রাজধানীর কল্যাণপুরে এক বাসার ওয়ার্ডরোব থেকে গত বুধবার রাতে সালাউদ্দিন মাল (৩৮) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই রাতে চট্টগ্রামের রাউজানে ঘরের পাশে মাটি খুঁড়ে দুদু মিয়া (৩৮) নামের আরেক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ দুই হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ ওই দুই ব্যক্তির স্ত্রীদের গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে সালাউদ্দিনের স্ত্রী মোছাম্মৎ লাবণীকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দিনের রিমান্ডে নেও
য়া হয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ে করায় হত্যা!: রাজধানীর মিরপুর থানার পুলিশ জানায়, বুধবার রাত নয়টার দিকে কল্যাণপুরের ৩ নম্বর সড়কের একটি ছয়তলা বাড়ির তৃতীয় তলার বাসার ওয়ার্ডরোব থেকে সালাউদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। বাসায় তাঁর স্ত্রী লাবণী ও দুই কন্যাসন্তান ছিল। লাশটি মাথা নিচে ও পা ওপরে অবস্থায় লেপ ও চাদর দিয়ে মোড়ানো ছিল। ডান কাঁধে ও বাঁ ঊরুতে গভীর রক্তাক্ত জখম ছিল। রক্তমাখা একটি বঁটিও উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় লাবণীকে। মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দ্বিতীয় বিয়ে করায় লাবণী ও তাঁর পরিবারের লোকজন সালাউদ্দিনকে খুন করেছেন। গতকাল দুপুর পর্যন্ত এ ব্যাপারে হত্যা মামলা না হওয়ায় লাবণীকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। বিকেলে লাবণীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সালাউদ্দিনের ভগ্নিপতি নাজমুল হোসেন। লাবণীকে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো (শ্যোন অ্যারেস্ট) হবে। সালাউদ্দিনের ভগ্নিপতি নাজমুল বলেন, সালাউদ্দিন কল্যাণপুর কাঁচাবাজারে মুরগির ব্যবসা করতেন। ১৩ বছর আগে লাবণীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের ঘরে ছয় ও তিন বছরের দুই মেয়ে আছে। তবে পাঁচ বছর আগে কাউকে না জানিয়ে মিরপুরের দক্ষিণ পীরেরবাগের এক নারীকে বিয়ে করেন সালাউদ্দিন। ওই ঘরে তিন মাসের এক সন্তান আছে। দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি গত সপ্তাহে জানেন লাবণী। এ নিয়ে তাঁদের কলহ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। গত মঙ্গলবার কল্যাণপুরের বাসায় উভয় পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে সালিস বৈঠক হয়। বৈঠকে লাবণী ও তাঁর পরিবার দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিতে সালাউদ্দিনকে চাপ দেন। সালাউদ্দিন রাজি না হওয়ায় হাতাহাতি ও হট্টগোল হয়। আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর আবারও সালিস বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। নাজমুল বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে বৈঠক শেষে তিনি (নাজমুল) অন্য স্বজনদের নিয়ে আজিমপুরের বাসায় যান। ওই সময় সালাউদ্দিনের বাসায় লাবণীর পরিবারের লোকজন ছিলেন। সেদিন রাত ১০টার দিকে তিনি সালাউদ্দিনের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পান। পরে লাবণীর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে সালাউদ্দিনের খবর জানতে চাইলে লাবণী জানান, সালাউদ্দিন ঘুমাচ্ছেন। বুধবার সকাল আটটার দিকে লাবণী ফোন করে জানান, মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ঝগড়া করে সালাউদ্দিন বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন। কথাবার্তায় সন্দেহ হলে তিনি লাবণীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এতে লাবণী ক্ষিপ্ত হয়ে গালাগাল করে বলেন, ‘তোমরাই আমার স্বামীকে লুকাইছ। আমি তোমাদের বিরুদ্ধে মামলা করব।’ আত্মীয়স্বজনের বাসায় খোঁজ নিয়েও সালাউদ্দিনের হদিস না পেয়ে বুধবার রাত ১০টার দিকে তিনি (নাজমুল) মিরপুর থানায় ফোন করেন। থানা জানায়, সালাউদ্দিন খুন হয়েছেন। লাবণীই থানায় ফোন করেছেন—এমন কথা শোনা গেলেও ওসি তা নাকচ করে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বামীর অত্যাচারের কথা লিখে লাবণী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। কিন্তু বুধবার সকালে জানা গেল, তাঁর স্বামী নিখোঁজ। ঘটনা তদন্তে বাসায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে লাবণী পুলিশকে ওয়ার্ডরোবের ভেতরে স্বামীর লাশ দেখিয়ে দেন। লাশ দেখে মনে হচ্ছে, মঙ্গলবার রাতেই খুন করা হয়েছে। লাবণী এখনো হত্যার কথা স্বীকার করেননি। তিনি অসংলগ্ন কথা বলছেন। তিনি পুলিশকে বলেছেন, সালাউদ্দিন মঙ্গলবার রাতে ইয়াবা সেবন করছিলেন। একপর্যায়ে ঝগড়া শুরু হলে স্বামী তাঁকে বঁটি দিয়ে মারতে যান। তিনি চিৎকার দিয়ে স্বামীকে ধরে ফেলেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে স্বামীর শরীরে আঘাত লাগে। ওসি বলেন, নিহত সালাউদ্দিন সুঠামদেহী। ওই বাসা থেকে ইয়াবার মোড়ক উদ্ধার করা হলেও সালাউদ্দিন ইয়াবা সেবন করতেন না। লাবণীর চিৎকার-চেঁচামেচির সত্যতাও পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইয়াবাসহ বিভিন্ন বিষয় সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া লাশের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, একজনের পক্ষে এ হত্যা সম্ভব নয়। মামলার পলাতক পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল সালাউদ্দিনের লাশ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার আটপাড়ায় নেওয়া হয়েছে। দুই সন্তান থানায় মায়ের সঙ্গে আছে। চট্টগ্রামে মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার: চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার চিকদাইর ইউনিয়নের দক্ষিণ সত্তা গ্রামে ঘরের পাশে মাটি খুঁড়ে গত বুধবার রাতে দুদু মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী শাহনাজ বেগম এবং বাবলু নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। চট্টগ্রাম উত্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ পুলিশকে জানিয়েছেন, অন্য নারীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক থাকায় ঈদের দিন রাতে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তিনি বঁটি দিয়ে স্বামীর ঘাড়ে কোপ দেন। সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান স্বামী। পরে একজনের সহযোগিতায় তিনি ঘরের পাশে মাটি খুঁড়ে সেখানে লাশ পুঁতে রাখেন। এরপর সেখানে চুলা বানিয়ে রান্নাবান্নার কাজ করেন। পুলিশ জানায়, প্রতিবেশীরা জানতেন, দুদু মিয়া নিখোঁজ। কিন্তু শাহনাজের আচরণ ও কথায় সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা পুলিশকে বিষয়টি জানান। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শাহনাজ স্বামীর লাশ লুকিয়ে রাখার কথা স্বীকার করেন। তাঁর দেখানোমতে মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে শাহনাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। লাশ পুঁতে রাখতে সহযোগিতার অভিযোগে পরে ওই এলাকা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক বাবলুকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
No comments:
Post a Comment