আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন এবং বাংলাদেশে চামড়া রফতানির ওপর নতুন করে ১৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কারণে বিদেশী ক্রেতারা চামড়া নিচ্ছে না। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রেতারা পাঁচ-ছয় মাস ধরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দর প্রতি বর্গফুট সর্বোচ্চ ২.৫ ডলার থেকে নেমে এখন ১.৮ ডলারে এসেছে। এ ছাড়া চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) চামড়া, চামড়াজাতপণ্যের লক্ষ
্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। অন্য দিকে অফ সিজনে কোরবানির ঈদ হওয়ায় চামড়া নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়তে হবে বলে জানালেন চামড়া রফতানিকারকেরা। জানা যায়, বিশ্বে বছরে চামড়ার চাহিদা হলো দুই বিলিয়ন বর্গফুট। যার মধ্যে বাংলাদেশ রফতানি করে থাকে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু পাঁচ-ছয় মাস ধরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রফতানি বন্ধ রয়েছে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতনের কারণে রফতানিকারকেরা রফতানিও বন্ধ রেখেছেন। গত বছর বাংলাদেশ প্রতি বর্গফুট চামড়া গড়ে দুই ডলার করে রফতানি করেছে। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে সেই দর কমে গড়ে ১.৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের চামড়ার ক্রেতা হচ্ছে ইতালি, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জাপান। বাংলদেশে চামড়ার মানভেদে এক থেকে আটটি শ্রেণী রয়েছে। সেখানে ১ নম্বর চামড়ার রফতানি মূল্য ছিল ২.৫ ডলার এবং ৮ নম্বর চামড়ার রফতানি মূল্য ছিল ৭০ সেন্ট। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে সে দর নেই। ফলে ট্যানারিগুলোতে গত বছরের অনেক চামড়া পড়ে আছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চামড়া খাতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৭ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। তবে এই লক্ষ্যের বিপরীতে প্রকৃত আয় হয়েছে ৬১ কোটি ৭৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। কোড অনুযায়ী রফতানিতে চামড়ার চারটি খাত রয়েছে। যার মধ্যে লেদার ও লেদার প্রোডাক্টস, লেদার, লেদার প্রোডাক্টস (চ্যাপ্টার-৪২-৪৩) ও লেদার ফুটওয়্যার (৬৪০৩)। প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রা লেদার ও লেদার প্রোডাক্টসে ৮.৩৩ শতাংশ, লেদারে (চ্যাপ্টার-৪১) ২৭.৪৭ শতাংশ, লেদার প্রোডাক্টস (চ্যাপ্টার-৪২-৪৩) ২৫.৫০ শতাংশ অর্জিত হয়নি। শুধু লেদার ফুটওয়্যার (৬৪০৩) খাতে ৩০.৯০ শতাংশ বেশি অর্জিত হয়েছে। লেদারে (চ্যাপ্টার-৪১) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক (৮.৭৯ শতাংশ।) বিটিএ সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের চামড়ার বাজার সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার। এই কোরবানির ঈদের মওসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ আসে। আমাদের স্থানীয় বাজারে চামড়ার ব্যবহার বাড়ছে, যার কারণে এখন দেশেই প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ স্থানীয় চামড়ার ব্যবহার হচ্ছে। গড়ে উঠেছে অনেক শিল্প। দেশের চামড়া ব্যবসায় ঢাকার পোস্তার পরেই নাটোরের অবস্থান। দেশে সারা বছর যে চামড়া আসে তার ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সংগ্রহ হয় শুধু কোরবানির ঈদ থেকে। কোরবানির ঈদ থেকে প্রতি বছর ৬০ লাখ পিস চামড়া পাওয়া যায়। সারা দেশে মোট ট্যানারির সংখ্যা হলো ২১০টি। তবে চামড়াজাতপণ্য রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হলো পাঁচ শতাধিক। সার্ম লেদার ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য এ বি এম মাসুদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে নয়া দিগন্তকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার খুব খারাপ। বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কারণে এখন চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজারে দর পতন হয়েছে। আগে যেখানে আমরা গড়ে দুই ডলারের বেশি দরে প্রতি বর্গফুট চামড়া বিক্রি করতাম, এখন তা কমে ১.৮ ডলার দাঁড়িয়েছে। ফলে বাজার থেকে চামড়া কিনে তা প্রক্রিয়া করতে যে পরিমাণ ব্যয় তাতে বর্তমান দরে চামড়া রফতানি করা সম্ভব নয়। তিনি জানান, চামড়ার মানভেদে এই প্রক্রিয়া খরচ বাংলাদেশী টাকায় ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত হয়। স্থানীয় বাজারে সদ্য উদযাপিত কোরবানির ঈদে চামড়ার দাম অনেক বেশি ছিল। তাই প্রকৃত ট্যানারির মালিকেরা এবার বাজার থেকে চামড়া ক্রয় করেনি। মধ্যস্বত্বভোগীরা কিনেছে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের শাহিন আহমেদ জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দর কমেছে। তাই এবার আমাদের কম দামেই চামড়া কিনতে হয়েছে। অনেককেই ঈদের সময় চামড়া কেনেননি, শুধু আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো অর্ডার না থাকায়। আন্তর্জাতিক বাজারে দরপতন এবং বাংলাদেশে চামড়ার রফতানির ওপর নতুন করে ১৭ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কারণে বিদেশী ক্রেতারা চামড়া নিচ্ছে না। চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্রেতারা পাঁচ-ছয় মাস ধরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া নিচ্ছে না।
No comments:
Post a Comment