Wednesday, August 6, 2014

নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে আবারো সক্রিয় দস্যুরা:নয়াদিগন্ত

নোয়াখালীর নদীতে মাছ ধরতে গেলে জেলেদের ওপর দস্যুদের হামলা অপহরণ মাছ লুট ট্রলার ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এতে জেলেরা দস্যুদের ভয়ে মেঘনা নদী ও সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারছেন না। এতে প্রায় ছয় হাজার জেলে পরিবার অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পাশাপাশি মাছ ধরা না পড়ায় বাজারে ইলিশ সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। জেলার উপকূলীয় অঞ্চলের ত্রাস বাসার মাঝি, নিজাম ডাকাত, নাছির কেরানী, কালাবাদশা র‌্যাবের
সাথে বন্দুকযুদ্ধে ও অন্তর্কোন্দলে নিহত হওয়ার পর উপকূলীয় এলাকা কিছু দিন শান্ত থাকার পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা ফের সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছে। কার্যত সন্ত্রাসীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তাদের সঙ্ঘবদ্ধ করে নেতৃত্ব দিচ্ছে নেপথ্যে থাকা হাতিয়ার প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ নেতাকে দস্যুরা প্রতিনিয়ত চাঁদার ভাগ দিয়ে আসে এবং তারা একের পর এক চাঁদাবাজি ও চাঁদার দাবিতে অপহরণ, হামলা ও মাছ লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের শেল্টার দিচ্ছেন এ নেতা। গত শনিবার ভোর রাতে উপজেলার নিঝুম দ্বীপে জেলেরা বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে আসার পথে নিঝুম দ্বীপের কাছে পৌঁছলে জলদস্যুরা ২৫-৩০টি ট্রলারের মাছ লুট করে নিয়ে যায় এবং এ সময় দস্যুরা এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে চার জেলে গুলিবিদ্ধসহ ১২ জেলে ও মাঝি আহত হয়। গুলিবিদ্ধ ইসমাইল (৪০), শাখাওয়াত (৩৫), আ: মতিন (৩৮) ও কবির উদ্দিনকে (৪০) হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আহত অন্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। হাতিয়া থানার ওসি সৈয়দ ফজলে রাব্বি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। গত ২৪ জুলাই ভোরে মেঘনা নদীর টেঙ্গার চরে চাঁদার দাবিতে দু’টি মাছ ধরা ট্রলারে থাকা ১২ জেলেকে দু’টি মাছ ধরা ট্রলারসহ অপহরণ করে নিয়ে যায় দস্যুরা। মৎস্যব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো: ইসমাইল ও সাবেক সভাপতি সাহেদ জানান, ট্রলার ও মাঝির ছেলেকে অপহরণ করেছে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার ভট্টু ডাকাত বাহিনী ও তার সদস্যরা। ট্রলারগুলো মালিক শাহাদাত ও নিজাম মাঝির। পরে প্রতিজন জেলের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে দস্যুরা। কিন্তু অসহায় পরিবার ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করতে পারেনি। এর দুই দিন পর পাঁচজন উদ্ধার হলে সাত জেলে এখনো উদ্ধার হয়নি। ফলে অপহৃতদের পরিবারে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এরই মাঝে শুক্রবার সকালে নুরুল হক মাঝি, আলাউদ্দিন মাঝি, রহমান মাঝিসহ  পাঁচজন উদ্ধার হয়েছে। তাদের মধ্যে দুইজনকে মুক্তিপণ দিতে হয়েছে। উল্লেখ্য, জেলার হাতিয়া, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় মেঘনা ও ভাবনী নদীতে বিশাল চর জাগছে। জেগে ওঠা চরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নদী ভাঙা অসহায় তিন লাধিক ভূমিহীন মানুষ ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছিল এ সব ভূমিহীনের ছদ্মাবরণে গড়ে ওঠে একদল দস্যু। দুই শতাধিক সন্ত্রাসী বিভিন্নভাবে বিভক্ত হয়ে জিম্মি করে ফেলে উপকূলীয় অঞ্চলের ভূমিহীনদের। সন্ত্রাসী বাসার মাঝি, নোব্বা চোরা, সফি বাতাইয়া, জাহাঙ্গীর কমান্ডার, মুন্সিয়া, কালা বাদশা ও নাছির কেরানীর নেতৃত্বে চলে চাঁদাবাজি, অপহরণ, ধর্ষণ, খুন আর লুটপাট। শুধু তাই নয় বিয়ের অনুষ্ঠান, জমি চাষ বা নদীতে মাছ ধরতে গেলেও দিতে হতো চাঁদা। পরে বাসার মাঝি, নিজাম ডাকাত, নাছির কেরানী র‌্যাবের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে মারা যায়। এলাকাবাসী জানান, দস্যু সর্দার মারা যাওয়ার পর স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা তাদের আশ্রয় দিচ্ছেন। তারা আরো বলেন, যখন যে দল মতায় থাকে সে দলের ছত্রছায়ায় তারা সন্ত্রাস করে। ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিএনপি সরকারের আমলে চলে বনদস্যু উৎখাত অভিযান। ওই অভিযানে কোস্টগার্ড ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালায়। এতে প্রশাসনের পাশাপাশি অংশ নেয় ভুক্তভোগী ও সর্বদলীয় এলাকাবাসী। এ সময় জনতার গণপিটুনিতে ৩২ জন দস্যু মারা যায়। পুলিশ অর্ধশত দস্যুকে গ্রেফতার করে। আবার কিছু দস্যু পালিয়ে যায়। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই সন্ত্রারীরা আবার চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করে। নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো: ইলিয়াস শরীফ বলেন, উপকূলীয় এলাকায় দস্যুদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে আরো একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। ট্রলারের মাধ্যমে বিশেষ অভিযান চলবে।

No comments:

Post a Comment