Tuesday, September 16, 2014

‘বন্দুকযুদ্ধে’ ট্রিপল মার্ডারের আসামি কালা বাবু নিহত:নয়াদিগন্ত

রাজধানীর মগবাজারের চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের প্রধান আসামি কালা বাবু মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। তার দুই সঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। এ দিকে কালা বাবুর স্ত্রী বলেছেন, তার স্বামীকে তিনি কবুতর ব্যবসায়ী হিসেবে চিনতেন। তার স্বামী যে কালা বাবু হিসেবে পরিচিত তা জানা ছিল না তার। তার স্ত্রী বলেছেন, তার স্বামীকে গত রোববার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকায় তাদের ভাড়া বাসা থেকে তুলে আনা হয়ে
ছে। মহানগর পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিএমপির গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের (দক্ষিণ) একটি দল রমনার মগবাজার বেপারী গলিতে কিছু সন্ত্রাসী অস্ত্র নিয়ে জড়ো হচ্ছে বলে জানতে পেরে সেখানে অভিযান চালায়। গতকাল সোমবার ভোর রাত আনুমানিক পৌনে ৪টায় ওই দল মগবাজার বেপারী গলিতে উপস্থিত হলে সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। পুলিশ জানায়, একজন সন্ত্রাসী সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশ ধাওয়া করে অন্য সন্ত্রাসীদের মধ্যে রাজিব হাসান (২৭) ও আল আমিন (৩১) নামে দু’জনকে ধরতে পারলেও চার-পাঁচজন সন্ত্রাসী গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। রমনা থানা পুলিশের সহায়তায় গুলিবিদ্ধ সন্ত্রাসীকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ  হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, তিন রাউন্ড পিস্তলের গুলি, সাত রাউন্ড পিস্তলের গুলির খোসা, আট রাউন্ড বন্দুক-শটগানের গুলির খোসা ও একটি চাপাতি উদ্ধার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসীরা জানায়, গুলিবিদ্ধ সন্ত্রাসীর নাম শাহ আলম ওরফে কাইল্যা বাবু ওরফে কাবলি বাবু (২৫) মগবাজার সোনালীবাগের ট্রিপল হত্যাকাণ্ড, টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে কর্তব্যরত আনসার সদস্য আ: আলী (৩৫) হত্যা মামলা ও চাঁদার জন্য করতোয়ার মালিককে গুলি করে গুরুতর আহত করার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত। এ ছাড়াও ঢাকা শহরের বিভিন্ন থানায় তার নামে মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসী আল আমিন উল্লিখিত আনসার সদস্য হত্যা মামলার আসামি। গ্রেফতারকৃত রাজিব পুরান ঢাকার সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। পুলিশ জানায়, কালা বাবুর বাবার নাম মোবারক হোসেন খন্দকার ওরফে বাদল। বাসা মগবাজারের ৭৮ সোনালীবাগে। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানায়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ভোরে কালা বাবুকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর তার লাশ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এ দিকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত কালা বাবুর সন্ধানে তার কোনো স্বজন হাসপাতালে যাননি। বিকেল সাড়ে ৩টায় মরিয়ম (২২) নামে এক তরুণী হাসপাতালে গিয়ে কালা বাবুকে তার স্বামী বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার বারুতি গ্রামে। বাবা শাহাবুদ্দিন। ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা তারা। বাবার বাড়ির পাশেই তারা ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তিন বছর আগে প্রেম করে তাদের বিয়ে হয়। তাহসিন নামে তাদের দুই বছরের একটি ছেলে রয়েছে। মরিয়ম বলেন, তিনি তার শ্বশুরবাড়ির কোনো খোঁজখবর জানেন না। তবে জানতেন তার শ্বশুরবাড়ি সিরাজদিখানে। ঢাকার মগবাজারে যে তাদের বাসা আছে তা তার জানা ছিল না। এমনকি তার স্বামীর কয়জন ভাইবোন তা-ও জানেন না তিনি। তিনি দাবি করেন, তার স্বামীকে গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। কয়েকজন লোক বাসায় ঢুকে নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জরুরি কথা আছে বলে তার স্বামীকে বাইরে নিয়ে যায়। তিনি বের হয়ে দেখেন সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে তার স্বামীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে ওই লোকেরা। পরে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। দুপুরের দিকে তিনি টেলিভিশনের খবর দেখে জানতে পারেন বাবু নামে একজন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। খবর দেখে আত্মীয়স্বজনকে জানালে তারা হাসপাতালে খোঁজ নিতে বলেন। হাসপাতালে এসে তিনি দেখতে পারেন নিহত ব্যক্তিই তার স্বামী বাবু। তিনি বলেন, যখন তার স্বামীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় তখন ওই এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বাবুর আর কোনো স্বজন হাসপাতাল মর্গে যাননি। বাবুর স্ত্রী বলেছেন, তার স্বামীর স্বজনেরা যদি লাশ গ্রহণ না করেন তাহলে তিনি লাশ নিজ এলাকায় নিয়ে যাবেন। তিনি বলেন, তার স্বামী যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত এবং তিনি যে মগবাজারে গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতেন তা তিনি জানেন না। এ দিকে গতকাল বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো: রেহান হক লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। আজ লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়। উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট রাত পৌনে ৮টায় মগবাজারের সোনালীবাগে সন্ত্রাসীদের গুলিতে বৃষ্টি ওরফে রানু (৩০), বিল্লাল (২৫) ও মুন্না (২০) নিহত হন। রানুর ভাই গুলিতে গুরুতর আহত হন। চাঁদাবাজি এবং বাড়ি দখলকে কেন্দ্র করে কালা বাবু ও তার সঙ্গীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে নিহতদের স্বজনদের অভিযোগ। কালা বাবু প্রকাশ্যেই গুলি করে এই হত্যার ঘটনা ঘটায়। উপপুলিশ কমিশনার ডিবি (দক্ষিণ) কৃষ্ণপদ রায় এর তত্ত্বাবধানে ও এডিসি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

No comments:

Post a Comment