Wednesday, August 6, 2014

আজ দুই মাসের মজুরি দেবে বিজিএমইএ:প্রথম অালো

তোবা গ্রুপের পোশাকশ্রমিকদের দুই মাসের মজুরি আজ বুধবার সকাল নয়টায় নিজেদের কার্যালয় থেকে দেবে পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। তবে একসঙ্গে বকেয়া তিন মাসের বেতন-ভাতা দেওয়ার দাবিতে এখনো অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকেরা। দাবি আদায়ে গতকাল মঙ্গলবার বিজিএমইএ ভবন দুই ঘণ্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। সমাবেশ থেকে আজ দুপুরের মধ্যে শ্রমিকদের সব পাওনা পরিশোধসহ পাঁচ দাবি মান
া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন সংগ্রাম পরিষদের নেতা-কর্মীরা। এতে বিভিন্ন শ্রমিক ও বাম রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি তোবার কয়েকজন শ্রমিকও অংশ নেন। এদিকে, শ্রমিকেরা যাতে মজুরি নিতে আসেন, সেটি নিশ্চিত করতে বিজিএমইএর নেতারা তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাঁরা গত রোববার সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেওয়া শ্রমিকনেতা ও তোবার মালিকপক্ষের লোকজনকে শ্রমিকদের বুঝিয়ে বিজিএমইএতে নিয়ে আসার দায়িত্ব দিয়েছেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অবশ্য এক শ্রমিকনেতা গতকাল বিকেলে উত্তর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের অনশনস্থলেও গেলে অনশনরত শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়েন। তোবার এক কর্মকর্তাকে ধাওয়া দিয়েছেন শ্রমিকেরা। অন্যদিকে বিজিএমইএ আবারও শ্রমিকদের তিন মাসের বেতন-ভাতা দেওয়ার দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ঘেরাও কর্মসূচি শেষে এক প্রেস বিফ্রিংয়ে সংগঠনের সহসভাপতি এস এম মান্নান বলেন, সংকট মোকাবিলায় বিজিএমইএর কোনো তহবিল নেই। তোবার শ্রমিকেরা ঈদের আগের দিন থেকে অনশন করছেন, তাই মানবিক কারণে বিজিএমইএ তাঁদের দুই মাসের পাওনা পরিশোধের দায়িত্ব নিয়েছে। বিজিএমইএ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে তোবার পাঁচ কারখানার শ্রমিকদের আজ সকাল নয়টায় বিজিএমইএ কার্যালয় থেকে মে ও জুন মাসের বকেয়া মজুরি নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো শ্রমিক-কর্মচারী কোনো কারণে আজ নির্ধারিত সময়ে বিজিএমইএ কার্যালয়ে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে তার কোনো দায় বিজিএমইএ নেবে না। বিজিএমইএর একাধিক নেতা জানান, শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত এক কোটি ৭৫ লাখ টাকা জোগাড় করে ফেলেছেন তাঁরা। আর এই টাকা ৫০-৫৫ জন ব্যবসায়ী ধার হিসেবে দিয়েছেন। বাকি টাকা আজকের মধ্যে চলে আসবে। ফলে টাকা নিয়ে সমস্যা হবে না। মজুরি নেওয়া নিয়ে ভিন্নমত: বিজিএমইএ কার্যালয়ে আজ মজুরি নিতে শ্রমিকেরা আসবেন কি না, সে বিষয়ে শ্রমিক ও মালিকপক্ষ পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছে। অনশনরত শ্রমিকদের একটি অংশ বলছে, তারা যাবে। অন্য অংশ বলছে, তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। অন্যদিকে বিজিএমইএ বলছে, কমপক্ষে ৭০০-৮০০ শ্রমিক আসবেন। জানা যায়, গতকাল বিকেলে তোবা গ্রুপের কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান হোসেন মার্কেটের পেছনে কয়েকজন শ্রমিককে আজ বিজিএমইএতে বেতন নিতে যেতে বলেন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা তাঁকে ধাওয়া দেন। এ ছাড়া জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহারানে সুলতান বিকেলে বিজিএমইএর প্রস্তাব মেনে নিতে শ্রমিকদের বোঝাতে হোসেন মার্কেটে যান। তখন শ্রমিকেরা তাঁকে ‘বিজিএমইএর দালাল’ আখ্যা দিয়ে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। গত রোববারের সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেওয়া সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুল হাসান গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিক দোটানার মধ্যে থাকলেও অনেকেই মজুরি নিতে বিজিএমইএ কার্যালয়ে যাবেন।’ বিজিএমইএ ঘেরাও, পুলিশের লাঠিপেটা: বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তোবার কয়েকজন শ্রমিক ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তোবা গ্রুপ শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে মিছিল নিয়ে বিজিএমইএ ভবনের ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের মৃদু লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেয়। পরে আন্দোলনকারীরা ভবনের সামনের সড়কের ওপরই সমাবেশ করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন বক্তব্য ও স্লোগান দেন তাঁরা। সকাল থেকেই ওই এলাকায় দাঙ্গা গাড়ি, জলকামান ও বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। ঘটনাস্থল থেকে একটু দূরে র্যাবের সদস্যরাও তিন থেকে চারটিতে গাড়িতে সতর্ক পাহারায় ছিলেন। সমাবেশে শ্রমিক ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তোবার শ্রমিকদের তিন মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা ও ওভারটাইম একসঙ্গে পরিশোধ, দেলোয়ারের জামিন বাতিল ও সর্বোচ্চ শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবি জানান। একই সঙ্গে আজ দুপুরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে হরতাল-অবরোধ ও সারা দেশের সব পোশাক কারখানায় ধমর্ঘটের মতো কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন তাঁরা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন তোবার শ্রমিক মিরাজ। তিনি বলেন, ‘ভিক্ষার টাকা দিয়ে বিজিএমইএ চলে। আমরা চলি না। আমাদের পাওনা আমাদের কারখানায় গিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে। দাবি মানা না হলে আমরণ অনশন চলবে।’ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার বলেন, হাজার হাজার কোটি টাকা যখন ব্যাংক থেকে লোপাট হয়, তখন দেশের মন্ত্রীরা বলেন, এটা কোনো টাকা না। আর মাত্র সাড়ে চার কোটি টাকার জন্য শ্রমিকদের দিনের পর দিন অনশন করতে হয়। এটি শ্রমিকদের প্রতি উপহাস ছাড়া কিছু নয়। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন তোবার শ্রমিক সুমন, শিল্পী ও মর্জিনা, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি জহিরুল ইসলাম, শ্রমিকনেতা মাহবুবুর রহমান, শামীম হাসান, জলি তালুকদার, তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ। সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে ১৫টি শ্রমিক সংগঠন ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এ ছাড়া কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশন, নারী মুক্তি, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংহতি: তোবা গ্রুপের শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গতকাল প্রতীকী অনশন ও সংহতি সমাবেশ করে শিক্ষকেরা এই একাত্মতা জানান। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আহমেদ কামাল, এম এম আকাশ, শফিউজ্জামান, এ কে এম সাদ উদ্দিন, রমজুল হক, দোলায়ার হোসেন প্রমুখ। আহ্বায়ক হিসেবে সমাপনী বক্তব্য দেন অধ্যাপক আকমল হোসেন। এ ছাড়া সংহতি প্রকাশ করে আলাদা বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল) ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র।

No comments:

Post a Comment