Saturday, October 18, 2014

গোদাগাড়ীতে আমনক্ষেতে পোকার আক্রমণ : ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা:নয়াদিগন্ত

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলাসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আমনের ক্ষেতে ‘কারেন্ট’ পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকেরা বলছেন, ক্রমাগত বালাইনাশক প্রয়োগ করেও এই পোকার আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। কারেন্ট পোকার কারণে বিঘাপ্রতি ছয় মণ ধানও উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় হতাশ হয়ে অনেক কৃষকই হাল ছেড়ে দিয়েছেন।  উপজেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ দফতর সূত্র জানায়, চলতি মওসুমে গোদাগাড়ী উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে প্র
ায় ২৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে স্বর্ণা ধানের চাষ করা হয়েছে। অবশিষ্ট জমিতে ব্রি-১১, ৩৪, ৪৯, ৫১ ও ৫২ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, স্বর্ণা জাতের ধান খেতেই বেশি পরিমাণে বাদামি ঘাসফড়িংয়ের আক্রমণ হয়। এই ঘাসফড়িংকেই কৃষক স্থানীয় ভাষায় ‘কারেন্ট’ পোকা বলে থাকেন। গোদাগাড়ীর বেশির ভাগ স্বর্ণা ধানক্ষেতই এবার বাদামি ঘাসফড়িংয়ের আক্রমণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে সদর ইউনিয়নের শিমলা, পাকড়ির জয়রামপুর, রিশিকুলের বাংধারা এবং গোগ্রাম ইউনিয়নের মোহনপুর ও তালাই মৌজায় এই পোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি। এসব মৌজার ক্ষেতগুলো থেকে এ বছর বিঘাপ্রতি ছয় মণ ধানও না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এ অবস্থায় হতাশাগ্রস্ত অনেক কৃষক কারেন্ট পোকা দমনে ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন।  বাংধারা মৌজার ধানচাষি মজিবুর রহমান জানান, ধানের গাছ কিছুটা বড় হওয়ার পর পেটে শীষ আসার সাথে সাথেই বাদামি ঘাসফড়িংয়ের আক্রমণ শুরু হয়েছে।  মোহনপুর মৌজার  কৃষক মনিরুল ইসলাম ও আব্দুল মমিন বলেন, কারেন্ট পোকা ধানগাছে পেটে থাকা শীষসহ গাছের রস চুষে খেয়ে ফেলছে। ফলে সবুজ গাছ হলদে হয়ে উঠছে। কিছু কিছু স্থানে ধানগাছ তামাটে রঙ ধারণ করে মারা যাচ্ছে।  জয়রামপুর মৌজার কৃষক দুরুল হোদা বলেন, তিনি চার বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে বিঘাপ্রতি প্রায় পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় ধানের পরিণতি দেখে মনে হচ্ছে, বিঘাপ্রতি উৎপাদন ছয় মণও হবে না। এই মৌজায় ক্ষেতে পোকা দমনে ব্যর্থ হয়ে এক কৃষক তার তিন বিঘা ধানের জমিতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।  তালাই মৌজার কৃষক বাচ্চু মিয়া ও চান মোহাম্মদ অভিযোগ করে বলেন, অনেক চেষ্টা করা হয়েছে পোকা দমনে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। বারবার চেষ্টা করেও স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে মাঠে নিয়ে যাওয়া যায়নি। ফলে শুধু কীটনাশক বিক্রেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী জমিতে বালাইনাশক ¯েপ্র করে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।  তবে অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই সঙ্কটকালে কৃষকের করণীয় কী, তা জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। তারা বলেন, সাধারণত নিচু জমির ধানক্ষেতে পোকা বেশি হয়ে থাকে। আর স্বর্ণা ধান কৃষকদের তা ভোগায় বেশি। এ বছর ২৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে স্বর্ণা ধানের চাষ করা হয়েছে। এ কারণে পোকার আক্রমণ কিছুটা বেশি।  তারা আরো বলেন, পোকা ছিল, আছে ও থাকবে। এরপরও ধানক্ষেতকে পোকার আক্রমণ থেকে রা করতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

No comments:

Post a Comment