পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও আবুল হাসানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় তাদের অভিযোগ থেকে মুক্তি দিতে যাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তারা ছাড়াও সাবেক সচিবসহ অনেককেই খালাস দেয়া হচ্ছে দুদকের প্রতিবেদনে। গতকাল রোববার দুদকের কমিশনে জমা হওয়া সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত রিপোর্র্ট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা মির্জা জাহিদুল ইসলাম। সেখানে আবুল হোসেনকে
অভিযুক্ত করা হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বিষয়টি তদন্তে দুদকের তিন সদস্যের তদন্ত টিম করা হলেও পরে সেখান থেকে দুইজনকে বদলি করা হয়। দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করেন, সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় দুদক সব রকম চেষ্টা করেছে প্রমাণ বের করার। কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হতে যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাংক তাকে ওই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করে। বিশ্বব্যাংক তাদের বিশেষজ্ঞ দিয়েও তদন্ত নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপরও চাপ সৃষ্টি করে। তাকে মন্ত্রী পরিষদ থেকে সরানোর পরামর্শ দেয়। তদন্ত পূর্ণাঙ্গ ও নিরপে না হওয়া পর্যন্ত তাকে দূরে রাখতে বলেন। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন করবে না বলেও শর্ত দেয়। পাশাপাশি মামলায় তাকে আসামিও করতে বলা হয়। রোববার বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মির্জা জাহিদুল ইসলাম মামলাটি নথিভুক্ত করে এর কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য সুপারিশ প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর ফলে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি মামলার মূল সাত সন্দেহভাজন সব আসামি খালাস পেতে যাচ্ছেন। এখন অপো কেবল কমিশনের অনুমোদনের। কমিশন অনুমোদন দিলেই তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সৈয়দ আবুল হোসেন ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এসএনসি লাভালিনের তিন কর্মকর্তা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ, সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দরপত্র মূল্যায়নে গঠিত কমিটির সদস্যসচিব কাজী ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের ও এসএনসি লাভালিনের স্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্লানিং কনসালট্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক মো: মোস্তাফাকেও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, মামলাটির মেরিট না থাকায়, তদন্তে পর্যাপ্ত তথ্য ও সাী না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে মামলাটি নথিভুক্ত করা হচ্ছে। একই কারণে মামলায় চার্জশিটও দাখিল করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, কমিশনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে দু-এক দিনের মধ্যে কমিশন বৈঠক করবে। বৈঠকেই তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার অপর আসামিদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট নথি প্রমাণ না থাকায় এবং কানাডা রয়েলে পুলিশ দুর্নীতি প্রমাণের মতো নথিপত্র না দিতে পারায় তদন্ত কর্মকর্তা রিপোর্ট দিয়েছে যে, অভিযুক্তরা নির্দোষ। এর ফলে এখন আর দুদকের দায়ের করা মামলাটি চলবে না। এ বিষয়ে কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাংবাদিকদের বলেন, একটি মামলায় যখন ফাইনাল রিপোর্ট হয় তখন আর মামলাটি চলে না। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি হওয়ার বিষয়টি এমনভাবে করা হয়েছে যে, দুদককেও গুরুত্ব দিয়ে তদন্তটি করতে হয়েছে। এ জন্য অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। দেশের ইমেজও নষ্ট হয়েছে। দুদকের চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় মামলা করার আগেই আমরা এর কোনো উপযুক্ত প্রমাণ পাইনি। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের চাপ ও মিডিয়ার চাপে আমরা উপযুক্ত প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও মামলাটি করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কাজটি ঠিক হয়নি। ওই সময়ে এটা নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও মিডিয়া অনেক বেশি বাড়াবাড়ি করে। আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তখন মামলা না করা হলে এটাকে অন্য খাতে প্রভাবিত করা হতো। সরকারের সমালোচনাও করা হতো। আমরা কোনো সমালোচনা হোক তা চাইনি। বরং চেয়েছিÑ মামলা হোক। মামলার তদন্ত হলেই আসল ঘটনা বের হয়ে আসবে।
No comments:
Post a Comment