তবে দুদককে একটি তথ্য মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, আর সেটি হচ্ছে কানাডার আদালতে পদ্মা সেতু দুর্নীতি যড়যন্ত্র মামলার বিচার আগামী বছরের ১৩ এপ্রিল শুরু হচ্ছে। দফায় দফায় প্রাক্-বিচার শুনানি শেষে গত ২০ আগস্ট কানাডার অন্টারিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরুর দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেন। মামলা চালানোর মতো উপাদান পাওয়া গেছে বলেই আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে। কানাডায় এই মামলার আসামি হচ্ছেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের তিন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল, রমেশ শাহ ও কেভিন ওয়ালেস। অথচ এই তিনজনকেই অব্যাহতি দিয়েছে দুদক। ফলে বলা যায়, পদ্মা সেতু নিয়ে নাটক কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। এর শেষ দেখতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। যদিও দুদক এর শেষ না দেখেই দ্রুত তদন্তের সমাপ্তি ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য অবশ্য তারা দায় চাপাল অভিযোগদাতা বিশ্বব্যাংকের ওপর। দুদকের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বললেন, বিশ্বব্যাংক তাদের তথ্য-প্রমাণ দেয়নি। আবার কানাডার রয়াল অন্টারিও মাউন্টেড পুলিশ থেকেও তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানালেন দুদকের আরেক কর্মকর্তা কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন। কানাডায় মামলা চলছে। এই অবস্থায় তারা কোনো তথ্য দুদককে দেবে না, এটাই স্বাভাবিক। তবে দুদক এটা জানে যে, কানাডার প্রাক্-বিচার শুনানিতে বাংলাদেশের একাধিক রাজনীতিবিদ জবানবন্দি দিয়ে এসেছেন। তাঁরা সেখানে অনেক কিছুই বলেছেন। দুদক তাঁদেরও নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারত। কিন্তু দুদক সে পথে আদৌ না গিয়ে সবাইকে দায়মুক্তি দিয়ে দিল। প্রশ্ন হচ্ছে, দুদকের কেন তর সইল না? দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, রমেশ শাহর যে ডায়েরির কথা হচ্ছে, তার কোনো অস্তিত্ব নেই। কারণ ডায়েরি নয়, সেটি ছিল নোটপ্যাড। দুদক কমিশনার বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান লুই মোরেনো ওকাম্পোর সর্বশেষ রিপোর্টটি পড়ে দেখতে পারেন। সেখানে ডায়েরি নয়, নোটপ্যাডের কথাই বলা আছে। দুদক কমিশনারের আরও নিশ্চয়ই মনে পড়বে, দুদকের তদন্তে বিশ্বব্যাংক প্যানেল অসন্তুষ্ট হয়ে চিঠি দেওয়ার পরেও তিনি সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘দুদকের তদন্তে বিশ্বব্যাংক খুশি।’ এর পরেই বিশ্বব্যাংকের দেওয়া চিঠিটি প্রথম আলোসহ গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাতে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলটি দুদকের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট। সেই প্রতিবেদনটি এখনো বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে আছে। অর্থাৎ সত্য আড়াল করে ভিন্ন তথ্য দেওয়া দুদকের জন্য নতুন কিছু নয়। পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিলের পর শর্ত সাপেক্ষে অর্থায়নে ফিরে আসতে সম্মতি দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। শর্ত ছিল, দুর্নীতি নিয়ে সম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং এই তদন্ত পর্যবেক্ষণ করবে একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দল। এর পরেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী আর্জেন্টিনার নাগরিক লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের সেই পরামর্শক দল স্পষ্ট করেই বলেছিল, ‘ঘটনাপরম্পরা বিবেচনা করে প্যানেল মনে করে, একটি অপরাধের ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং সাবেক মন্ত্রী হোসেন এর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে জড়িত। ওই কাজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তাঁর সম্মতি প্রয়োজন ছিল। কাজের জন্য দর-কষাকষি করতে তিনি সচিব ভুঁইয়ার (সাবেক সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া) মধ্যস্থতায় এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকের পর ষড়যন্ত্রে জড়িতদের ঘুষ দেওয়ার জন্য যে তালিকা এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা করেছিলেন, তাতে সাবেক ওই মন্ত্রীর নাম ছিল। তাঁকে চার শতাংশ ঘুষ দেওয়ার কথা ছিল। ফলে ঘটনাক্রম ও প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী অভিযুক্ত হিসেবে এফআইআরে সাবেক মন্ত্রীর নাম থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অভিযুক্ত হিসেবে এফআইআরে সাবেক মন্ত্রীর নাম না থাকায় বিশেষজ্ঞ প্যানেল এটা বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে যে দুদক পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছভাবে তদন্ত করছে না। কেবল প্রতিবেদনই নয়, দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বেশ কিছু ই-মেইল বার্তাও দুদককে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। সেসব ই-মেইল বার্তায় কাজ পেতে বিভিন্ন দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিবরণ ছিল। মূলত এসব তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই কানাডায় মামলা চলছে। অথচ কিছুই খুঁজে পেল না দুদক। বিশ্বব্যাংকের তদন্ত দলকে সে সময় দুদক বলেছিল, সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হলে রাজনৈতিক সমস্যা বা হট্টগোল দেখা দেবে। এর সমালোচনা করে লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো লিখেছিলেন, যে রাজনৈতিক পরিচয়ই হোক না কেন, তাঁকে ছাড় দেওয়া হলে তদন্তকে মোটেই সম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ বলা যাবে না। আর এখন দেখা যাচ্ছে, কেবল সাবেক মন্ত্রীই নন, সবাইকেই ছাড় দিল দুদক। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক পদে কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দিতে এই দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেই অর্থায়ন স্থগিত করে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এর পরেই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ মেনে অর্থায়ন আবার চালু করতে সরকার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল দুদককে। কিন্তু সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো প্রভাবশালীদের রক্ষা করতে দুদক সে সময়েই স্বচ্ছভাবে তদন্ত করেনি। এর ফলে সরকার যখন বুঝতে পারে যে বিশ্বব্যাংক ফিরবে না, তখন সরকারই দাতাদের অর্থে নয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা আসে ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। আসলে তখনই দুদকের তদন্তের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। গতকাল দেখা গেল, দুদক সেভাবেই কাজ করেছে এবং কারও বিরুদ্ধেই অভিযোগ করার মতো কিছু খুঁজে পায়নি। মূলত এর পর থেকে দুদক প্রতিনিধির দুবার কানাডা ঘুরে আসা ছাড়া তাদের জোরেশোরে তদন্ত চালানোর কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ ছিল না। দুদকের গতকালের বক্তব্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কোনো প্রতিক্রিয়া চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে কেউই বিস্মিত হননি। কারণ, দুদক সরকারের পছন্দ নয়, এমন কিছু করবে, তা কেউ বিশ্বাস করেন না। দুদক সেই আস্থা এত দিনে তৈরি করতেও পারেনি। ফলে দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশ যে অত্যন্ত সক্রিয় ও আন্তরিক, সেই প্রমাণ বিশ্বকে দেখাতে পারল না দুদক। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হয়েই থাকবে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু তৈরিতে সর্বশেষ হিসাবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। এর আগে দাতারা ২৯১ কোটি ডলারের মধ্যে ২৩৫ কোটি ডলার সহজ শর্তে দিতে সম্মত ছিল। এ জন্য ঋণ বিতরণের বা সার্ভিস চার্জ ছিল মাত্র দশমিক ৭৫ শতাংশ, আর অর্থ ফেরত দিতে হতো ১০ বছর পর থেকে। এই শর্তে ঋণ নিয়েই যমুনা নদীর ওপর করা বঙ্গবন্ধু সেতুকে দ্রুত লাভজনক করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশকে এখন নিজস্ব অর্থে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ভেঙে এই সেতু তৈরি করতে হচ্ছে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীসহ কিছু ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য এই মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে, হয়তো আরও দিতে হবে।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Thursday, September 4, 2014
কেন তর সইল না?:প্রথম অালো
তবে দুদককে একটি তথ্য মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন, আর সেটি হচ্ছে কানাডার আদালতে পদ্মা সেতু দুর্নীতি যড়যন্ত্র মামলার বিচার আগামী বছরের ১৩ এপ্রিল শুরু হচ্ছে। দফায় দফায় প্রাক্-বিচার শুনানি শেষে গত ২০ আগস্ট কানাডার অন্টারিয়র কোর্ট অব জাস্টিসের আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরুর দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেন। মামলা চালানোর মতো উপাদান পাওয়া গেছে বলেই আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে। কানাডায় এই মামলার আসামি হচ্ছেন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের তিন কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল, রমেশ শাহ ও কেভিন ওয়ালেস। অথচ এই তিনজনকেই অব্যাহতি দিয়েছে দুদক। ফলে বলা যায়, পদ্মা সেতু নিয়ে নাটক কিন্তু এখনো শেষ হয়নি। এর শেষ দেখতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। যদিও দুদক এর শেষ না দেখেই দ্রুত তদন্তের সমাপ্তি ঘোষণা দিয়েছে। এ জন্য অবশ্য তারা দায় চাপাল অভিযোগদাতা বিশ্বব্যাংকের ওপর। দুদকের চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বললেন, বিশ্বব্যাংক তাদের তথ্য-প্রমাণ দেয়নি। আবার কানাডার রয়াল অন্টারিও মাউন্টেড পুলিশ থেকেও তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানালেন দুদকের আরেক কর্মকর্তা কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন। কানাডায় মামলা চলছে। এই অবস্থায় তারা কোনো তথ্য দুদককে দেবে না, এটাই স্বাভাবিক। তবে দুদক এটা জানে যে, কানাডার প্রাক্-বিচার শুনানিতে বাংলাদেশের একাধিক রাজনীতিবিদ জবানবন্দি দিয়ে এসেছেন। তাঁরা সেখানে অনেক কিছুই বলেছেন। দুদক তাঁদেরও নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারত। কিন্তু দুদক সে পথে আদৌ না গিয়ে সবাইকে দায়মুক্তি দিয়ে দিল। প্রশ্ন হচ্ছে, দুদকের কেন তর সইল না? দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের বলেছেন, রমেশ শাহর যে ডায়েরির কথা হচ্ছে, তার কোনো অস্তিত্ব নেই। কারণ ডায়েরি নয়, সেটি ছিল নোটপ্যাড। দুদক কমিশনার বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান লুই মোরেনো ওকাম্পোর সর্বশেষ রিপোর্টটি পড়ে দেখতে পারেন। সেখানে ডায়েরি নয়, নোটপ্যাডের কথাই বলা আছে। দুদক কমিশনারের আরও নিশ্চয়ই মনে পড়বে, দুদকের তদন্তে বিশ্বব্যাংক প্যানেল অসন্তুষ্ট হয়ে চিঠি দেওয়ার পরেও তিনি সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘দুদকের তদন্তে বিশ্বব্যাংক খুশি।’ এর পরেই বিশ্বব্যাংকের দেওয়া চিঠিটি প্রথম আলোসহ গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাতে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ দলটি দুদকের কর্মকাণ্ডে অসন্তুষ্ট। সেই প্রতিবেদনটি এখনো বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে আছে। অর্থাৎ সত্য আড়াল করে ভিন্ন তথ্য দেওয়া দুদকের জন্য নতুন কিছু নয়। পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিলের পর শর্ত সাপেক্ষে অর্থায়নে ফিরে আসতে সম্মতি দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। শর্ত ছিল, দুর্নীতি নিয়ে সম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং এই তদন্ত পর্যবেক্ষণ করবে একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ দল। এর পরেই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক প্রধান আইনজীবী আর্জেন্টিনার নাগরিক লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের সেই পরামর্শক দল স্পষ্ট করেই বলেছিল, ‘ঘটনাপরম্পরা বিবেচনা করে প্যানেল মনে করে, একটি অপরাধের ষড়যন্ত্র হয়েছে এবং সাবেক মন্ত্রী হোসেন এর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে জড়িত। ওই কাজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তাঁর সম্মতি প্রয়োজন ছিল। কাজের জন্য দর-কষাকষি করতে তিনি সচিব ভুঁইয়ার (সাবেক সেতুসচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া) মধ্যস্থতায় এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। ওই বৈঠকের পর ষড়যন্ত্রে জড়িতদের ঘুষ দেওয়ার জন্য যে তালিকা এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তা করেছিলেন, তাতে সাবেক ওই মন্ত্রীর নাম ছিল। তাঁকে চার শতাংশ ঘুষ দেওয়ার কথা ছিল। ফলে ঘটনাক্রম ও প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী অভিযুক্ত হিসেবে এফআইআরে সাবেক মন্ত্রীর নাম থাকা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু অভিযুক্ত হিসেবে এফআইআরে সাবেক মন্ত্রীর নাম না থাকায় বিশেষজ্ঞ প্যানেল এটা বিবেচনা করতে বাধ্য হচ্ছে যে দুদক পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছভাবে তদন্ত করছে না। কেবল প্রতিবেদনই নয়, দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বেশ কিছু ই-মেইল বার্তাও দুদককে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। সেসব ই-মেইল বার্তায় কাজ পেতে বিভিন্ন দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিবরণ ছিল। মূলত এসব তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই কানাডায় মামলা চলছে। অথচ কিছুই খুঁজে পেল না দুদক। বিশ্বব্যাংকের তদন্ত দলকে সে সময় দুদক বলেছিল, সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হলে রাজনৈতিক সমস্যা বা হট্টগোল দেখা দেবে। এর সমালোচনা করে লুই গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো লিখেছিলেন, যে রাজনৈতিক পরিচয়ই হোক না কেন, তাঁকে ছাড় দেওয়া হলে তদন্তকে মোটেই সম্পূর্ণ ও নিরপেক্ষ বলা যাবে না। আর এখন দেখা যাচ্ছে, কেবল সাবেক মন্ত্রীই নন, সবাইকেই ছাড় দিল দুদক। পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক পদে কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দিতে এই দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেই অর্থায়ন স্থগিত করে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। এর পরেই বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ মেনে অর্থায়ন আবার চালু করতে সরকার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছিল দুদককে। কিন্তু সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো প্রভাবশালীদের রক্ষা করতে দুদক সে সময়েই স্বচ্ছভাবে তদন্ত করেনি। এর ফলে সরকার যখন বুঝতে পারে যে বিশ্বব্যাংক ফিরবে না, তখন সরকারই দাতাদের অর্থে নয়, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণা আসে ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি। আসলে তখনই দুদকের তদন্তের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। গতকাল দেখা গেল, দুদক সেভাবেই কাজ করেছে এবং কারও বিরুদ্ধেই অভিযোগ করার মতো কিছু খুঁজে পায়নি। মূলত এর পর থেকে দুদক প্রতিনিধির দুবার কানাডা ঘুরে আসা ছাড়া তাদের জোরেশোরে তদন্ত চালানোর কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ ছিল না। দুদকের গতকালের বক্তব্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের কোনো প্রতিক্রিয়া চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে কেউই বিস্মিত হননি। কারণ, দুদক সরকারের পছন্দ নয়, এমন কিছু করবে, তা কেউ বিশ্বাস করেন না। দুদক সেই আস্থা এত দিনে তৈরি করতেও পারেনি। ফলে দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশ যে অত্যন্ত সক্রিয় ও আন্তরিক, সেই প্রমাণ বিশ্বকে দেখাতে পারল না দুদক। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হয়েই থাকবে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতু তৈরিতে সর্বশেষ হিসাবে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে বৈদেশিক মুদ্রায়। এর আগে দাতারা ২৯১ কোটি ডলারের মধ্যে ২৩৫ কোটি ডলার সহজ শর্তে দিতে সম্মত ছিল। এ জন্য ঋণ বিতরণের বা সার্ভিস চার্জ ছিল মাত্র দশমিক ৭৫ শতাংশ, আর অর্থ ফেরত দিতে হতো ১০ বছর পর থেকে। এই শর্তে ঋণ নিয়েই যমুনা নদীর ওপর করা বঙ্গবন্ধু সেতুকে দ্রুত লাভজনক করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশকে এখন নিজস্ব অর্থে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ভেঙে এই সেতু তৈরি করতে হচ্ছে। সাবেক যোগাযোগমন্ত্রীসহ কিছু ব্যক্তিকে বাঁচানোর জন্য এই মূল্য দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে, হয়তো আরও দিতে হবে।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment