হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সবার চোখের সামনে বুড়িগঙ্গাতীরের প্রায় সাত বিঘা জমি ভরাট করে বালুর রমরমা ব্যবসা চলছে। মিলব্যারাক ঘাটের ইজারাদার সাঁকো এন্টারপ্রাইজ এবং এর নিয়োজিত লোক ঘাট ব্যবসার পাশাপাশি অনুমোদন ছাড়াই এ বালু ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলা প্রশাসন ও ভূমি জরিপ অধিদপ্তরের নির্ধারিত সীমানাখুঁটির ভেতরে ভরাটকাজ চালানো হয়েছে। হাইকোর্টের রায় অনুসারে নদ
ীর জায়গা ভরাট এবং সেখানে এ ধরনের বালু ব্যবসা সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু নৌবন্দর ও সংলগ্ন এলাকা দেখভালের দায়িত্বে থাকা অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। চলতি মাসের শুরুতে বুড়িগঙ্গাতীরে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান হলেও এখানে কিছু করা হয়নি। নদীতীর ভরাট করে বালু ব্যবসার স্থানটি পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের দক্ষিণে বিআইডব্লিউটিএ মার্কেটের পশ্চিম পাশে। কিছু অংশ আগেই ভরাট করা হয়েছিল। এখন আরও জায়গায় বালু ফেলা চলছে। এ স্থানটিতে ঢাকার দ্বিতীয় লঞ্চ টার্মিনাল করার কথা ছিল বলে বিআইডব্লিউটিএর বন্দর বিভাগ জানিয়েছে। পণ্যবাহী নৌযান নোঙরের কোনো টার্মিনাল না থাকায় এ জায়গার কথা চিন্তা করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা এগোচ্ছে না। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রের হিসাবে, নদীতীরের প্রায় পাঁচ বিঘা অংশ আগেই ভরাট করে বালুর ব্যবসা চলছিল। গত শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে থাকা বালুবাহী বিশাল ট্রলার থেকে মোটা পাইপ দিয়ে ড্রেজিং মেশিনের সাহায্যে আরও নতুন জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে বালুর উঁচু স্তূপ হয়েছে। বালু যাতে নদীতে গড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য সীমানায় বস্তা দেওয়া হয়েছে। সংলগ্ন নদীতীরে আরও কিছু পাইপ জড়ো করা হয়েছে। দৃশ্যত এসব পাইপ আনা হয়েছে আরও বালু বহনের জন্য। স্তূপের নিচে থাকা একটি পে-লোডারের সাহায্যে বালু গোছানো হচ্ছে। ভরাট জায়গার অদূরে বেশ কয়েকটি ট্রাক দেখা যায়। একাধিক ট্রাকচালক এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিদিন অন্তত ১০০ ট্রাক বালু বিক্রি হয়। ইজারাদারের ঘনিষ্ঠ আবুল বাশার বলেন, যেখানেই হোক, বালু বিক্রি এবং পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। প্রতি ট্রাক বালুর দাম সাড়ে ৬০০ টাকা। আইন অমান্য করে এভাবে নদীতীর ভরাট ও বালুর ব্যবসার বিরুদ্ধে বিআইডব্লিউটিএ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বিআইডব্লিউটিএর (বন্দর) যুগ্ম পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাঁকো এন্টারপ্রাইজকে ঘাটে নৌযানের মালামাল ওঠানো-নামানোর জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এভাবে জায়গা ভরাট বা বালু ব্যবসার কোনো অনুমতি তাদের দেওয়া হয়নি। দুই দফায় নোটিশ দেওয়ার পর সাময়িকভাবে বালু ব্যবসা বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু দুদিন পরেই আবার শুরু হয় তা। এলাকার প্রভাবশালী মো. ইব্রাহীম আহমেদ ওরফে রিপন সাঁকো এন্টারপ্রাইজের প্রধান ব্যক্তি। তিনি শ্মশানঘাট বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক। বিআইডব্লিউটিএর একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁদের মধ্যেই অনেকে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত লোকদের ‘ঘাঁটাতে চান না’। এ জন্য নদীর ভরাট হওয়া স্থান উদ্ধার ও অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধের বিষয়ে তাঁরা জোরালো উদ্যোগ নিতে পারছেন না। ঘটনাস্থলে বা টেলিফোনে ইজারাদার মো. ইব্রাহীম আহমেদকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ছোট ভাই ও সাঁকো এন্টারপ্রাইজের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ইকবাল আহমেদ জানান, বড় ভাই দেশের বাইরে আছেন। নদীর জায়গা ভরাট ও বিনা অনুমতিতে বালুর ব্যবসা করছেন কেন? এ প্রশ্নে ইকবাল আহমেদ প্রথমে বলেন, সেনাকল্যাণ সংস্থার স্থানীয় কার্যালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে তাঁরা বালুর ব্যবসা করছেন। এর সপক্ষে কাগজপত্র আছে কি না, জানতে চাইলে ইকবাল কথা ঘুরিয়ে বলেন, এ জায়গার কথা তিনি বলেননি। তাহলে কোন জায়গার কথা বলছেন—জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ভুল করে সেনাকল্যাণ সংস্থার কথা বলেছেন। আসলে তীরে বালু নামিয়ে এক দিনের মধ্যেই বিক্রি করে ফেলা হয়। জায়গাটি তাঁরা দখল করেননি। আইনও ভাঙেননি। সাঁকো এন্টারপ্রাইজকে বিআইডব্লিউটিএর দেওয়া দুই দফা নোটিশে বলা হয়, এভাবে বালু ব্যবসা বন্দর আইন, ২০০৮; বন্দর বিধি, ১৯৬৬; পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫; পরিবেশ সংরক্ষণ বিধি, ১৯৯৭ (সংশোধন ২০০৫) এবং অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬-এর লঙ্ঘন। এ কারণে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ এবং নৌ চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। নোটিশে প্রতিষ্ঠানটিকে নিজ খরচে সীমানাখুঁটির ভেতরের বালু সরিয়ে নিতে বলা হয়।
No comments:
Post a Comment