তিস্তার পানি বণ্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তিসহ বাংলাদেশের সঙ্গে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বাস দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জবাবে শেখ হাসিনাও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন যে বাংলাদেশের মাটি ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার হতে দেবেন না। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে থাকা দুই সরকারপ্রধান গতকাল শনিবার প্রথম বৈঠক করলেন। নিউ ইয়র
্ক প্যালেস হোটেলের কেনেডি রুমে প্রায় ১৫ মিনিট এই বৈঠক হয়। আলোচনায় সন্ত্রাস মোকাবিলায় দুই নেতা একসঙ্গে কাজ করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আন্তরিকতার সঙ্গে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান নরেন্দ্র মোদি। এগিয়ে এসে হিন্দিতে সেই একই কথা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বানায়া, উসকো লাড়কি হাসিনা মে দেশ বাঁচায়া (বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ বানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বাঁচিয়েছেন)।’ বৈঠকের পর লবিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের এই কথা জানান। সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী নয়াদিল্লি সফরে গেলে তাঁকেও একই কথা বলেছিলেন চার মাস আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া মোদি। গতকাল বৈঠকের পরপরই প্যালেস হোটেলে ভারতের মিডিয়াগুলোর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মাটি ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া হবে না। এদিকে পরে হাসিনা-মোদির বেঠক নিয়ে হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে দুই প্রধানমন্ত্রীর। নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলে থাকছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকছেন গ্র্যান্ড হায়াৎ হোটেলে। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, অত্যন্ত খুশি মনে দুই নেতা কথা বলেন। আলোচনার পরিবেশ ছিল উষ্ণ, খোলামেলা ও উদারমনা। আর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বলেন, মনেই হয়নি এটি ছিল দুই নেতার প্রথম বৈঠক। বৈঠকে আঞ্চলিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের ওপর জোর দেন দুই প্রধানমন্ত্রী। মোদি বলেন, ‘সবকো সাথা লেকে উন্নয়ন করনা হ্যায়।’ তিস্তার পানি বণ্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তি প্রসঙ্গ তোলেন শেখ হাসিনা। জবাবে মোদি বলেন, ‘সমাধানের একটি উপায় খুঁজছি।’ শেখ হাসিনা নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি স্থল যোগাযোগের অন্তরায়গুলো তুলে নিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাইলে মোদি ইতিবাচক সাড়া দেন। মোদিকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। জবাবে মোদি বলেন, ‘প্রথম সুযোগেই ঢাকা যাব’। শেখ হাসিনাকেও দিল্লি সফরে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান তিনি। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করতে দুই নেতা একমত হন। হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির কট্টর নেতা হিসেবে পরিচিত মোদি ভারতের ক্ষমতায় যাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্কের বার্তাই দিচ্ছেন। কংগ্রেসকে হটিয়ে বিজেপি ভারতে সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টির যে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, এর মধ্য দিয়ে তা নাকচ হয়ে যায়। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু বিদেশে থাকায় সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিতে পারেননি শেখ হাসিনা।
No comments:
Post a Comment