Thursday, August 7, 2014

আশা কমছে ক্ষোভ বাড়ছে:যুগান্তর

প্রায় তিনশ’ যাত্রী নিয়ে পদ্মায় পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার তিন দিন কেটে গেছে। এখনও লঞ্চটির অবস্থানই শনাক্ত করতে পারেনি উদ্ধারকারী দল। ছোট-বড় ১৫টি উদ্ধার জাহাজ রাত-দিন অনুসন্ধান করেও পায়নি সফলতা। বরং মাওয়া থেকে ভাটির দিকে দূর-দূরান্তে ভেসে উঠছে একের পর এক লাশ। এ নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ, বাড়ছে হতাশা। নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, লাশ উদ্ধারে প্রশাসন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে না। ‘বাধ্য হয়ে’ পদ্মার বু
কে নেমে পড়েছেন তারা। ট্রলার ও স্পিডবোটে পদ্মা চষে বুধবার বিকালে নিজেরাই উদ্ধার করেছেন লাশ। ব্যস, এরপর থেকেই পদ্মা-তীর হয়ে ওঠে বিক্ষোভের ময়দান। এর আগে থেকেই চলা কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবার রূপ নেয় তুমুল বিক্ষোভে। বিক্ষুুব্ধ জনতার তোপের মুখে পড়ে প্রশাসন। এমনকি উদ্ধার ও সংবাদকর্মীরাও বাদ যাননি তা থেকে। একপর্যায়ে মাওয়াঘাট থেকে সরে যায় রেডক্রিসেন্টের উদ্ধারকারী দলও। কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে (রাত ৯টা), বুধবার পদ্মা ও মেঘনায় মাওয়ায় ৪টি, ভোলায় ৫টি, চাঁদপুরে ৪টি, শরীয়তপুরে ৫টি ও বরিশালে ২টি মিলে মোট ২০টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে ৮ জনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়াও ভোলায় মেঘনায় কয়েকটি লাশ ভেসে যেতে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন জেলেরা। এর আগে সোমবার মাওয়ায় দুটি এবং মঙ্গলবার চাঁদপুরে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে মোট লাশ উদ্ধার করা হল ২৪টি। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে বুধবার সন্ধ্যায় প্রশাসনের সব স্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, মধ্যরাত (বুধবার) নাগাদ মাওয়ায় ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছবে আধুনিক প্রযুক্তি বহনকারী জাহাজ কাণ্ডারি-২। তিনি বলেন, ইকো ফাইন্ডার প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট এলাকার মাটির ১৫ ফুট গভীর পর্যন্ত তল্লাশি চালাবেন তারা। মন্ত্রী বলেন, দেশের যেসব এলাকায় লঞ্চ চলছে সব স্থানেই জরিপ চালিয়ে নিরাপদ রুট চিহ্নিত করে দেয়া হবে অচিরেই। শাজাহান খান আরও বলেন, এখন (সন্ধ্যা) পর্যন্ত ১৯টি লাশ উদ্ধার করেছেন তারা। এর মধ্যে ৮ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। নৌমন্ত্রী এ সময় বিক্ষুব্ধদের আশ্বস্ত করেন, কাণ্ডারি এলে কাল (আজ বৃহস্পতিবার) আশাকরি লঞ্চের খোঁজ মিলবে। আর লঞ্চটি না পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। এর আগে পদ্মা-মেঘনার মোহনায় ভেসে ওঠা লাশগুলো উদ্ধারে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশালে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। নদীতে অব্যাহত রয়েছে তাদের টহল কার্যক্রম। উদ্ধারকর্মী ও ডুবুরিদের ধারণা, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি নদীর কোনো গভীর খাদে পড়ে গেছে এবং এর ওপর পলিজমে গেছে। ফলে লঞ্চটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম থেকে আসা জরিপ জাহাজ কাণ্ডারি-২ বেলা ৩টায় চাঁদপুর পৌঁছে। সন্ধ্যায় সেটি মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিআইডব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিসের জাহাজ সন্ধানী, তিস্তা, রুস্তম, হামজা, অগ্নিশাসক, অগ্নিবিনাশ, ওয়ার্ক বোর্ড ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান শনাক্তের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। লাশ উদ্ধারের জন্য রয়েছে স্পিডবোট ও কোস্টগার্ডের উদ্ধার কর্মীরা। রাতে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ রেখে অবিরাম চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী জাহাজ সন্ধানী, তিস্তা ও আইটি-৩৯৪। ফায়ার সার্ভিসের জাহাজ অগ্নিশাসক, অগ্নিবিনাশ ও স্পিডবোট রেসকিউ-২ থেকেও ডুবে যাওয়া লঞ্চটি শনাক্তে কাজ করছে। উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন নজরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পদ্মায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটি পলি মাটিতে চাপা পড়তে পারে অথবা স্রোতের টানে ভাটিতে অনেক দূরে চলে যেতে পারে। তাই আমরা অনুসন্ধান এলাকা বাড়িয়েছি। ঘটনাস্থল থেকে ২০ কিলোমিটার ভাটিতে ও কয়েক কিলোমিটার উজানেও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। তারা লেজার সার্চ পদ্ধতি প্রয়োগ করেও লঞ্চটি খুঁজে পাননি। বুধবার দুপুরে তারা একটি পয়েন্টে লঞ্চটি আছে শনাক্ত করার তথ্য দেন। পরে বিশদ অনুসন্ধান চালিয়ে সেই তথ্যও মিথ্যা প্রমাণিত হয়। বেলা ২টার দিকে ফায়ার সার্ভিস লঞ্চটি ডুবে যাওয়া স্থানের কিছুটা ভাটিতে পাওয়ার আশা প্রকাশ করে। তারা দড়িতে ছোট অ্যাংকর (নোঙর) বেঁধে টানার সময় সেখানে সেটি আটকে যায়। পরে ডুবুরি পাঠিয়ে দেখা যায় সেটি লঞ্চ নয় বরং গাছের ডাল। ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক অপারেশন ভরত চন্দ্র জানান, তাদের ডুবুরিরা ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দড়িতে ইট বেঁধে এবং জেলেদের জাল ফেলে লঞ্চ ও লাশের সন্ধান করা হয়েছে। তিনি বলেন, তীব্র স্রোতের কারণে সনাতন পদ্ধতির উদ্ধার কাজে সফলতা মিলছে না। ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি নূরুল ইসলাম জানান, তিনি নিজে নদীর তলদেশে নেমেছেন। নদীর তলদেশ অসমতল। কোথাও কোথাও ১০০ থেকে ১৫০ ফুট পর্যন্ত গভীর খাদ রয়েছে। আশংকা করা হচ্ছে সেরকম কোনো খাদে লঞ্চটি পড়ে গেছে এবং তার ওপর পলি জমে গেছে। বুধবার সকাল থেকে উদ্ধারকারী জাহান রুস্তমকে নদীর একপাশে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। বিআইডব্লিউটির অপর জাহাজ সন্ধানী ও তিস্তা দিয়ে সাইড সোলার স্ক্যান করা হয়েছে। কিন্তু সফলতা মেলেনি। বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধারকারী টিমের প্রধান যুগ্ম-পরিচালক জহিরুল ইসলাম জানান, বিআইডব্লিউটিএ, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস মিলে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তীব্র সে াত ও প্রতিকূল আবহাওয়া উদ্ধারকাজ বাধাগ্রস্ত করছে। সোমবার রাত থেকে সাইড সোলার স্ক্যানিং পদ্ধতিতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার জানান, দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাটিতে উদ্ধার কাজ অব্যাহত আছে। স্বজনদের ক্ষোভ বাড়ছে : ভাঙ্গা (ফরিদপুর) থেকে মেয়ের সন্ধানে আসা হাবিবুর রহমান বলেন, জীবিত পাব না জানি। আমাদের লাশটি অন্তত খুঁজে দেয়া হোক। যাতে বাড়িতে গিয়ে মাটি দিয়ে বুকের জ্বালা কিছুটা হলেও দূর করতে পারি। শাহানা নামের এক বৃদ্ধা বলেন, আমি এত কিছু বুঝি না। আমি আমার মেয়ে, জামাই আর নাতিদের লাশ চাই। সোমবার দুপুর ১২টা থেকে মাওয়া ঘাটে বসে আছি। বুধবার বিকালের পর মাওয়া ঘাটের দিক থেকে ভাটিতে একের পর এক লাশ ভেসে উঠতে থাকে এবং প্রশাসন সেগুলো সঠিকভাবে উদ্ধার করছে না অভিযোগ এনে স্বজনরা বিক্ষোভ করেন। এ নিয়ে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। ব্যক্তি উদ্যোগে ট্রলার ও সি-বোটে করে স্বজনরা লাশের খোঁজে তল্লাশি করে কয়েকটি লাশ উদ্ধার করেন। সন্ধ্যা ৬টায় স্বজনরা আনুমানিক ২৫ বছরের এক মহিলার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে আসার পর ক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। স্বজনের তোপের মুখে রেডক্রিসেন্টের উদ্ধারকারী দলও মাওয়াঘাট থেকে সরে যায়। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা সংবাদকর্মীদের ওপরও হামলা চালায়। তারা মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের গাড়ি ভাংচুর করে। পরে বাধ্য হয়ে পদ্মা রেস্ট হাউসে আশ্রয় নেন সংবাদকর্মীরা। ভাসছে লাশ : কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে, বুধবার মাওয়া ঘাটের কাছে, চাঁদপুর, শরীয়তপুর ও ভোলায় আরও ১৬টি লাশ নদীতে ভাসমান অবস্থায় মিলেছে। এর মধ্যে ভোলা থেকে ৫টি, হাইমচর থেকে তিনটি, শরীয়তপুরে ২টি ও বরিশাল ১ এবং মাওয়ায় ৪ লাশ- এ নিয়ে মোট উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যা ২০। এর আগে মঙ্গলবার চাঁদপুর এলাকা থেকে অজ্ঞাত দুটি এবং সোমবার দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলের প্রায় আড়াই কিলোমিটার ভাটিতে এক মহিলার ভাসমান লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে থাকা ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউস ইন্সপেক্টর ফয়সালুর রহমান জানান, তারা বুধবার বিকালে পদ্মা নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করে নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছেন। বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে খবর পেয়ে আমরা বোট নিয়ে মাওয়া ঘাট থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্বে ওই এলাকায় যাই। ওই মহিলার বয়স আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ বছর। লাশটি ফুলে গেছে বলে ফয়সালুর জানান। লৌহজং থানার নির্বাহী কর্মকর্তা খালেকুজ্জামান জানান, উদ্ধারকৃত লাশগুলো মাদারীপুরের শিবচরে কাওড়াকান্দি ঘাটের কাছে পাঁচচর হাইস্কুল মাঠে পাঠানো হবে। ভোলা প্রতিনিধি অমিতাভ অপু ও ভোলা (দক্ষিণ) প্রতিনিধি এম হেলাল উদ্দিন জানান, মেঘনা নদীর শাহবাজপুর চ্যানেলে বুধবার ভোর রাত থেকে একের পর এক ভেসে আসছে লাশ। বেলা ৩টা পর্যন্ত ৫টি লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ সেলিম রেজা, পুলিশ সুপার মোহাঃ মনিরুজ্জামান, সহকারী পুলিশ সুপার রমানন্দ সরকার ও কোস্টগার্ড পেটি অফিসার বিপ্লব বড়ুয়া। এর মধ্যে একটি লাশের পরিচয় মিলেছে। অপরদিকে আরও ৫-৬টি লাশ ভেসে যেতে দেখেছেন জেলেরা। পুলিশের কাছেও এমন তথ্য রয়েছে। সকাল থেকে ঝড় বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় উত্তাল মেঘনায় ভেসে আসা ওইসব লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ ট্রলার নিয়ে উত্তাল মেঘনায় তল্লাশি করছে। সকালে একটি লাশের পকেটে ২টি মোবাইল ফোন ছিল। তার সিম থেকে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, ২২ বছর বয়সী ঢাকা তেজগাঁও কলেজের বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ফাইজুর করিম ফাহাদ আকন্দ সে। পিতার নাম লুৎফর রহমান আকন্দ। বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঁঠালিয়া উপজেলার উত্তর আওড়া গ্রামে। দ্বিতীয় লাশ পাওয়া যায় কাচিয়া ইউনিয়নের কাঠিরমাথা নদীতে। লাশটি কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর। তার সঙ্গে ৯ হাজার ৪ টাকাসহ কাপড়ের খুতি ছিল। মুখে পাকা দাড়ি। বয়স ৫৫ হবে বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ। হাতে তামার আংটিও ছিল। ইলিশা নাদেরমিয়াহাট এলাকায় পাওয়া যায় একটি ছেলে ও একটি মেয়ের লাশ। ছেলেটির পরনে প্যান্ট, গায়ে সবুজ রংয়ের পাঞ্জাবি। বয়স ১৪-১৫ বছর। মেয়েটির বয়স ৮-১০ বছর। ফাহাদের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি চার লাশ শিবচরের কন্ট্রোল রুমে পাঠানো হয়েছে। মেঘনা নদীর চ্যানেলে লাশ উদ্ধারে বুধবার বিকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনোয়ার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যদের নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের পক্ষেও সহকারী পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে অপর একটি টিম নদী এলাকায় কাজ করছে। চাঁদপুর প্রতিনিধি ইকরাম চৌধুরী জানান, বুধবার চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদী থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের একজন পুরুষ ও একজন মহিলা এবং সদর উপজেলার রাজরাজেস্বর থেকে একজন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে দুই দিনে চাঁদপুরের হাইমচর ও সদর থেকে ৫টি লাশ উদ্ধার করা হল। মঙ্গলবার হাইমচর থেকে উদ্ধার করা মহিলার মৃতদেহটি শরীয়তপুর নিয়ন্ত্রণ কক্ষে নেয়া হলে স্বজনরা সেটি শনাক্ত করে নিয়ে যায়। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর জানান, বুধবার উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে সঙ্গে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মাধ্যমে একজনের পরিচয় মিলেছে। তিনি জামাল হোসেন (২৫)। ফরিদপুর জেলার মানিকনগর থানার সালমা নগরকান্দা গ্রামের মনির উদ্দিনের ছেলে। এ ছাড়া যুবকটি ১৭-১৮ বছর বয়সী। মহিলার বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর। তিন লাশ শরীয়তপুরে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, বুধবার দুপুরে নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের শ্রীপুরে পদ্মা নদীতে অজ্ঞাতনামা এক নারীর লাশ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। তার বয়স হবে ২৫-২৮। তার পরনে ছিল কালো প্যান্ট ও সার্ট। কাচিকাটা ইউনিয়নে মেলে অজ্ঞাতনামা পুরুষের লাশ। তার বয়স অনুমান ৩০-৩৫ হবে। পরে গোসাইরহাট থেকে একটি দেড় বছরের শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। নড়িয়া থানার পুলিশ ৩ লাশ শিবচরে পাঁচচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পাঠিয়ে দেন। বরিশাল ব্যুরো ও মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বেলা ২টায় বরিশাল সদর উপজেলার লাহারহাট এলাকার কালাবদর নদী থেকে এক নারীর মৃত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মেট্রো পলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ গোলাম রউফ খান পিপিএম জানান, উদ্ধার হওয়া নারী বোরকা পরিহিত। বয়স চল্লিশের কোঠায়। মেহেন্দিগঞ্জ থানার এসআই ইউনুস ফকির জানান, উলানিয়া মল্লিকপুর গ্রাম থেকে মেঘনায় এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটির বয়স ৮-৯ বছর হতে পারে। তার পরনে জিন্সের প্যান্ট ও গেঞ্জি এবং পায়ে স্যান্ডেল ছিল। কন্ট্রেলরুম চালু : কাওড়াকান্দির কাছে শিবচরে স্থানীয় পাঁচচর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে একটি কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। সেখানে লাশগুলো রাখা হবে। পরিচয় শনাক্ত করার পর হস্তান্তর করা হবে। সন্ধ্যা ৬টার পর চাঁদপুর, ভোলাসহ বিভিন্ন স্থানে উদ্ধার হওয়া লাশগুলো মাওয়া ঘাটে আনা হয়। সেখান এন্ট্রি ও সুরতহাল শেষে পাঠানো হয় কন্ট্রোলরুমে। পরিচয় শনাক্ত করে হস্তান্তর করা হয় স্বজনদের কাছে। লাশ হস্তান্তর : শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, তথ্য ও অভিযোগ কেন্দ্র চালু করার পর চাঁদপুর থেকে উদ্ধার করা হয় রীতা বেগম নামে এক গার্মেন্ট কর্মীর মৃতদেহ (বাড়ি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার উনগ্রামে) ও মাদারীপুর সদর উপজেলার ধুরাইল ইউনিয়নের খালাশিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ইনা আক্তারের (২২)-এর মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। ইমা আক্তার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ বর্ষের ছাত্রী। থানায় হত্যা মামলা : লঞ্চডুবির ঘটনায় বুধবার বিআইডব্লিউটিএ’র উপ-পরিদর্শক মোঃ জাহাঙ্গীর ভুঁইয়া বাদী হয়ে লৌহজং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনি লঞ্চের মালিক ও লৌহজংয়ের মোদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন বিএনপি নেতা আবুক বকর সিদ্দিক কালু, ঘাট ইজারাদার মনির সিকদার, লঞ্চের সাবেক মালিক খোকন, সারেং মনিরুজ্জামান, সুকানী লিমন ও গিজারকে আসামি করেছেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ওভার লোডিং ও ওভারহোল্ডিংয়ের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। কাণ্ডারি পৌঁছেনি : নদী ও সাগর উত্তাল থাকায় ও ভারি বৃষ্টিতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মাওয়া পৌঁছায়নি জরিপ জাহাজ কাণ্ডারি-২। সন্ধ্যা ৭টায় জাহাটির অবস্থান ছিল চাঁদপুরে। বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান ড. শামসুদ্দোহা খন্দকার জানান, দুর্ঘটনারকবল এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত উদ্ধার কাজ অব্যাহত আছে। পিনাক-৬ এর সন্ধান ও উদ্ধার না হওয়া পাওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। সেনাসদস্য আল-আমিনের খোঁজ নেই : ডুবে যাওয়া লঞ্চের যাত্রী ছিলেন সেনাসদস্য এসএম আল-আমিন (সেনা নং-১২২৮১৫৬) । তার বাড়ি বরিশাল জেলার গৌরনদীতে। বাবার নাম শহিদুল ইসলাম সর্দার। আল-আমিন নয় বছর ধরে ১০ সিভিল রেজিমেন্টে আর্টিলারি জাহাঙ্গীর সেনানিবাস বগুড়াতে কমরত ছিলেন। ঈদে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেই যেন চিরদিনের জন্য পৃথিবী থেকে পাড়ি দিলেন তিনি! নিখোঁজ সহকর্মী আল-আমিনের খোঁজে সরকারিভাবে পদ্মার তীরে এসেছেন অপর সেনাসদস্য আব্দুর রহিম। সহকর্মী হারিয়ে শোকে কাতর হয়ে গেছেন আবদুর রহিম। আবদুর রহিম বলেন, বগুড়া সেনানিবাসে ১৯ বছর ধরে কর্মরত আছি। সরকারি অনুমতি নিয়ে আল-আমিনের খোঁজে বগুড়া থেকে পদ্মার তীরে এসেছি। যদি সহকর্মীকে শেষ বেলায় হলেও খুঁজে পাই! কিছুক্ষণ লঞ্চ ও সিবোট বন্ধ : অতিরিক্ত যাত্রী তোলার অভিযোগে ঘাট ইজারাদার মনির সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা করায় সকাল ৯টার দিকে হঠাৎ লঞ্চ ও স্পিডবোট চালানো বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। এক ঘণ্টার মধ্যে আবার লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়।  

No comments:

Post a Comment