Monday, August 25, 2014

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে অমার্জনীয় ভুল:কালের কন্ঠ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে প্রায় তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রাঙামাটি শহরের উপজেলা পরিষদের সামনে তাঁর বিশাল ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। ২০১০ সালে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দে এর নির্মাণকাজ শুরু হলেও গত চার বছরেও তা সম্পন্ন হয়নি। অথচ গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি অসমাপ্ত ওই ভাস্কর্যের উদ্বোধন করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। এ প্রকল্পে ব্যয়ের জন্য আরো প্রায় দুই
কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে পরে আরো দুই কোটি টাকা চাওয়া হবে। কাজটি শেষ করতে সব মিলিয়ে সাড়ে সাত কোটি টাকা লাগবে বলে জানিয়েছেন নির্মাণকাজের তদারককারী প্রকৌশলী। তবে এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্পর্শকাতর এ স্থাপনায় তথ্য ও বানানে গুরুতর ভুল রয়ে গেছে। এ নিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জানা গেছে, ২০০৯ সালে জেলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ফিরোজা বেগম চিনুর (বর্তমানে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য) স্বামী শাহ আনোয়ার মিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেত্রী জেবুন্নেসা রহিমের স্বামী আবদুর রহিম বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাকী এন্টারপ্রাইজের নামে এক কোটি ৭৫ লাখ টাকার ওই কাজ শুরু করেন। পরে আরো দুই কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়। ঠিকাদারও পরিবর্তন হয়। শাহ আনোয়ার মিন্টুর সঙ্গে যোগ দেন যুবলীগ নেতা আজম। বরাদ্দ দুই কোটি থেকে বেড়ে প্রায় চার কোটি টাকা করা হয়। রাঙামাটি শহরের সেনা জোন ও উপজেলা পরিষদের মধ্যবর্তী স্থানে প্রায় শেষ হতে চলেছে স্থাপনাটির নির্মাণকাজ। কিন্তু ইতিমধ্যে ভাস্কর্যটি সৃষ্টি করেছে নানা বিতর্কের। বঙ্গবন্ধুর বিশাল ভাস্কর্যে তাঁর চিরায়ত অঙ্গুলি তুলে রাখার দৃশ্যের পাশাপাশি বাঁ হাত পকেটে ভরে রাখার দৃশ্য মেনে নিতে পারছেন না তাঁর ভক্ত, অনুরাগী ও দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু জনসভায় বক্তব্য দেওয়ার সময় কখনো হাত পকেটে ঢুকিয়ে রাখতেন না। বিষয়টি নিশ্চিত হতে গুগলে সার্চ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জনসভায় বক্তব্যরত অসংখ্য ছবি পাওয়া গেলেও এর কোনোটিতেই তাঁর বাঁ হাত পকেটে ভরে রাখার দৃশ্যের দেখা মেলেনি। শুধু বঙ্গবন্ধুর বাঁ হাত পকেটে ভরে রাখাই নয়, ভাস্কর্যের গায়ে যেসব তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাতেও ভুল তথ্য আর ভুল বানানের ছড়াছড়ি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের তারিখ লেখা হয়েছে ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি। অথচ সেটি হওয়ার কথা ১৯৭২। আবার ‘প্রত্যাবর্তন’কে লেখা হয়েছে ‘প্রত্যাবর্সন’। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর কোট, যা মুজিব কোট নামে পরিচিত, তাও ভাস্কর্যে কালো না দিয়ে ধূসর রঙের দেওয়া হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, ভাস্কর্যটি নির্মাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের মাস্টার্সের একজন ছাত্রকে নিয়োগ দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁকে দিয়ে কাজটি করানো যায়নি। পরে এ বিষয়ে অনভিজ্ঞ উপজেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী এরশাদুল হক মণ্ডলই মূলত ভাস্কর্যের কাজটি করেছেন। রাঙামাটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রবার্ট রোনাল্ড পিন্টু বলেন, এত টাকা ব্যয়ে নির্মিত জাতির পিতার ভাস্কর্যে এত বড় ভুল মেনে নেওয়া যায় না। এখানে তাঁকে অসম্মান করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাস্কর্যে তাঁর পকেটে হাত, শরীরের গঠন বেঁটে দেখানো, গায়ের কোট ধূসর রঙের দেখানোর মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। তিনি দ্রুত এসব ভুল সংশোধনের দাবি জানান। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মতিন বলেন, ‘ভাস্কর্যটিতে বঙ্গবন্ধুর পকেটে হাত রাখার বিষয়টি দুঃখজনক। বিষয়টি আমি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদককে বলেছি। কাজ বাস্তবায়নকারী সংস্থার উচিত ছিল অনুমোদিত নকশা নিয়ে কাজ করা। গুরুত্বপূর্ণ কাজটির ক্ষেত্রে চরম অবহেলা দেখানো হয়েছে।’ ভাস্কর্যটির নির্মাণকাজের ঠিকাদার শাহ আনোয়ার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের বিভিন্ন ছবিতে অনেক ধরনের পোজ রয়েছে। সেখানে পকেটে হাত দেওয়ার পোজটি আমরা নিয়েছি। পেছনে হাত দিলে মনে হতো, তাঁর একটি হাত নেই। তাই আমরা শিল্পীর সঙ্গে কথা বলেই এটা করেছি। তারিখ ভুল হওয়ার বিষয়টি ঠিক করে নেব। আর ভাস্কর্য কখনো রঙিন হয় না। কালো দিলে রং নষ্ট হবে বলে আমরা সেটা দিইনি। তার পরও যেহেতু কথা উঠেছে, আমরা কোটটি কালো করে দেব।’ প্রকৌশলী এরশাদুল হক মণ্ডল বলেন, প্রকল্পটির পরিকল্পনা বড় হয়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর পকেটে হাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছবিতে যা পাওয়া গেছে, তা-ই দেওয়া হয়েছে। তারিখের বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত ভুল, এটা ঠিক করে নেওয়া হবে। ভাস্কর্য নির্মাণের ক্ষেত্রে নিজের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হাতটি পেছনে দিলে মেলাতে আমার জন্য সমস্যা হতো।’ ভাস্কর্যের দ্বিতীয় দফা বরাদ্দের প্রায় দুই কোটি টাকা শেষ হয়ে গেছে উল্লেখ করে আরো দুই কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কিন্তু ওই দুই কোটি টাকা পেলেও কাজ শেষ করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে পরে আরো দুই কোটি টাকা চাওয়া হবে। এ প্রকল্পে খরচ হবে সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা।

No comments:

Post a Comment