পবিত্র হজ, মহানবী সা: ও তাবলিগ জামায়াত সম্পর্কে মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, তার এই অনভিপ্রেত বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শুধু মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করলে চলবে না। তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বিশিষ্টজনেরা আরো বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত হেনে
ছে। দণ্ডবিধির আইনে সরকারের পক্ষে পুলিশের উচিত মামলা করে তাকে গ্রেফতার করা। সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা: এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী এবং একটি খ্যাতনামা মুক্তিযুদ্ধ পরিবারের সদস্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য শুনে আমি স্তম্ভিত ও মর্মাহত হয়েছি। আল্লাহ, রাসূল সা:, হজ, দেশের জ্ঞানী-গুণী মানুষ এবং টকশো নিয়ে তিনি যেসব উক্তি করছেন, তাতে যেকোনো মানুষ স্বাভাবিকভাবেই ভাবতে পারে, তিনি বেসামাল অবস্থায় ছিলেন কিনা? গতকাল এক প্রতিক্রিয়া বি চৌধুরী বলেন, হজ সম্পর্কে আবোলতাবোল কথা বলার আগে মন্ত্রীর ভাবা উচিত ছিল তার দলের নেত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রী ও এমপিরা আগে হজ করেছেন। রাষ্ট্রপতিও বর্তমানে হজ পালন করছেন। এসব খবর তিনি আদৌ রাখেন কিনা? আর মন্ত্রী যদি এসব খবর রেখে থাকেন, তা হলে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের একটির বিরুদ্ধে কিছু বলার আগে পদত্যাগ করে এ ধরনের অগ্রহণযোগ্য ধর্মবিরোধী বক্তব্যের যুক্তি খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করলেও সে যুক্তি হতো খোঁড়া যুক্তি। সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, দুঃখের বিষয় পরপর সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী অসংলগ্ন ও অসংযত কথাবার্তা বলেছেন, যা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও অপমানকর। এইসব মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারপ্রধান ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে সরকার এবং একটি রাজনৈতিক দল সম্পর্কে জনগণ যে ধারণা পোষণ করবেন তা ওই দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও নির্বাচনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকী হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অত্যন্ত অবমাননাকর ও অগ্রহণযোগ্য। দেশের প্রচলিত আইনে এটা শাস্তিযোগ্য ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তরিকুল ইসলাম। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কারণে দণ্ডবিধি আইনে লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে। তাকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দেয়া উচিত। একটি মুসলিমপ্রধান দেশের মন্ত্রী হয়ে তিনি হজ ও তাবলিগ জামায়াত নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অমার্জনীয় অপরাধ। খন্দকার মাহবুব বলেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে সুয়োমটো মামলা করা যায়। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কারণে সরকারের পক্ষে পুলিশের উচিত মামলা করা। শুধু মন্ত্রিসভা থেকেই বহিষ্কার নয়, অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার। কারণ তিনি বিশ্বের মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছেন। কোনো ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি তাতে সহযোগিতা করবেন বলে মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদের কাছে জানতে চাইলে মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা একজন মুসলমানের পক্ষে বলার কোনো সুযোগ নেই। যিনি এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, তিনি আদৌ মুসলমান কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তিনি বলেন, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি হজ। হজ নিয়ে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেয়া কোনো মুসলমানের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আর এমন সময় লতিফ সিদ্দিকী বক্তব্য দিলেন, যখন দেশের সর্বোচ্চ পদধারী রাষ্ট্রপতি হজ পালনরত। তাহলে কি আমরা বলব, রাষ্ট্রপতি অর্থের অপচয় করছেন? ইকতেদার আহমেদ আরো বলেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ইসলাম কোনোদিন সমর্থন করেনি। আওয়ামী লীগ একটি জনভিত্তিক দল। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। সুতরাং লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যে তিনি নিজে যত না ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, তার এ ধরনের বক্তব্যের জন্য শুধু মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণই যথেষ্ট নয়, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত হানার জন্য অবশ্যই তাকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অনভিপ্রেত মন্তব্য করতে দুঃসাহস দেখাতে না পারে। সম্মিলিতি উলামা-মাশায়েখ পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, সরকারের মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্য নেহায়েত ইসলামের সাথে তামাশা। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য নাস্তিক-মুরতাদ ও আন্তর্জাতিক বাতিলচক্র মাঝে মাঝেই এভাবে বেসামাল বক্তব্য দিচ্ছে। তিনি বলেন, ইসলামের বিধান অনুযায়ী মুরতাদদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। বুখারি শরিফের হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি কেউ মুরতাদ হয় তবে তার শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড।’ ইকতেদার আহমেদও এ ব্যাপারে সহমত পোষণ করেন। লতিফ সিদ্দিকীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে খলিলুর রহমান বলেন, অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে কেউ এ ধরনের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দেয়ার দুঃসাহস না পায়। অন্যথায় সরকারকে চরম খেসারত দিতে হবে। তাকে এখনই গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন খলিলুর রহমান মাদানী। বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদেরের কাছে জানতে চাইলে নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ইসলাম ধর্মের প্রতি ধৃষ্টতাপূর্ণ। কোনো ভদ্র লোক এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। অতিদ্রুত তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। তিনি বলেন, লতিফ সিদ্দিকীকে শুধু মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার নয় তাকে অবিলম্বে জাতির কাছে ক্ষমতা চাইতে হবে। না হলে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে। উল্লেখ্য, গত রোববার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউ ইয়র্কের টাঙ্গাইলবাসীদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী পবিত্র হজ, তাবলিগ জামায়াত ও প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে কটূক্তিপূর্ণ বক্তব্য রাখেন।
No comments:
Post a Comment