রংপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-৩-এ টু টোয়েন্টি লাইনে সংযোগ পাওয়ার বিষয়টি এখন সিন্ডিকেটের হাতে বন্দী। ক্যাবল বাদে সর্বনি¤œ দুই হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার ১৫০ টাকার ফি থাকলেও এই অফিসে প্রতি সংযোগের জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবি করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সূত্র মতে, স্টিমেটের আলোকে সর্বনি¤œ ৫৬৬ এবং সর্বোচ্চ ৮৬৬ এবং ২ কিলো লোডের জন্য ৭৫০ টাকা অর্থাৎ নতুন মিটারের জন্য সরকারি কোষাগারে এক হাজার ৩১৬ থেকে এক হাজার ৬১
৬ টাকা পর্যন্ত ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। এর বাইরে মিটার বাবদ এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ এবং বাক্স বাবদ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হয়। এর বাইরে প্রকার এবং দূরত্বভেদে গ্রাহককে তার কিনতে হয়। তার বাদে সর্বনি¤œ দুই হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার ১৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু রংপুর মহানগরীর লালবাগে অবস্থিত বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-৩ এ অফিসিয়াল সিন্ডিকেটটি ক্যাবল বাদে প্রতি সংযোগের জন্য ব্যাংক পেমেন্ট, মিটার, বাক্স এবং অফিস খরচের জন্য কন্ট্রাক্ট হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা নিচ্ছে। সেখান থেকে ব্যাংক ও ইকুইপমেন্টস খরচা বাদে অতিরিক্ত অর্থ পিয়ন, বড় বাবু, শ্রমিক লিডার থেকে শুরু করে নির্বাহী প্রকৌশলী পর্যন্ত প্রটোকল অনুযায়ী ভাগাভাগি হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকারি কর্তাব্যক্তিদের এই সিন্ডিকেট নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বেসরকারি ইলেকট্রনিকস শ্রমিক কল্যাণ সমিতি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিমন নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা আগে গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মিটার বাবদ পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতাম। সেই টাকা থেকে ব্যাংক ও ইকুইপমেন্টস খরচা বাদে কিছু টাকা অফিসে খরচ করে বাকি টাকা নিয়ে আমাদের সংসার চলত। মানুষের সেবা দিতাম। কিন্তু এখন স্যারেরাই পাঁচ হাজার টাকা দাবি করছেন। তাহলে এত খাটাখাটুনি করে আমাদের লাভ কী। তিনি জানান, আমরা বারবার স্যারদের কাছে অনুরোধ করেছি আগের সিস্টেম চালু করতে। কিন্তু তারা শুনছেন না। সূত্র জানায়, বেসরকারি ইলেকট্রনিকস শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সদস্যরা গ্রাহকের সাথে চুক্তি করে সরকারি ফি বাদেও প্রতি মিটার বাবদ নির্বাহী প্রকৌশলীকে ৩০০ টাকা, সহকারী প্রকৌশলীকে ২০০ টাকা, উপসহকারী প্রকৌশলীকে ২০০ টাকা করে দিতেন। বাকি টাকা নিজেরা গ্রহণ করতেন। কিন্তু এখন সেই সুযোগটি তাদের হাতে নেই। চলে গেছে সরকারি কর্মকর্তাদের হাতে। এ কারণে তারা ত্যাক্ত বিরক্ত। বেসরকারি ইলেকট্রনিকস শ্রমিক কল্যাণ সমিতির সদস্য আনারুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, রংপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-৩ অফিসটি নতুন হয়েছে। এখানে যোগ দিয়েছেন উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে সাখাওয়াত হোসেন। আমি তার কাছে আমার নিকটাত্মীয়র মিটারের জন্য একটি ফাইল নিয়ে যাই। ওনি আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চান। আমি অনেক অনুরোধ করলেও তিনি শোনেননি। বরং বলেছেন পাঁচ হাজার টাকা না দিলে ফাইল ফেরত দিয়ে দাও। তিনি বলেন, পাঁচ হাজার টাকা যদি স্যারকেই দেই তাহলে আমার খাটাখাটুনি করে কী লাভ থাকে। আসলে ওনি অফিসটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কর্মচারীদের ওপর স্টিম রোলার চালাচ্ছেন। বেসরকারি ইলেকট্রনিকস শ্রমিক কল্যাণ সমিতির আরেক সদস্য মোকছেদ আলী নয়া দিগন্তকে জানান, পাঁচ হাজার টাকা দাবির বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলীও জানেন। তার ইশারা ইঙ্গিতেই কাজটি হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপসহকারী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, রংপুরে আরো অফিস আছে। সেখানে যেভাবে দেয়া হচ্ছে এখানেও সেই নিয়মেই সংযোগ দেয়া হচ্ছে। একটি সংযোগ নিতে কী পরিমাণ টাকা লাগে এ বিষয়ে তিনি জানান, আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সেটা বলা যাবে না। এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, স্টিমেট হওয়ার পরপর এক হাজার ৫০০ টাকা জমা দিতে হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। এর বাইরে কোনো অফিসে খরচ নেই। গ্রাহকেরা মিটার, তার, কিনে লাইন সংযোগ নেবেন। অফিসে ফাইল পার করার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবির বিষয়টি তার নলেজে নেই বলে জানান তিনি।
No comments:
Post a Comment