চট্টগ্রাম নগরীর মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) না মানার অভিযোগ উঠেছে নগর উন্নয়ন সংস্থা সিডিএর বিরুদ্ধে। মহাপরিকল্পনার তোয়াক্কা না করে নির্মিত বহদ্দারহাট ফাইওভারের অভিজ্ঞতা সুখকর না হলেও উন্নয়ন দেখাতে নতুন নতুন ফাইওভার নির্মানে তৎপর রয়েছে সিডিএ। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিমান বন্দর হতে বারিক বিল্ডিং মোড় হয়ে শাহ আমানত ব্রিজ এবং বারিক বিল্ডিং হয়ে লালখান বাজার পর্যন্ত ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আরো একটি ফাইওভার
প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। অথচ নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, চট্টগ্রাম নগরীর কোন জংশনে ফাইওভার করার মতো সমপরিমান যানবাহন চলাচল করে না। অভিযোগ উঠেছে- চট্টগ্রাম নগরীর বিদ্যমান মহাপরিকল্পনায় এ ধরনের ফাইওভারের অস্তিত্ব নেই। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে ইতোমধ্যে নির্মিত বহদ্দারহাট ফাইওভার যানজট নিরসন করা দুয়ের কথা, বরং যানজট ও জনগণের দূভোর্গ আরো বেড়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদদের তথ্য অনুযায়ী, একটা জংশনে ঘণ্টয় ৫ হাজার যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করলে গোল চক্কর ও ঘণ্টায় সাড়ে আট হাজার যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করলে চ্যানেলাইজড জংশন তৈরি করতে হবে। এর বেশি চলাচল করলে তখন ফাইওভারের কথা চিন্তা করা যেতে পারে। অথচ সিডিএ’র নির্মিতব্য মুরাদপুর লালখান বাজার ফাইওভার প্রকল্পের সমীা প্রতিবেদনেই উল্লেখ রয়েছে, এই ফাইওভার দিয়ে প্রতি ঘণ্টায় ১১২৭টি গাড়ি চলাচল করবে। নগর পরিকল্পনাবিদ ইঞ্জিনিয়ার আলী আশরাফের মতে, এই মুহুর্তে চট্টগ্রাম শহরের যানজট নিরসনে মাস্টারপ্ল্যানে উল্লিখিত কয়েকটি নতুন সড়ক নির্মাণ জরুরি। কিন্তু তা না করে সিডিএ ফাইওভারে হাত দিচ্ছে। অথচ উন্নত বিশ্ব এখন ফাইওভার কনসেপ্ট থেকে সরে আসছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। নগর পরিকল্পনাবিদদের তথ্য অনুযায়ী, জেবিআইসির মাধ্যমে সিডিএর করা সমীায় বলা হয়েছে, বহদ্দারহাট মোড়ে প্রতি ঘণ্টায় যানবাহন চলাচল করে ২ হাজার ৭৯১টি, জিইসি মোড়ে প্রতি ঘণ্টায় যানবাহন চলে ৪ হাজার ৯০৪টি ও মুরাদপুর মোড়ে দুই হাজার ৭৭০টি। এ ছাড়া পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের ২০১২ সালের মে মাসে করা এক সমীায় দেখা গেছে, জিইসি মোড়ে প্রতি ঘণ্টায় যানবাহন চলাচল করে ৫ হাজার ২২৮টি। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করলে চট্টগ্রাম নগরের কোনো জংশনেই ফাইওভার নির্মাণের মতো সমপরিমাণ যানবাহন চলাচল করে না। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, যেসব ফাইওভারের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো চট্টগ্রামবাসীর সার্বিক কল্যাণে আসবে না। তা প্রমাণিত হলো বহদ্দারহাট ফাইওভার উন্মুক্ত হওয়ার পর। সারা দিন খুব নগণ্য সংখ্যক যানবাহন ফাইওভার দিয়ে চলাচল করছে। এসব বাস্তবতার পরেও মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৫.২ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাইওভার নির্মাণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। শাহ আমানত সেতুর উত্তর দিক থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাইওভার নির্মাণের প্রক্রিয়াও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। নগর পরিকল্পনাবিদরা দাবি করেন, এসব প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে, অথচ এর সিকি ভাগ টাকাও যদি ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে খরচ করা হয় তা হলে নগরীর যানজট নিরসন হয়ে যাবে। তা ছাড়া হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে যে ফাইওভার নির্মিত হবে তা ব্যবহারকারীর সংখ্যাও খুবই নগন্য বলে তারা মন্তব্য করেন।
No comments:
Post a Comment