Wednesday, August 20, 2014

খালেদা জিয়া যাননি, চেয়ার ফাঁকা রেখেই সমাবেশ:প্রথম অালো

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের প্রথম সমাবেশে যোগ দেননি প্রধান অতিথি খালেদা জিয়া। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত সমাবেশের মঞ্চে তাঁর জন্য নির্ধারিত চেয়ারটি ফাঁকা রেখেই কর্মসূচি শেষ করেন জোটের নেতারা। বেলা তিনটায় সমাবেশের শুরু থেকেই মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। মঞ্চের মূল ব্যানারেও প্র
ধান অতিথি হিসেবে খালেদা জিয়ার নাম লেখা ছিল। সমাবেশের শেষ পর্যায়ে সোয়া পাঁচটার দিকেও খেলাফত মজলিসের আমির মোহাম্মদ ইসহাক বক্তৃতায় বলেন, খালেদা জিয়া অচিরেই সমাবেশে যোগ দেবেন। এরপর আরও পাঁচজন বক্তৃতা করেন। তখনো সমবেত নেতা-কর্মীরা জানেন খালেদা জিয়া আসছেন। সব শেষে সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ কারণে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। এ জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন মির্জা আব্বাস। খালেদা জিয়া না আসায় রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, মূলত জমায়েত বড় করার জন্য যাতে নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হন, সে জন্য খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি থাকবেন বলে প্রচার করা হয়। কিন্তু তাঁর সমাবেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ছিল না। আগের দিন সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত নয়। সমাবেশের পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সোমবার রাতে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আবহাওয়া ও শারীরিক অবস্থা ঠিক থাকলে তিনি সমাবেশে যাবেন। কিন্তু গতকাল দুপুর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। খালেদা জিয়াও কিছুটা অসুস্থবোধ করেন। জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার প্রতিবাদে গত ১২ আগস্ট ঢাকাসহ অন্যান্য মহানগর ও জেলা শহরে ২০-দলীয় জোটের সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে। ‘প্রথম আঘাত গণমাধ্যমের ওপর’: ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে বিএনপির ভারাপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার একের পর এক আইন করছে। যাতে কেউ সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে, সে জন্য সম্প্রচার নীতিমালা করা হয়েছে। অবৈধ ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে মানুষের সব অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। প্রথম আঘাত করেছে গণমাধ্যমের ওপর। বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেওয়ার উদ্যোগের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, যে সংসদের হাতে ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে সে সংসদে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। ৫ শতাংশ মানুষও ভোট দেননি। এ সংসদে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত হবে। তিনি নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। আন্দোলন করে এ সরকারকে সরাতে হবে।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, এ সরকার টিকে থাকতে আরও কঠোর স্বৈরাচারী, নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিচারপতিদের অভিশংসনের উদ্যোগকে তিনি ‘দূরভিসন্ধিমূলক’ ও ‘স্ববিরোধী’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সমালোচনা করে বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে খায়রুল হক বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে রেখেছিলেন। আর এখন বলছেন এ ক্ষমতা কাউন্সিলের হাতে থাকা উচিত নয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য তরিকুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হলে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের অনাস্থা বাড়বে। সম্প্রচার নীতিমালার সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, সরকার জানে সংবাদমাধ্যমকে দমাতে না পারলে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের আবদুল লতিফ নেজামী, জাগপার সফিউল আলম প্রধান, সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ প্রমুখ বক্তব্য দেন। সমাবেশের শুরুতেই বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান। এর আগে দুপুর থেকেই বিএনপি-জামায়াতসহ জোটের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। বৃষ্টির মধ্যেও নেতা-কর্মীরা ছাতা, প্লাস্টিকের চেয়ার, ব্যানার-ফ্যাস্টুন মাথায় দিয়ে নেতাদের বক্তৃতা শোনেন।

No comments:

Post a Comment