁরা। এখন থেকে এঁদের বাদ দেওয়া হবে। সরেজমিনে জানা গেছে, চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মহানগর হাজতখানায় কাজ করছেন আজগর, শাহীন ও শাহাবুদ্দীন। আর জেলা হাজতখানায় রয়েছেন আবুল, আলম ও জসীম। কারাগার ও থানা থেকে আসা আসামিদের হাতকড়া খুলে হাজতখানায় ঢোকান তাঁরা। এ সময় আসামিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাঁরা হাতকড়া খোলেন। কারণ এক হাতকড়া দুই আসামিকে পরানো হয়। আসামি রফিকুল ইসলাম ও রবিউল হাসান গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুজনকে এক হাতকড়া পরানোয় বাধ্য হয়ে আজগরকে ১০০ টাকা দিই। পরে সে খুলে দেয়। টাকা না দিলে খুলতে দেরি করে।’ চট্টগ্রাম কারাগার থেকে আদালতে হাজিরা দিতে আসেন জেএমবির জঙ্গি, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীসহ দাগি আসামিরা। বোমা হামলা মামলায় হাজিরা দিতে আসেন জেএমবির সামরিক কমান্ডার জাবেদ ইকবালসহ ২৫ জঙ্গি। ৩৬ মামলার আসামি দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার নাছির উদ্দিন, বিধান বড়ুয়া, তছলিম উদ্দিন মন্টু, দীপক দত্ত ভোলা, শামীম, সরোয়ার, ম্যাক্সনসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও কারাগার থেকে আসেন হাজিরা দিতে। কারাগার ও থানা থেকে দৈনিক গড়ে ৩০০ আসামিকে হাজির করা হয় আদালতে। এসব আসামির হাতকড়া খুলে দেওয়া ও আনা-নেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু তা অন্যদের দিয়ে করায়। এদিকে নগরের হালিশহর থানার ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার আসামি মোস্তফা হোসেন ওরফে রানা গত সোমবার আদালত ভবন থেকে পালিয়ে যান। তিন দিন পেরিয়ে গেলেও তাঁর হদিস পায়নি পুলিশ। এর আগে আবছারসহ কয়েজন আসামি পালিয়ে যান আদালতের হাজতখানা থেকে।
No comments:
Post a Comment