Wednesday, August 13, 2014

গৃহবিবাদে টালমাটাল বগুড়া বিএনপি:প্রথম অালো

ফেসবুকের মাধ্যমে আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রস্তুত থাকতে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আহ্বান জানানোর পর দলের ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত বগুড়ায় দলটির সাংগঠনিক অবস্থা আরও স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রকট হচ্ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। উপজেলা নির্বাচনের পর মিত্র দল জামায়াতের সঙ্গেও তৈরি হয়েছে দূরত্ব। এ অবস্থায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হওয়া তো দূরের কথা, বরং গৃহবিবাদে টালমাটাল এখ
ানকার বিএনপি। জেলার ১২টি উপজেলা, ১২টি পৌরসভাসহ ২৪টি সাংগঠনিক কমিটির ২২টিতেই তীব্র কোন্দল রয়েছে। যদিও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তারেক রহমানের সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া বগুড়া বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাপটে অন্য দলগুলো ছিল কোণঠাসা। সাত বছরের মাথায় এখনকার চিত্র ঠিক বিপরীত। আন্দোলনের জন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে ফেসবুকে তারেকের আহ্বানের পর সারিয়াকান্দি উপজেলা কমিটি ভেঙে দিয়েছে জেলা কমিটি। প্রতিবাদে নেতা-কর্মীরা জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশসহ তাঁর কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন। যদিও সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, দলে কোনো কোন্দল নেই। বড় দল হিসেবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবেই। সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হলে এটা থাকবে না। আর জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জামায়াত এখনো বিএনপির জোটেই রয়েছে। গত উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে তাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের কিছুটা অবনতি ঘটেছে। এটা কেটে যাবে।’ সাইফুল ইসলাম গত মে মাসের শেষ দিকে লন্ডনে যান। স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাঁর লন্ডনে যাওয়ার কথা প্রচারও করেন তিনি। সেখানে ১০ দিন অবস্থান করেন। এ সময়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে তারেক রহমানের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে তা ফেসবুকেও ছড়িয়ে দেন। এভাবে দলে অবস্থান আরও পোক্ত করার চেষ্টা করা হয়। এর পর থেকে তাঁর অনুসারীরা প্রচার শুরু করেন যে তারেক রহমানের সঙ্গে সাইফুলের বগুড়া জেলা বিএনপির পরবর্তী সম্মেলন নিয়ে কথা হয়েছে। বর্তমান সাধারণ সম্পাদককে বাদ দেওয়া হবে। এ নিয়ে জেলা বিএনপিতে অস্থিরতা আরও বেড়েছে। অবশ্য সাইফুল ইসলাম বলেন, তারেক রহমানের সঙ্গে বগুড়া জেলা বিএনপির পরবর্তী সম্মেলন বা কমিটি নিয়ে কোনো কথা হয়নি। দলীয় সূত্রগুলো জানায়, জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলামের দাপটের কাছে অন্য নেতারা কোণঠাসা। তাঁর বিরুদ্ধে জামায়াতপ্রীতির অভিযোগও আছে। এ নিয়ে দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে সাইফুল ইসলামের মুখ দেখাদেখি বন্ধ ছিল কয়েক মাস। জেলা সভাপতির পক্ষে-বিপক্ষে দুই ভাগে বিভক্ত গাবতলী উপজেলা বিএনপি। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মিছিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে গত বছরের ২৭ অক্টোবর নেপালতলী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য শাহজাহান আলী নিহত হন। তিনি জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলামের ফুফাতো ভাই। এ উপজেলায় জেলা সভাপতির পক্ষে দলের একাংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাহেদুল ইসলাম। অপর অংশের নেতৃত্বে গাবতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিল্টন। মোরশেদ মিল্টন বলেন, তিন বছর আগে সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা কমিটি হলেও জেলা সভাপতির কারণে অনুমোদন হয়নি। তাঁর অভিযোগ, জেলা সভাপতি দলের বিভেদ উসকে দিয়েছেন। গত উপজেলা নির্বাচনে তাঁর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ দিয়েছিলেন। একইভাবে নন্দীগ্রাম উপজেলা ও পৌর বিএনপিতেও জেলা সভাপতির পক্ষে-বিপক্ষে দুটি ধারা রয়েছে। এ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘দলে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না, জেলা নেতাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় দল চলে। এভাবে রাজনীতি করা যায় না।’ কোন্দল রয়েছে বগুড়া সদর, ধুনট, কাহালু, শাজাহানপুর, আদমদীঘি, শিবগঞ্জ উপজেলা কমিটিতেও। ভেঙে দেওয়া হয়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলা কমিটি। কমিটির সভাপতি কাজী এরফানুরের অভিযোগ, জেলা সভাপতির একক ইচ্ছায় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, কোনো কোনো উপজেলায় দলে সমস্যা রয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা কমিটি ভেঙে দেওয়ার আগে বিষয়টি জেলা কমিটির কোনো সভায় আলোচনা হয়নি। জামায়াতকে ছাড়াই বিএনপির নেতা-কর্মীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।

No comments:

Post a Comment