রাজধানী ঢাকায় ভিক্ষুকের সংখ্যা কত? এর হিসাব না আছে সরকারের কাছে, না আছে বেসরকারি খাতের কারো কাছে। প্রকৃত হিসাব কারো কাছেই নেই। আনুমানিক ৫, ১০ এমনকি ২০ হাজার ভিক্ষুক ঢাকা শহরে বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করে বলে মনে করা হয়। তবে ভিক্ষুকের সংখ্যা জানা থাকুক বা নাই থাকুক সরকার আবারো রাজধানী থেকে ভিক্ষুক ‘উচ্ছেদ’-এর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা শহরের ছয়টি জায়গাকে ‘ভিক্ষুকমুক্ত’ এলাকা হিসেবে ঘোষণা কর
া হবে। গতানুগতিকভাবে চিহ্নিতও করা হয়েছে এসব এলাকাকেও। এগুলো হলোÑ বিমানবন্দর এলাকা, হোটেল রেডিশন, হোটেল সোনারগাঁও ও রূপসী বাংলা, বেইলী রোড এবং কূটনৈতিক জোন ও দূতাবাস এলাকা। কবে থেকে ভিক্ষুকমুক্ত করার কাজটি শুরু করা হবে তা ‘দিনক্ষণ’ নির্ধারণ করা না হলেও সম্প্রতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নীতিগতভাবে এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগেও বেশ কয়েকবার ঢাকা শহরকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আইনগত জটিলতা, এক শ্রেণীর এনজিওর আপত্তি এবং পুলিশের গা-ছাড়া ভাবের কারণে এসব উদ্যোগ সফলতার মুখ দেখেনি। শুধু তাই নয়, ভিক্ষুক জরিপের নামে লাখ লাখ সরকারি টাকাও লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এবারো ভিক্ষুকমুক্ত করার পদক্ষেপ সফলতার মুখ দেখবে বলে মনে হয় না। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীকে ভিক্ষুকমুক্তকরণ এবং ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিতদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২০১০ সালে এই মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান’ শীর্ষক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এরপর ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনভুক্ত ১০টি জোনে জরিপ পরিচালনার মাধ্যমে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত ১০ হাজার জনের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। জরিপকৃতদের মধ্যে থেকে দুই হাজার জন ভিক্ষুককে নিজ নিজ জেলায় পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ক্ষেত্রে জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে অধিকসংখ্যক ভিক্ষুক অধ্যুষিত চার জেলায় তাদের পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ চারটি জেলা ছিলÑ ময়মনসিংহ, জামালপুর, ঢাকা ও বরিশাল। প্রাথমিকপর্যায়ে ময়মনসিংহ জেলায় ৩৭ জন ভিক্ষুককে রিকশা, ভ্যান ও ুদ্র ব্যবসায় পরিচালনার পুঁজি হিসেবে মূলধন প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়। তবে পুনর্বাসনের কিছু দিন পরই এসব ভিক্ষুক রিকশা-ভ্যান বিক্রি করে দেয়। আবার তারা ঢাকায় ফিরে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে কর্মসূচির নীতিমালা সংশোধন করে জামালপুর জেলায় স্থানীয়ভাবে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত ২৯ জনকে রিকশা, ভ্যান ও ুদ্র ব্যবসায় পরিচালনার পুঁজি প্রদানের মাধ্যমে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়। তবে এরা পুনর্বাসিত হয়েছে কি না তা নিশ্চিত নয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে তাদের বেশির ভাগই প্রাপ্ত উপকরণ ও মূলধন ব্যবহার করে ভিক্ষাবৃত্তি পরিহার করেছে বলে অনুমান করা যায়। এই অনুমানের ওপর ভিত্তি করেই এখন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ঢাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এর আগে গত বছরের (২০১৩) ২২ জানুয়ারি ঢাকা শহরের বিমানবন্দর এলাকা, হোটেল সোনারগাঁও, হোটেল রেডিশন, হোটেল রূপসী বাংলা, বেইলী রোড, কূটনৈতিক জোন ও দূতাবাস এলাকাগুলো ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। কারণ কাগজে কলমে সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এবারো আবার একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবারো কাজ হবে বলে মনে হয় না। এতে কিছু অর্থের অপচয় হতে পারে।
No comments:
Post a Comment