Tuesday, August 12, 2014

অনুমোদনের ছয় বছরেও শুরু হয়নি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প:নয়াদিগন্ত

গুচ্ছগ্রাম বা ইকোভিলেজ প্রকল্প অনুমোদনের পর ছয় বছর পার হতে যাচ্ছে; কিন্তু আজো কাজ শুরু করতে পারেনি ভূমি মন্ত্রণালয়। ১৮৭ কোটি ২৯ লাখ আট হাজার টাকা ব্যয়ে ২০০৯ সালের মার্চে গুচ্ছগ্রাম নামে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) থেকে অনুমোদন দেয়া হলেও প্রকল্পটি শুরুই হয়নি ছয় বছরে। ছয় বছর পরে এসে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্প ব্যয় একই রাখা হলেও গুচ্ছগ্রামের সংখ্যা ১০টি কমিয়ে ২
৫২টি করা হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা যায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার ১০ হাজার ৬৫০টি ভূমিহীন, গৃহহীন, ঠিকানাহীন ও নদীভাঙা পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয় ২০০৯ সালে। কথা ছিল প্রতি পরিবারকে সর্বনি¤œ চার শতাংশ বসতভিটার জমির নামজারি ও কবুলিয়ত প্রদান করা হবে। আর জাপান সরকারের ঋণের সুদ মওকুফের তহবিল বা জেডিসিএফের ১৮৭ কোটি ২৯ লাখ আট হাজার টাকা অর্থায়নে ভূমি মন্ত্রণালয় দেশের তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া বাকি সব জেলায় কাইমেট ভিকটিমস রিহ্যারিলিটেশন প্রকল্প নামে একই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। দারিদ্র্যবিমোচন ও নারীর অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং বিধবাদের ক্ষেত্রে বসতভিটাসহ একক নামে ও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের নামে কবুলিয়ত দলিল প্রদান করা হবে। জানা যায়, বাংলাদেশ প্রধানত প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রতি বছর বন্যা, সাইকোন, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙনের শিকার হয়ে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ নভেম্বর নোয়াখালী জেলার রামগতি থানায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারি খাসজমিতে পুনর্বাসনকার্যক্রম উদ্বোধন করেন। তারই আলোকে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলায় চারটি গুচ্ছগ্রামে ১৪৭০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। ১৯৮৮ সালে এই প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে আদর্শ গ্রাম নামে ভূমিহীনদের পুনর্বাসন কাজ অব্যাহত থাকে। আদর্শ গ্রাম-১ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৮৮ সালের জুলাই থেকে ১৯৯৮ সালের জুন পর্যন্ত ১০ বছরে এক হাজার ৮০টি আদর্শ গ্রামে ৪৫ হাজার ৬৪৭টি পরিবারকে এবং আদর্শ গ্রাম-১ প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৯৮ সালের জুলাই থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ বছর ছয় মাসে ২৫ হাজার ৩৮৫টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। এ ছাড়া আদর্শ গ্রাম-২ প্রকল্পের অধীনে কয়েক হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করার উপযোগী প্রয়োজনীয় সাইট প্রস্তুতকৃতাবস্থায় আছে। ২০০৭ সালের নভেম্বরে প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডর দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচণ্ড আঘাত আনে। এতে ৩৬টি জেলার লক্ষাধিক মানুষের জানমাল ও বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো গৃহহীন মানুষকে গৃহসংস্থান এবং কর্মসংস্থান করে মূল উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা। প্রকল্পের আওতায় দুই প্রকারের ঘর নির্মাণ করা হবে। প্রথমত আরসিসি পিলার দিয়ে দুই কক্ষবিশিষ্ট ৩ শ’ বর্গফুট মেঝের ঘর ও পাঁচ রিংবিশিষ্ট স্যানিটারি ল্যাট্রিন। অপরটি প্রতি দুই পরিবারের জন্য ২৯৪ বর্গফুটবিশিষ্ট একচালা সেমিপাকা টুইনওয়ান হাউজ নির্মাণ। পুনর্বাসিত পরিবারের মধ্যে বিআরডিবি, যুব উন্নয়ন, বিএআরডি, আরএডি এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা  করা। প্রতিটি ইকোভিলেজ এ প্রশিক্ষণ ও আয়বর্ধন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অন্তত একটি করে মোট ২৫২টি মাল্টিপারপাস হল নির্মাণ করা হবে। তা ছাড়া আদর্শ গ্রাম-২ প্রকল্পের আওতায় বিআরডিবিকে ুদ্র ঋণকার্যক্রমের জন্য ৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মূলত দারিদ্র্যপ্রবল এলাকায় এবং যেখানে বন্দোবস্তযোগ্য সরকারি খাসজমি পাওয়া গেছে সেখানেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। আর এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের দারিদ্র্যবৈষম্য হ্রাস পাবে। আগামী ২০১৫ সাল নাগাদ এই প্রকল্পটি সমাপ্ত করা হবে। আদর্শ গ্রাম-২ প্রকল্পে ঘর নির্মাণের জন্য ব্যয় হয়েছিল ১৬৬ কোটি ২৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা এবং প্রকল্প-১ এর ব্যয় ৮৮ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, দাতাদের শর্তের কারণেই প্রকল্পের নামের সাথে কাইমেট শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। মূলত এটা আদর্শ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মতোই। জমি না পাওয়ার কারণেই প্রকল্পটি এত দিন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আগামী ২০১৫ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি আজ আবার অনুমোদনের জন্য একনেকে পেশ করা হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment