Saturday, September 20, 2014

বাংলাদেশের রাজনীতি একজনই সর্বেসর্বা:নয়াদিগন্ত

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি দুর্নীতি মামলায় বিচারক নিয়োগ নিয়ে করা আপিল খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই রায়ে তার বিচার শুরুর পথ উন্মুক্ত হলো। প্রসিকিউটররা তার বিরুদ্ধে জিয়াউর রহমানের স্মৃতিতে স্থাপিত দাতব্য ট্রাস্ট থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছেন। এই মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে দেশের দ্বিতীয় মতাধর নারীকে জেল খাটতে হতে পারে। দ্য ইকোনমিস্টের সর্বশেষ সংখ্যায় (২০ সেপ্ট
েম্বর) এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।  আদালতের এই রায়ে দেশের সবচেয়ে মতাধর নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আধিপত্য আরো বাড়বে। বেগম জিয়ার দল বিএনপির বয়কটের মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নজিরবিহীনভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে মতায় আসার আট মাসের মাথায় এ ঘটনা ঘটল। নির্বাচনের সময় বেগম জিয়াকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। নতুন করে নির্বাচনের দাবির মুখে ভীতির মধ্যে নতুন সরকার যাত্রা শুরু করে। তবে এখন তারা লম্বা পা ফেলছে। একই সময়ে শেখ হাসিনার সরকার আদালত দখল করেছে, গণমাধ্যমের সমালোচনা বন্ধ করে দিয়েছে। শাসনকে স্থায়ী করার জন্য তারা সংবিধান সংশোধন করছে। সংসদে তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও অনুগত বিরোধী দল। বিচারপতিদের অপসারণের জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। আগামী সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত অপো করা ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। ওই নির্বাচন হওয়ার কথা ২০১৯ সালে। বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগ ইচ্ছেমাফিক দেশ চালাচ্ছে। যদিও সম্প্রতি অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়েছে, ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক, তবে এখনই কোনো পূর্ণাঙ্গ সঙ্কট দেখা যাচ্ছে না। তারপরও বড় কোনো সঙ্কট আসন্ন বলে দৃশ্যমান নয়। কিছু কিছু েেত্র সরকার বিচণতার পরিচয় দিয়েছে। একটি বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত গণহত্যা ও অন্যান্য অপরাধের বিচারের দীর্ঘ বিলম্বিত রায় সরকার ঝুলিয়ে রেখেছে। প্রায় সব অভিযুক্তই হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর সদস্য। ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের একজন নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড লঘু করেছে। গত বছর যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ রাজপথে মারাত্মক অস্থিরতার সূত্রপাত ঘটায়। যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় বাতিলের সর্বশেষ আদেশটি ইঙ্গিত করে, রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার েেত্র এগুলোর প্রয়োজনীয়তা কার্যত ফুরিয়েছে। সম্ভবত বিস্ময়করভাবে সাম্প্রতিক একটি জনমত জরিপ অনুসারে নির্বাচনের আগের তুলনায় সরকার এখন আরো বেশি জনপ্রিয়। বিএনপি বলছে, জরিপটি ত্রুটিপূর্ণ। দলটি যুক্তি দেখিয়েছে, তারা গত বছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শাসক দল আওয়ামী লীগকে হারিয়েছে। একই সাথে এ বছরের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগও এনেছে। হয়তো জনমত জরিপটি এক ধরনের নিয়তি মেনে নেয়ার প্রতিফলন ঘটিয়েছে সরকারের সমালোচনা করে লাভ কী, যেখানে আপাতত বিরোধী দল হিসেবে বিকল্প কিছু নেই? বিএনপি কিভাবে লড়াইয়ে ফিরবে, সেটা আরো কিছুটা সময় অস্পষ্ট থাকবে। বিএনপি আবার কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। সংসদে না থাকায় এখন তারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা পাচ্ছে না। তারা নির্ভর করছে দলীয় কর্মীদের ওপর। জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে বেগম জিয়া বলছেন যে তার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। তিনি বলেছেন, তিনি দল গোছাচ্ছেন এবং তার ছেলে তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। বেগম জিয়া বলেছেন, তার (ওই নারীর) মতো প্রতিশোধ নিতে চান না। গভীর ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনে জয়ী হলেও সময় এখন শেখ হাসিনার অনুকূলে। কার্যকর কোনো বিরোধী দল না থাকায় তার ওপর তেমন কোনো চাপ নেই। প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন যে ২০১৯ সালের নির্বাচনে তার জয়ের সম্ভাবনা নেই তখন নিজের বংশানুক্রমিক শাসনকে আরো দীর্ঘায়িত করার জন্য তিনি আগাম নির্বাচন দিতে পারেন। সাময়িকভাবে হলেও একজন নারী এই যুদ্ধে জয়ী হচ্ছেন।

No comments:

Post a Comment