জলবায়ু শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ড ও এন্টার্টিকার বরফ যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি মাত্রায় গলে যাচ্ছে। এর ফলে সমুদ্র উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীব্যাপী সমুদ্রের গড় উচ্চতা ০.১৭-০.২১ মিটার বৃদ্ধি পায়। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, জলবায়ু পরির্বতনের কার
ণে প্রতি বছর বাংলাদেশের জিডিপির ১ শতাংশ তি হচ্ছে। বাংলাদেশ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। কেননা গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার যে বিষয়টি তা ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডের সৃষ্টি, আমাদের নয়; কিন্তু নেপাল, ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা গ্রিন হাউজের তিকর প্রভাবের শিকার। এ েেত্র বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি তিগ্রস্ত হচ্ছে। রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে জলবায়ুবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের গবেষণা সংস্থা ‘ইন্ট্রা গভার্মেন্টাল প্যানেল অন কাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)’ গতকাল তাদের পঞ্চম অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্টের বাংলাদেশ অধ্যায় প্রকাশ করে তাতে এসব তথ্য তুলে ধরে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিকল্পনামন্ত্রী। বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব ড. মেজবাউল আলম এবং বন ও পরিবেশ সচিব সফিকুর রহমান পাটোয়ারী। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন লিড লেখক ড. জন চার্স। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, আইপিসিসিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে এ ক্ষতিপূরণজনিত সমস্যা সমাধানের পথ দেখাতে হবে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী নয়; কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত খেসারত আমাদের মতো দেশগুলোকেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় দিতে হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অতি দ্রুততার সাথে বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৩৫ থেকে ৫০ মিলিয়ন মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। মানুষ ওই সব এলাকা থেকে ঢাকার মতো বড় বড় শহরে এসে জীবিকার সন্ধান করবে, যা পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ ছাড়া উন্নত বিশ্বের অতিমাত্রায় কার্বণ নিঃসরণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো দেশের সাধারণ মানুষকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা বর্তমানের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি বাড়বে। তাপমাত্রা ২ ডিগ্রির বেশি বাড়তে দেয়া পরিবেশের জন্য তিকর। বর্তমানের চেয়ে কমে ধান ৮ ভাগ এবং গমের উৎপাদন ৩২ ভাগ কমবে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি তির শিকার হবে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে উন্নত বিশ্বের দেয়া আশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাতে হবে। কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে তিপূরণ নিয়ে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় বৈজ্ঞানিকদের সংগঠন দ্য ইন্টার গভার্মেন্টাল প্যানেল অব কাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)। বিশেষ করে দণি এশিয়ায় অতি দ্রুত এ সম্পর্কে ব্যবস্থা না নিলে এক সময় বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি হবে, যা কোনো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের পে সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। সংগঠনটি পঞ্চমবারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট দুর্ভোগে মানুষ কিভাবে কষ্ট করছে ও ভবিষ্যৎ বিপর্যয় কী আকার ধারণ করবে তা তুলে ধরেছে। বিশ্বব্যাপী আট শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা অভিজ্ঞ বৈজ্ঞানিকদের সমন্বয়ে এ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। ড. মেজবাউল আলম বলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এবং আমাদের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি তির শিকার বাংলাদেশ। এ েেত্র অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, সাইকোন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধিসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছি আমরা। এ রিপোর্টে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তুলে ধরা হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ও তার প্রভাব এবং করণীয়।
No comments:
Post a Comment