ফিলিস্তিনের গাজায় জাতিসঙ্ঘ নিয়ন্ত্রিত স্কুলে হামলার পর বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দার পর একতরফা অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে ইসরাইল। তবে অস্ত্রবিরতি শুরু না হতেই তা ভঙ্গ করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে এক শিশু নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে। এর আগে সোমবার ভোরে ইসরাইলি হামলায় ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। নিহতদের বেশির ভাগ বেসামরিক নাগরিক। ইসরাইলের বর্বর হামলায় এ নিয়ে এক হাজার ৮২২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০
০ জন শিশু যাদের বয়স ১২ বছরের নিচে। আর আহত হয়েছেন ৯ হাজারের বেশি মানুষ। অন্য দিকে হামাসের পাল্টা আক্রমণে ইসরাইলের ৬৪ জন সেনা ও দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে স্বীকার করেছে ইসরাইল। তবে হামাস বলছে, তারা দেড় শতাধিক ইসরাইলি সেনাকে হত্যা করেছে। এ দিকে গাজা থেকে স্থলসেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে ইসরাইল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, রাফা ও গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গগুলোর বেশির ভাগই ধ্বংসের পর রোববারই ইসরাইলি সেনাদের একটি বড় অংশ নিজেদের সাঁজোয়া বহর নিয়ে নিজেদের ভূখণ্ডের দিকে রওনা হয়েছে। তবে সেনা প্রত্যাহারের সংবাদে হামাস কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। এ দিকে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনকে সহায়তা করতে ইরান পুরোপুরি প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির ইসলামিক রেভুলিউশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি) কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলি জাফরি। খবর এএফপি, আলজাজিরা, প্রেস টিভি ও বিবিসির। অস্ত্রবিরতি শুরু না হতেই ইসরাইলের হামলা : ঘোষিত সাত ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি শুরু হতে না হতেই তা ভঙ্গ করে গাজায় হামলা করেছে ইসরাইল। গাজার একটি বাড়িতে শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। অন্য এলাকাতেও গুলিবর্ষণ করেছে ইসরাইলি সেনারা। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, শাতি উদ্বাস্তু ক্যাম্পে গতকালের ওই হামলায় এক শিশু নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৩০ জন। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলে ভয়াবহ হামলার পর বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিবাদের মুখে ইসরাইল গাজার কিছু অংশে একতরফা সাত ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত ওই স্কুলে ইসরাইলের হামলায় ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয় যারা ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিল। তবে এই অস্ত্রবিরতি রাফাহ শহরে কার্যকর হবে না হবে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা। একই সাথে এ অস্ত্রবিরতি ভঙ্গ করা হলে আবার বেসামরিক নাগরিক ও হামাসের সদস্যদের ওপর হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। গাজার দণিাঞ্চলের খান ইউনুসের আবসান আল কাবরিয়া ও আবসান আল সাগহিরা গ্রাম দু’টিতে সোমবার অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ায় ওই এলাকার বাসিন্দারা বাড়িতে ফিরতে পারবে বলেও জানিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ইসরাইলের এই অস্ত্রবিরতির ঘোষণায় আস্থা রাখতে পারছে না হামাস। হামাসের মুখপাত্র আবু জুহুরি গাজার বাসিন্দাদের সাবধানে চলাচল করার পরামর্শ দিয়েছেন। ইসরাইলি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বিশ্বের নজর সরিয়ে নিতে একতরফা এ অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আবু জুহুরি। এ দিকে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিরা কায়রোতে অস্ত্রবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ইসরাইলের মন্ত্রিপরিষদ কায়রোতে কোনো প্রতিনিধি না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভোর না হতেই গাজায় ইসরাইলি হামলায় ১০ ফিলিস্তিনি নিহত : গাজা উপত্যকায় সোমবার ভোরে ইসরাইলি হামলায় ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের বেশির ভাগ বেসামরিক নাগরিক। খবর এএফপির। গাজার জরুরি সেবা বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা জানান, গতকাল ভোর হতে না হতে ইসরাইলের হামলায় জাবালিয়ায় পাঁচজন, জিতুন ও শেখ রাদওয়ানে তিনজন এবং নুসিরাত ও রাফায় দু’জন নিহত হয়েছেন। স্কুলে হামলা অপরাধ : জাতিসঙ্ঘ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলে ইসরাইলের আকাশপথে হামলাকে ‘অপরাধ’ বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। অন্য দিকে, আকাশপথে স্কুলে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হওয়ার পর ইসরাইলের তীব্র সমালোচনা করেছে জাতিসঙ্ঘ। জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলে হামলার পর সংস্থাটির মহাসচিব বান কি মুন ইসরাইলের সমালোচনা করে বলেন, জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলে হামলা ‘নৈতিকতার স্খলন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ তিনি বলেন, স্কুলে ইসরাইলের হামলার ঘটনা মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র জেন সাকি জানান, জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলে ইসরাইলের বোমা হামলার ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। জাতিসঙ্ঘের সমালোচনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তুষ্টি প্রকাশের পর পরই ইসরাইল গতকাল গাজায় সাত ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজায় জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত স্কুলে হামলার ব্যাখ্যা দিয়ে জানায়, রোববার স্কুলের কাছে তিন ইসলামি জঙ্গি মোটরসাইকেলে অবস্থান করছিল। কিন্তু কেউ হতাহতের খবর জানায়নি। ইসরাইল সরকারের মুখপাত্র মার্ক রিজেভ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সামরিক এলাকার কাছে যদি কোনো স্কুল থেকে থাকে, তাহলে সেটিও যুদ্ধেেত্রর আওতাভুক্ত ধরা হবে। এ দিকে মিসরে অবস্থানরত হামাস প্রতিনিধি আবু জুহুরি আল-আকসা টেলিভিশনকে বলেন, ইসরাইল তাদের ধ্বংসলীলা ধামাচাপা দিতে একতরফা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। তিনি বলেন, ইসরাইলের কথা আস্থায় না আনতে আমরা গাজাবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি। গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নিচ্ছে ইসরাইল : গাজা উপত্যকায় হামলার ২৮তম দিনে স্থলপথ থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে ইসরাইল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, রাফা ও গাজায় হামাসের সুড়ঙ্গগুলোর বেশির ভাগই ধ্বংসের পর রোববারই ইসরাইলি সেনাদের একটি বড় অংশ নিজেদের সাঁজোয়া বহর নিয়ে নিজেদের ভূখণ্ডের দিকে রওনা হয়েছে। সেনা প্রত্যাহারের কাজ শুরু করলেও সোমবার সকালের রকেট হামলায় নিহত হয়েছে কমপে ১৩ জন। সেনা প্রত্যাহারের সংবাদে হামাস কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। বরং তারা ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। হামাসের অন্যতম মুখপাত্র ফাওজি বারহুম বলেছেন, ‘গাজায় গণহত্যা চালাতে গিয়ে প্রকৃত সঙ্কটে পড়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দিন দিন নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধ নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। যুদ্ধ শেষ হলে নেতানিয়াহু আসল সঙ্কটের মুখে পড়বেন।’ ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করতে পুরোপুরি প্রস্তুত ইরান : ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনকে সহায়তা করতে ইরান পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির ইসলামিক রেভুলিউশনারি গার্ডস কর্পস (আইআরজিসি) কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলি জাফরি। গতকাল তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলনকে বিভিন্নভাবে সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত। মুসলমানদের রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা শিয়া-সুন্নি পার্থক্য করি না। তিনি আরো বলেন, গাজার সংঘর্ষ প্রমাণ করেছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধশক্তি শেষ হওয়ার নয় এবং এটা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ইসরাইলের অভ্যন্তরে যে সংখ্যক রকেট ছোড়া হয়েছে এবং ইসরাইলি সেনাদের স্থল অভিযান যেভাবে মোকাবেলা করা হয়েছে, তাতে বোঝা যায় ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ শক্তি বাড়ছে। মেজর জেনারেল জাফরি আরো বলেন, গাজা উপত্যকা ও ইরাকে যা ঘটছে তার জন্য মার্কিন-ইসরাইল নীতিই দায়ী। তিনি বলেন, শিয়া-সুন্নি ঐক্যের মাধ্যমে জায়নবাদী ইসরাইলের শিগগিরই পতন হবে। সেই দিনটির জন্য আমরা প্রস্তুত।
No comments:
Post a Comment