র্তা-কর্মচারীদের পুনর্বাসনের জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় হলে তাঁদের বদলির প্রয়োজন পড়বে না। বাড়বে চাকরির বয়সও। এঁরা বলেন, দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউয়ের অভিজ্ঞতায়ও দেখা গেছে, গবেষণাসহ যেসব উদ্দেশ্যের কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা ঠিকমতো বাস্তবায়িত হয়নি। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিটির প্রধান এম বদরুদ্দোজা বলেন, মেডিকেল কলেজ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। আইনের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। শিগগিরই তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠবে। দ্রুত আইন পাসের পর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এই দুটি মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করলে ওই অঞ্চলের মানুষের জরুরি সেবা পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে—এ আশঙ্কা রূপান্তর কমিটির কোনো কোনো সদস্যও প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে কমিটি এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। এর আগে ২০১২ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু জনগণের চিকিৎসাসেবার সুযোগ সংকুচিত হবে—এ সমালোচনার মুখে একপর্যায়ে সরকার ওই উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে এসেছিল। সূত্রগুলো বলছে, দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউতে শয্যার অতিরিক্ত কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না। ৪৫টি বিভাগের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে জরুরি বিভাগ চালু আছে। কিন্তু কাছেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকায় সেখানে রোগীরা এখনো পর্যন্ত জরুরি চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দুটিই জনগণের একমাত্র ভরসা। এ ছাড়া এ রূপান্তরের বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। এক হাজার ৩০০ শয্যার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ৩০০ রোগী ভর্তি থাকে। আর এক হাজার ২০০ শয্যার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্বিগুণের কাছাকাছি রোগী ভর্তি থাকে। জরুরি বিভাগ খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিএমএ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার তাঁদের জানিয়েছে হাসপাতাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে। জরুরি সেবা ব্যাহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আইনের খসড়ার ৫৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে উন্নীত ও রূপান্তরক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ সকল সম্পদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা, সম্পত্তি, অর্থ ও দাবি হইবে।’ একই কথা বলা আছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের আইনের খসড়ায়। দলীয় বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়! জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট ছিল। এ ছাড়া বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাশিক্ষা ও মানুষের সেবাপ্রাপ্তিও বেড়েছে।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় হলে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা লাভবান হবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএসএমএমইউয়ের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তাঁরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলে শিক্ষকদের ৬০ বছরের বদলে ৬৫ বছরে অবসরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। চিকিৎসকদের বদলি হতে হবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আইপিজিএমআরকে বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সে সময় যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁরাই ১৯৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অবস্থান নেন এবং বিভিন্ন পদে আসীন হন। এর আগে আইপিজিএমআরে কর্মরত ভিন্নমতের লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ইচ্ছেমতো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন উপাচার্য এম এ হাদির বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, সে সময় পরীক্ষায় ফেল করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন কয়েক শ চিকিৎসক। জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় অর্ধশত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়। এঁদের একটি বড় অংশ নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে কাজ করছিলেন। শল্যচিকিৎসা অনুষদের পদোন্নতিবঞ্চিত একজন শিক্ষক বলেন, বিএনপি আমলে তাঁর পদোন্নতি হয়নি দলীয় আনুগত্য না থাকায়। আওয়ামী লীগ আমলেও হয়নি একই কারণে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তাঁর পদোন্নতি হয়। সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ও একজন চিকিৎসক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১৪ ধারায় উপাচার্যকে অস্থায়ীভাবে চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে। এ ক্ষমতার অপব্যবহার চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে হয়েছে। গবেষণার সুযোগ কি বাড়বে? ১৬ বছরের মধ্যে বিএসএমএমইউয়ের কোনো মৌলিক গবেষণার তথ্য দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫টি বিভাগের মোট শিক্ষক ৪২৯ জন। গত বছর তাঁদের মধ্যে আটটি বিভাগের ২২ জন শিক্ষক ও চিকিৎসা কর্মকর্তা গবেষণা করেছেন। সেবা বাড়বে? বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর সেবার মান বেড়েছে কি না, সে নিয়েও প্রশ্ন আছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, তিনি চেষ্টা করেও কাউকে আটটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালে ধরে রাখতে পারছেন না। বছর দুয়েক ধরে বৈকালিক সেবা চালু হয়েছে। কিন্তু তাতেও সবাই উৎসাহী নন। এ ছাড়া যেকোনো সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা খরচ বেশি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন নারীর স্বাভাবিক বা অস্ত্রোপচারে সন্তান হতে কোনো খরচ নেই। সরবরাহ না থাকলে সুতো কেনার টাকা দিতে হয়। এর দাম ৬০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। কেবিনে ভর্তি হলে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে বিএসএমএমইউতে ভর্তি একজন রোগী জানান, একই ক্ষেত্রে তাঁর খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। প্রতিটি ওষুধ তাঁকে কিনতে হয়। জানতে চাইলে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, এক হাজার ৫০০ শয্যার আরেকটি ইউনিট চালুর চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া সব বিভাগে জরুরি সেবা পাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এম ইকবাল আর্সলান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার মনে করছে আইপিজিএমআর (পিজি হাসপাতাল) ৩৫ বছরে যা পারেনি, বিএসএমএমইউতে তা সম্ভব হচ্ছে। চিকিৎসা ব্যয়ের একটা অংশ রোগী বহন করছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ছে। বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কাগজে-কলমে ছিল। রোগীদের বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো। তার চেয়ে কম খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। বিএসএমএমইউয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর আগে ডিগ্রির কোনটির কী মান, একাধিক ডিগ্রি চালু থাকবে কি না, এসব প্রশ্নের সুরাহা হওয়া দরকার। {প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাজশাহীতে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ ও চট্টগ্রামে নিজস্ব প্রতিবেদক প্রণব বল}
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Sunday, October 19, 2014
দলীয় বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে:প্রথম অালো
র্তা-কর্মচারীদের পুনর্বাসনের জন্য এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় হলে তাঁদের বদলির প্রয়োজন পড়বে না। বাড়বে চাকরির বয়সও। এঁরা বলেন, দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউয়ের অভিজ্ঞতায়ও দেখা গেছে, গবেষণাসহ যেসব উদ্দেশ্যের কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, তা ঠিকমতো বাস্তবায়িত হয়নি। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিটির প্রধান এম বদরুদ্দোজা বলেন, মেডিকেল কলেজ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। আইনের খসড়া প্রায় চূড়ান্ত। শিগগিরই তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠবে। দ্রুত আইন পাসের পর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে এই দুটি মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করলে ওই অঞ্চলের মানুষের জরুরি সেবা পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে—এ আশঙ্কা রূপান্তর কমিটির কোনো কোনো সদস্যও প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে কমিটি এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। এর আগে ২০১২ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু জনগণের চিকিৎসাসেবার সুযোগ সংকুচিত হবে—এ সমালোচনার মুখে একপর্যায়ে সরকার ওই উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে এসেছিল। সূত্রগুলো বলছে, দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিএসএমএমইউতে শয্যার অতিরিক্ত কোনো রোগী ভর্তি করা হয় না। ৪৫টি বিভাগের মধ্যে মাত্র পাঁচটিতে জরুরি বিভাগ চালু আছে। কিন্তু কাছেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থাকায় সেখানে রোগীরা এখনো পর্যন্ত জরুরি চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। কিন্তু চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দুটিই জনগণের একমাত্র ভরসা। এ ছাড়া এ রূপান্তরের বিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। এক হাজার ৩০০ শয্যার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ৩০০ রোগী ভর্তি থাকে। আর এক হাজার ২০০ শয্যার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্বিগুণের কাছাকাছি রোগী ভর্তি থাকে। জরুরি বিভাগ খোলা থাকে ২৪ ঘণ্টা। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিএমএ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার তাঁদের জানিয়েছে হাসপাতাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে। জরুরি সেবা ব্যাহত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আইনের খসড়ার ৫৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে উন্নীত ও রূপান্তরক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইবার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ সকল সম্পদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ, অধিকার, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, সুবিধা, সম্পত্তি, অর্থ ও দাবি হইবে।’ একই কথা বলা আছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীতকরণের আইনের খসড়ায়। দলীয় বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়! জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট ছিল। এ ছাড়া বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাশিক্ষা ও মানুষের সেবাপ্রাপ্তিও বেড়েছে।’ তবে বিশ্ববিদ্যালয় হলে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা লাভবান হবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএসএমএমইউয়ের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তাঁরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলে শিক্ষকদের ৬০ বছরের বদলে ৬৫ বছরে অবসরে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। চিকিৎসকদের বদলি হতে হবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে আইপিজিএমআরকে বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সে সময় যাঁরা বিরোধিতা করেছিলেন, তাঁরাই ১৯৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অবস্থান নেন এবং বিভিন্ন পদে আসীন হন। এর আগে আইপিজিএমআরে কর্মরত ভিন্নমতের লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ইচ্ছেমতো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন উপাচার্য এম এ হাদির বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, সে সময় পরীক্ষায় ফেল করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন কয়েক শ চিকিৎসক। জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রায় অর্ধশত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করা হয়। এঁদের একটি বড় অংশ নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে কাজ করছিলেন। শল্যচিকিৎসা অনুষদের পদোন্নতিবঞ্চিত একজন শিক্ষক বলেন, বিএনপি আমলে তাঁর পদোন্নতি হয়নি দলীয় আনুগত্য না থাকায়। আওয়ামী লীগ আমলেও হয়নি একই কারণে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে তাঁর পদোন্নতি হয়। সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ও একজন চিকিৎসক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ১৪ ধারায় উপাচার্যকে অস্থায়ীভাবে চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে। এ ক্ষমতার অপব্যবহার চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ব্যাপকভাবে হয়েছে। গবেষণার সুযোগ কি বাড়বে? ১৬ বছরের মধ্যে বিএসএমএমইউয়ের কোনো মৌলিক গবেষণার তথ্য দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫টি বিভাগের মোট শিক্ষক ৪২৯ জন। গত বছর তাঁদের মধ্যে আটটি বিভাগের ২২ জন শিক্ষক ও চিকিৎসা কর্মকর্তা গবেষণা করেছেন। সেবা বাড়বে? বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর সেবার মান বেড়েছে কি না, সে নিয়েও প্রশ্ন আছে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, তিনি চেষ্টা করেও কাউকে আটটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালে ধরে রাখতে পারছেন না। বছর দুয়েক ধরে বৈকালিক সেবা চালু হয়েছে। কিন্তু তাতেও সবাই উৎসাহী নন। এ ছাড়া যেকোনো সরকারি হাসপাতালের তুলনায় বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা খরচ বেশি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন নারীর স্বাভাবিক বা অস্ত্রোপচারে সন্তান হতে কোনো খরচ নেই। সরবরাহ না থাকলে সুতো কেনার টাকা দিতে হয়। এর দাম ৬০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। কেবিনে ভর্তি হলে প্রতিদিন অতিরিক্ত ৫৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে বিএসএমএমইউতে ভর্তি একজন রোগী জানান, একই ক্ষেত্রে তাঁর খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। প্রতিটি ওষুধ তাঁকে কিনতে হয়। জানতে চাইলে বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, এক হাজার ৫০০ শয্যার আরেকটি ইউনিট চালুর চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া সব বিভাগে জরুরি সেবা পাওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব এম ইকবাল আর্সলান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার মনে করছে আইপিজিএমআর (পিজি হাসপাতাল) ৩৫ বছরে যা পারেনি, বিএসএমএমইউতে তা সম্ভব হচ্ছে। চিকিৎসা ব্যয়ের একটা অংশ রোগী বহন করছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ছে। বিনা মূল্যে চিকিৎসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা কাগজে-কলমে ছিল। রোগীদের বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হতো। তার চেয়ে কম খরচে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। বিএসএমএমইউয়ের সাবেক সহ-উপাচার্য রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর আগে ডিগ্রির কোনটির কী মান, একাধিক ডিগ্রি চালু থাকবে কি না, এসব প্রশ্নের সুরাহা হওয়া দরকার। {প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাজশাহীতে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ ও চট্টগ্রামে নিজস্ব প্রতিবেদক প্রণব বল}
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment