দিবস পালন ছাড়া রংপুরে সরকারি দল আওয়ামী লীগের তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। দলের একটি অংশ যাঁরা জেলা ও শহর কমিটির নেতৃত্বে আছেন, তাঁরা মনে করেন, রংপুর নিয়ে তাঁদের বিশেষ কিছু ভাবার বা করার নেই। কারণ, এখানে দলের নেত্রী খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা। উপরন্তু তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আছেন। এলাকার উন্নয়নের বিষয়টি তাঁরাই ভাববেন। অবশ্য দলটির অন্য একটি অংশ মনে করে, এমন গা-ছাড়াভাবে চললে তা ভবিষ্যতের
জন্য মঙ্গলজনক হবে না। তার প্রমাণও মিলেছে গত সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাচনে। সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী কোনো প্রতিদ্বিন্দ্বতাই গড়তে পারেননি। আর, আটটি উপজেলার মধ্যে পাঁচটিতেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরেছেন। এর মধ্যে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদীয় আসন (পরে উপনির্বাচনে স্পিকার শিরীন শারমিন সাংসদ হন) পীরগঞ্জে এবং আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের সাংসদ টিপু মু্নশীর আসনের দুই উপজেলা পীরগাছা ও কাউনিয়ায় বিএনপির প্রার্থী এবং মিঠাপুকুর উপজেলায় জামায়াতের প্রার্থী জিতেছেন। এটাকে দলের ভবিষ্যতের জন্য সতর্কসংকেত বলেও মনে করেন কোনো কোনো নেতা। অবশ্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা দাবি করেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থানীয় নেতৃত্ব যথাযথভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারলে পরিস্থিতি এ রকম হতো না। আর সামাজিক সমস্যা, বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে যদি গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা যেত, তাহলে সিটি করপোরেশনে অন্তত ২০ হাজার ভোট বাড়ত বলে এসব নেতা মনে করেন। এ ছাড়া দলের যে চারজন সাংসদ আছেন, তাঁরা বেশির ভাগ সময় ঢাকাতে পড়ে থাকেন। রংপুরের লোক তাঁদের প্রয়োজনে সাংসদদের পান না বলে তাঁরা জানান। রংপুর জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোনো বিরোধ না থাকলেও নেপথ্যে একটি গোপন স্রোত রয়ে গেছে। দলের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। এর মেয়াদ ছিল দুই বছর। নেতা-কর্মীদের দ্বন্দ্বের কারণে এরপর আর সম্মেলন হয়নি। ১০ বছর পর ২০০৭ সালে টাউন হলে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিল, দুই পক্ষের বাদানুবাদে তা পণ্ড হয়ে যায়। পরে সম্মেলন ছাড়াই ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি আবুল মনসুর আহমেদকে সভাপতি ও রেজাউল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে রংপুর জেলা কমিটি ঘোষণা করে। এরপর ২০১২ সালে সাফিউর রহমানকে সভাপতি ও তুষার কান্তি মণ্ডলকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর কমিটি ঘোষণা করে। তখন অনেকেই এই কমিটি মানতে পারেননি। বিকল্প কমিটিও করেছিল। পরে একটা সময়ে সেই বিরোধ প্রকাশ্যে মিটে গেলেও তার রেশ গোপনে রয়ে গেছে। রংপুর শহরের বেতপট্টিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়। সেখানে নেতা-কর্মীদের নিয়মিত যাতায়াত আছে। গত রোববার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম (রাজু) ও নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডলসহ আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকদ্বয়ের দীর্ঘ আলাপ হয়। তাঁরা দাবি করেন, রংপুরে দলটিতে এখন আর কোনো অভ্যন্তরীণ বিরোধ নেই। সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বিভাগ বাস্তবায়ন, পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করা, শহরে চার লেনের সড়ক নির্মাণসহ অনেক বড় বড় কাজ হয়েছে। ‘তবে মানুষ স্বভাবতই অতৃপ্তআত্মা। সে কারণে অতৃপ্তি থেকেই যায়’ বলে মন্তব্য করেছেন রেজাউল করিম। এ ছাড়া গ্যাসের জন্য আন্দোলন হচ্ছে। মাদকের ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা রাখার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনকে চাপে রাখা হয়েছে। যতটা বলা হচ্ছে এখানে মাদকের বিস্তার ততটা ব্যাপক নয় বলেও দাবি করেন দলটির জেলা ও নগর কমিটির দুই সাধারণ সম্পাদক। তাঁরা বলেন, জোটের রাজনীতির কারণে সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে রংপুর সদর আসনসহ অনেক আসন শরিকদের ছেড়ে দিতে হয়। এর ফলে দৃশ্যত মনে হয় রংপুরে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে আছে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনাটি তা নয়। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা দুর্বলতা ছিল, অনেক জায়গায় উপযুক্ত প্রার্থীও পাওয়া যায়নি। সে কারণে পাঁচটি উপজেলায় দলের প্রার্থীরা হেরেছেন বলে তাঁরা মনে করেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর ছেলে যেহেতু রংপুর নিয়ে ভাবছেন, তাই আমাদের বিশেষ কিছু করার নেই। রংপুর আওয়ামী লীগের উর্বর এলাকা। দলের নেত্রী রংপুরে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে সন্তুষ্ট।’
No comments:
Post a Comment