ানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। বৈঠক সূত্র জানায়, একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অব্যাহত জোরালো সহযোগিতার মাধ্যমে জাপান নিজেকে পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে প্রমাণ করেছে। জাপান ও জাপানের জনগণের অকুণ্ঠ সহযোগিতার কথা বিবেচনা করেই বাংলাদেশ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ এর আগে দুবার (১৯৭৯-৮০ ও ২০০০-২০০১ সাল) নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। এবার ২০১৬-১৭ মেয়াদের জন্য প্রার্থী হয়েছিল। দুই দিনের সফরে গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকায় আসেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিনজো আবে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকে তিনি ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে শিনজো আবে রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আয়োজিত জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দেন। শীর্ষ বৈঠক শেষে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর হোটেল স্যুটে প্রথমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং পরে সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন শিনজো আবে। গতকাল বিকেলে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে দুই প্রধানমন্ত্রী প্রথমে একান্তে ১৫ মিনিট আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টার আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এরপর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন দুই প্রধানমন্ত্রী। শুরুতে তাঁরা যৌথ ঘোষণায় সই করেন। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে যে দুটি ব্যাঘ্রশাবক দেওয়া হবে, সেগুলোর ছবির অ্যালবাম শিনজো আবের হাতে তুলে দেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে শিনজো আবে জাপানে তৈরি দুই দেশের মুদ্রাসংবলিত একটি স্মারক শেখ হাসিনাকে উপহার দেন। ওই স্মারকে বাংলাদেশের মুদ্রার এক পিঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দুই প্রধানমন্ত্রী। তবে এতে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে সমন্বিত অংশীদারত্ব কর্মসূচি ও বিগ-বি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কয়েক বছর আগে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ২০১৬-১৭ মেয়াদের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য আমরা নতুন করে প্রার্থিতা ঘোষণা করি। ২০১১ সালে আমাদের দীর্ঘদিনের অকৃত্রিম বন্ধু জাপানও একই গ্রুপ থেকে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করে। দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং গোষ্ঠীসংহতি বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন বহুপক্ষীয় ফোরামে আমরা তখন থেকেই পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’ মুক্তিযুদ্ধে জাপান সরকার এবং সে দেশের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহমর্মিতা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জাপানের অব্যাহত ও বলিষ্ঠ সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গোষ্ঠীসংহতি ও ঐক্যের স্বার্থে আমি এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপ থেকে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী পদে জাপানের প্রার্থিতার পক্ষে বাংলাদেশের সমর্থন ঘোষণা করছি। একই সঙ্গে জাপানের পক্ষে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিচ্ছি।’ প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি দেশ স্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে। আর নিরাপত্তা পরিষদের ১০টি অস্থায়ী পদে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দুই বছর পর পর বিভিন্ন দেশ নির্বাচিত হয়। শিনজো আবে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক যখন নতুন পর্যায়ে উন্নীত হতে যাচ্ছে, সে সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত এ সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি একে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ মোড়’ বলে অভিহিত করেন। বঙ্গোপসাগরীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য আগামী পাঁচ বছরে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সহায়তার আওতায় ইতিমধ্যে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ইয়েন দেওয়া হয়েছে। এ সহযোগিতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগ। শিনজো আবে বলেন, এ সহযোগিতা দুই দেশের পারস্পরিক সুফলের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের চেষ্টা চালাবে জাপান। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে আগামী বছরের শুরুতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে এ বছরে একটি বৈঠক করার ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় জাপান-বাংলাদেশ সমন্বিত অংশীদারত্ব ঘোষণা করেছিলাম। আজকের আলোচনায় আমরা এই অংশীদারত্ব আরও এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছি।’ যৌথ ঘোষণা: বৈঠক শেষে দেওয়া যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে শিনজো আবের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিনজো আবে উল্লেখ করেন, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন, প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নিশ্চিত, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শ্রমিকের জোগান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেবার মান বাড়ানোর ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এ ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা। তিনি জাপানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে উৎসবিধি শিথিল করার পরামর্শ দেন। বিগ-বি উদ্যোগের আওতায় দুই প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নসহ নগর উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতের বিকাশে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অর্থনৈতিক অবকাঠামো, বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নয়ন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে বিগ-বি উদ্যোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য জাপানের উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পারস্পরিক সুফল লাভের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। দুই প্রধানমন্ত্রী সামুদ্রিক সম্পদ টেকসই উপায়ে ব্যবহারেও সম্মত হয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে ব্লু ইকোনমি বা সাগর অর্থনীতির বিকাশে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলা হয়। শিনজো আবে দুই দিনের সফর শেষে আজ সকালে ঢাকা থেকে কলম্বো যাবেন।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Sunday, September 7, 2014
বন্ধুতার জন্য ত্যাগ:প্রথম অালো
ানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। বৈঠক সূত্র জানায়, একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর থেকেই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অব্যাহত জোরালো সহযোগিতার মাধ্যমে জাপান নিজেকে পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে প্রমাণ করেছে। জাপান ও জাপানের জনগণের অকুণ্ঠ সহযোগিতার কথা বিবেচনা করেই বাংলাদেশ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ এর আগে দুবার (১৯৭৯-৮০ ও ২০০০-২০০১ সাল) নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল। এবার ২০১৬-১৭ মেয়াদের জন্য প্রার্থী হয়েছিল। দুই দিনের সফরে গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকায় আসেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিনজো আবে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকে তিনি ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে শিনজো আবে রাজধানীর একটি হোটেলে দুই দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আয়োজিত জাপান-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে যোগ দেন। শীর্ষ বৈঠক শেষে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর হোটেল স্যুটে প্রথমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং পরে সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন শিনজো আবে। গতকাল বিকেলে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে দুই প্রধানমন্ত্রী প্রথমে একান্তে ১৫ মিনিট আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টার আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এরপর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন দুই প্রধানমন্ত্রী। শুরুতে তাঁরা যৌথ ঘোষণায় সই করেন। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে যে দুটি ব্যাঘ্রশাবক দেওয়া হবে, সেগুলোর ছবির অ্যালবাম শিনজো আবের হাতে তুলে দেন শেখ হাসিনা। অন্যদিকে শিনজো আবে জাপানে তৈরি দুই দেশের মুদ্রাসংবলিত একটি স্মারক শেখ হাসিনাকে উপহার দেন। ওই স্মারকে বাংলাদেশের মুদ্রার এক পিঠে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান দুই প্রধানমন্ত্রী। তবে এতে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে সমন্বিত অংশীদারত্ব কর্মসূচি ও বিগ-বি উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কয়েক বছর আগে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে ২০১৬-১৭ মেয়াদের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদের জন্য আমরা নতুন করে প্রার্থিতা ঘোষণা করি। ২০১১ সালে আমাদের দীর্ঘদিনের অকৃত্রিম বন্ধু জাপানও একই গ্রুপ থেকে তাদের প্রার্থিতা ঘোষণা করে। দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং গোষ্ঠীসংহতি বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন বহুপক্ষীয় ফোরামে আমরা তখন থেকেই পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’ মুক্তিযুদ্ধে জাপান সরকার এবং সে দেশের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহমর্মিতা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জাপানের অব্যাহত ও বলিষ্ঠ সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গোষ্ঠীসংহতি ও ঐক্যের স্বার্থে আমি এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপ থেকে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী পদে জাপানের প্রার্থিতার পক্ষে বাংলাদেশের সমর্থন ঘোষণা করছি। একই সঙ্গে জাপানের পক্ষে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিচ্ছি।’ প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাঁচটি দেশ স্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করে। আর নিরাপত্তা পরিষদের ১০টি অস্থায়ী পদে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দুই বছর পর পর বিভিন্ন দেশ নির্বাচিত হয়। শিনজো আবে বাংলাদেশের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক যখন নতুন পর্যায়ে উন্নীত হতে যাচ্ছে, সে সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত এ সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি একে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ মোড়’ বলে অভিহিত করেন। বঙ্গোপসাগরীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য আগামী পাঁচ বছরে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সহায়তার আওতায় ইতিমধ্যে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ইয়েন দেওয়া হয়েছে। এ সহযোগিতার মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগ। শিনজো আবে বলেন, এ সহযোগিতা দুই দেশের পারস্পরিক সুফলের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে এই অঞ্চলের জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে। বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের চেষ্টা চালাবে জাপান। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে আগামী বছরের শুরুতে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক এবং পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে এ বছরে একটি বৈঠক করার ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় জাপান-বাংলাদেশ সমন্বিত অংশীদারত্ব ঘোষণা করেছিলাম। আজকের আলোচনায় আমরা এই অংশীদারত্ব আরও এগিয়ে নিতে সম্মত হয়েছি।’ যৌথ ঘোষণা: বৈঠক শেষে দেওয়া যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে শিনজো আবের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিনজো আবে উল্লেখ করেন, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচন, প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নিশ্চিত, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শ্রমিকের জোগান গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেবার মান বাড়ানোর ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এ ব্যাপারে যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন শেখ হাসিনা। তিনি জাপানে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে উৎসবিধি শিথিল করার পরামর্শ দেন। বিগ-বি উদ্যোগের আওতায় দুই প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নসহ নগর উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতের বিকাশে একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অর্থনৈতিক অবকাঠামো, বিনিয়োগের পরিবেশের উন্নয়ন ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ককে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে বিগ-বি উদ্যোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য জাপানের উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পারস্পরিক সুফল লাভের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। দুই প্রধানমন্ত্রী সামুদ্রিক সম্পদ টেকসই উপায়ে ব্যবহারেও সম্মত হয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে ব্লু ইকোনমি বা সাগর অর্থনীতির বিকাশে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলা হয়। শিনজো আবে দুই দিনের সফর শেষে আজ সকালে ঢাকা থেকে কলম্বো যাবেন।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment