কাতারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ডিজিটাল পাসপোর্ট বানানোর কার্যক্রম চলছে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বাংলাদেশ দূতাবাসে ছবি তোলার দু’টি মেশিনই তিন সপ্তাহ ধরে নষ্ট হয়ে আছে। এর ফলে দূরদূরান্ত থেকে দূতাবাসে আসা শত শত প্রবাসী চরম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। হয়রানির শিকার প্রবাসীরা আশঙ্কা করছেন, দূতাবাসে পাসপোর্ট তৈরির কার্যক্রম যে গতিতে চলছে তাতে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে প্রায় পৌনে দু
ই লাখ শ্রমিক পাসপোর্ট জটিলতার মধ্যে পড়তে পারেন। এ নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ দূতাবাস ও ভুক্তভোগী শ্রমিকদের কাছ থেকে জানা গেছে, বর্তমানে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাবে আড়াই লাখ শ্রমিক কাতারে অবস্থান করছেন। হাতে লেখা পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০১৫ সালের ২৪ শে নভেম্বর। ওই সময়কে টার্গেট করে দূতাবাসে ডিজিটাল পাসপোর্ট তৈরির কার্যক্রম শুরু হলেও সেটি চলছে ধীরগতিতে। অনেক শ্রমিক সময়মতো দূতাবাসে গিয়ে তাদের পাসপোর্ট তুলতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তাদের জানানো হচ্ছে, ছবি তোলার দু’টি মেশিন নষ্ট। এতে ভোগান্তির শিকার শ্রমিকেরা দূরদূরান্ত থেকে এসেও খালি হাতে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দূতাবাস সূত্র জানায়, প্রতিদিন প্রতি পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে যদি ১০ মিনিট করে সময় লাগে তাহলে ঘণ্টায় ছয়জন শ্রমিকের পাসপোর্ট দেয়া সম্ভব হয়। দূতাবাসের অফিস সময় সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। সে হিসাবে সাত ঘণ্টায় একটি ক্যামেরায় ৪২ জনের ছবি তোলা যায়। দু’টি ক্যামেরায় ছবি তোলা যায় ৮৪ জনের। অনেকে ডিজিটাল পাসপোর্ট নিয়ে কাতারে আসছেন। আবার অনেকে ছুটিতে দেশে যাওয়ার পর ফেরার সময় ডিজিটাল পাসপোর্ট নিয়ে আসছেন। ওই হিসেবে ৮৬ জনের সাথে আরো ১৬ জন যদি ধরা হয়, তাহলে গড়ে প্রতিদিন ১০০ জনের ছবিসহ পাসপোর্ট জমা তৈরি করা সম্ভব। এর মধ্যে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দুই দিন বাদ দিলে গড়ে মাসে ২২ দিন সময় পাওয়া যায়। সে হিসাবে ২২ দিনে ২২০০ শ্রমিককে পাসপোর্ট ডেলিভারি দিতে পারছে দূতাবাস। বছরের হিসাবে তা দাঁড়ায় ২৫-২৬ হাজার। জানা যায়, এমনিতে প্রায় ৪০ হাজার ডিজিটাল পাসপোর্টের কার্যক্রম অসম্পন্ন অবস্থায় পড়ে আছে। সব মিলিয়ে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত দূতাবাস থেকে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার পাসপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে। বাকি পৌনে দুই লাখ শ্রমিকের পাসপোর্ট না পাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। গতকাল শনিবার রাতে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমাদের সার্ভারটা কয়েক দিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। যার কারণে ডিজিটাল পাসপোর্টের কার্যক্রম বন্ধ। তবে আজকের (শনিবার) মধ্যে ঢাকা থেকে মেশিন চলে আসছে। আশা করছি রাতেই মেশিনটি চলে এলে সকাল থেকেই আমরা আবার পুরোদমে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করে ছবি তোলার কার্যক্রম শুরু করতে পারব। ডিজিটাল পাসপোর্টের জন্য দূরদূরান্ত থেকে শ্রমিকরা এসে দূতাবাসে হয়রানি হচ্ছেন কি নাÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি ২০১৩ সালের মে মাসে এখানে যোগ দিয়েছি। তখন থেকেই প্রতিদিন শতাধিক পাসপোর্ট দিচ্ছি। এর পরও শ্রমিকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সে জন্য দূতাবাস থেকে শ্রমিকদের যে তারিখে আসতে বলা হচ্ছে, সমস্যার কারণে তাদের ওই তারিখের চার-পাঁচ দিন আগেই মোবাইলে পরে আসার জন্য জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখানে বেশির ভাগই শ্রমিক। তাই আমরা পাসপোর্ট প্রদানকার্যক্রমে গতি আনতে আরো কয়েকটি ছবি তোলার মেশিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রিকুইজিশন দিয়েছি। সেগুলো চলে এলে তখন প্রতিদিন গড়ে দেড় শ’ পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হবে। এখানে শনিবার সরকারি বন্ধ থাকলেও দূতাবাসে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
No comments:
Post a Comment