Monday, November 10, 2014

একজন মানুষও যেন ক্ষুধায় মারা না যায়:কালের কন্ঠ

দেশে একজন মানুষও যেন ক্ষুধায় মারা না যায় সে লক্ষ্য নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে যেতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্
রী শেখ হাসিনা। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ও শস্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘খাদ্যটা যদি সঠিক সময়ে দিতে না পারি, তাহলে কাদের জন্য কাজ করছি?’ গতকাল রবিবার খাদ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতেই হবে। একটি মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না। যেভাবেই হোক মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে হবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সত্যিই এক দুরূহ কাজ। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত নির্দেশনা ও রূপরেখা অনুসরণ করে এযাবৎ নেওয়া আমাদের পদক্ষেপগুলোর ভালো ফল পাওয়া গেছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের একটি লক্ষ্য আছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। আমরা অন্যের কাছে হাত পাততে চাই না। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমরা খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে, কৃষকদের কাছে কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করতে, কৃষির আধুনিকায়নে এবং গবেষণার ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিতে পদক্ষেপ নিয়েছি।’ এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর সরকার ও পূর্ববর্তী বিএনপি সরকারের মধ্যকার পার্থক্য উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের নীতি হচ্ছে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। কিন্তু বিএনপি ও তার সাবেক অর্থমন্ত্রীর নীতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত- দাতাদের কাছে সাহায্য চাওয়া।’ অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া এই মন্ত্রণালয়ের সচিব মুশফিকা ইকফাতও বক্তব্য দেন। এতে খাদ্যমন্ত্রী দারিদ্র্য হ্রাসে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সময়সীমার আগে সাফল্য অর্জনের জন্য এফএও কর্তৃক ৩৮ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে দেওয়া ‘ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড’ প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। শেখ হাসিনা স্মরণ করিয়ে দেন যে ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ প্রথম খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিল। ভয়াবহ বন্যার পর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কিছু দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে এটা সম্ভব হয়েছিল বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার চিরকাল অন্যের কাছে হাত পাতার নীতিতে বিশ্বাস করে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার যারা খেতে পারত না তাদের জন্য এক বেলা, যারা এক বেলা খেত তাদের জন্য দুই বেলা এবং যারা দুই বেলা খেত তাদের জন্য দিনে তিন বেলা খাবার নিশ্চিত করেছে। এখন সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার লক্ষ্য অনুযায়ী সব মানুষের পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বছরের পর বছর জনসংখ্যা বেড়েছে। অথচ আবাদি জমি কমেছে। কিন্তু আমাদের কৃষি উৎপাদন কখনো কমেনি, বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৬ সালে মোট খাদ্য উৎপাদন ছিল ১ দশমিক ৯০ কোটি মেট্রিক টন, যা বর্তমানে ৩ দশমিক ৬৮ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। শেখ হাসিনা জুতা বানানোর জন্য একটি বেসরকারি ইপিজেড প্রমোটারের কাছে মাত্র এক টাকায় চট্টগ্রামে সিএসডি গুদামের জমি বিক্রি করে দেওয়ায় বিএনপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর জাপানের আর্থিক সহযোগিতায় ৫০টি গুদাম পুনর্নির্মাণ করা হয়। কিন্তু বিক্রির পর গুদামগুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে ছয় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে গুদামগুলো ফেরত নেয় এবং কারখানাগুলো অন্যত্র স্থানান্তর করে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্যোগপ্রবণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সব সময় সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। যেকোনো জরুরি মুহূর্তে খাদ্য আমদানি এড়াতে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদের জন্য আমাদের আধুনিক মজুদ সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণার মাধ্যমে তাঁর সরকার কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্য এনেছে। লবণাক্ততা, পানি ও খরাসহিষ্ণু বিভিন্ন জাতের ধান উৎপাদনে সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে ধান উৎপাদন এবং উত্তরাঞ্চলের স্বল্প পানি এলাকাকে গম, ভুট্টা ও অন্যান্য সবজি উৎপাদনে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনেরও একটি পরিকল্পনা নিয়েছে তাঁর সরকার। এ লক্ষ্যে সাতটি বিভাগে সাতটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করা হবে, যাতে খুব অল্প খরচে এসব এলাকায় পণ্য পরিবহন করা যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সরকারের মৌলিক দায়িত্ব এবং তাঁর সরকার তা-ই করছে। তিনি বলেন, নতুন জাতের ধান বাংলার মাটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা এবার একটি সুগন্ধি জাতের ধান উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিয়েছি। কয়েক বছর আগে যে জাতটি আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম।’ সূত্র : বাসস।

No comments:

Post a Comment