Thursday, November 27, 2014

বিপর্যস্ত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়:প্রথম অালো

প্রতিষ্ঠার পর মাত্র ছয়টি বছর পার করেছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে একের পর এক আন্দোলন। কখনো দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে, কখনো বা নিজেদের সুবিধা আদায় না হওয়ার প্রতিবাদে নতুন উপাচার্যকে অসহযোগিতার নামে। এতে থেমে থেমে বন্ধ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিঘ্নিত হচ্ছে পড়াশোনার পরিবেশ। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। শ
িক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় পরের বছর ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল। শুরুতে বিভাগ ছিল ছয়টি। বর্তমানে রয়েছে ২১টি। আর শিক্ষার্থীদের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। শিক্ষক সমিতির আন্দোলন চলার মধ্যেই গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রী হলে জোরপূর্বক ঢুকে হট্টগোল করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এর জের ধরে নিরাপত্তার দাবিতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন হলের আবাসিক ছাত্রীরা। পরে এই হলে নতুন প্রভোস্ট ও ছয়জন সহকারী প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সূত্র এবং সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির উপাচার্য হটাও আন্দোলনের জেরে গত বছর অব্যাহতি দেওয়া হয় উপাচার্য আবদুল জলিল মিয়াকে। এ কে এম নূর-উন-নবীকে করা হয় নতুন উপাচার্য। এবার তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুরু করেছেন এক নতুন আন্দোলন ‘অসহযোগিতার আন্দোলন’। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নতুন উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা ছাড়াও ২৪ দিন ধরে চলছে নতুন এই আন্দোলন। ফলে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করেছে। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের কারণে উপাচার্য আবদুল জলিল মিয়ার আমলে ২০১২ সালের অক্টোবর থেকে গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয় তিনবার। আর উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবীর যোগদানের দেড় বছরের মধ্যে তাঁকে দুবার দীর্ঘ সময় নিজ কক্ষে করা হয় অবরুদ্ধ। এসব আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কখনো এককভাবে শিক্ষকেরা, কখনো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, আবার কখনো উভয়ে মিলেমিশে। উপাচার্য আবদুল জলিল মিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের দাবিতে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি শিক্ষকেরা দুর্নীতিবিরোধী গণমঞ্চ বানিয়ে শুরু করেছিলেন তাঁকে হটানোর আন্দোলন। ফলে ওই বছরের অক্টোবরে ১৫ দিন, পরের বছরের (২০১৩ সাল) ১০ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি দেড় মাসের বেশি এবং একই বছরের ২১ এপ্রিল থেকে ৫ মে আরও ১৪ দিন বন্ধ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনের মুখে আবদুল জলিল মিয়াকে গত বছরের ৫ মে অব্যাহতি দেওয়া হয়। একই দিন নতুন উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন বর্তমান উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী। তাঁর যোগদানের পরের মাসেই শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাঁদের বকেয়া বেতনের দাবিতে একটানা পাঁচ দিন অবস্থান করেন তাঁর কক্ষে। আর চলতি বছরের জুলাইয়ে ১৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাঁদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে ৩৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন তাঁকে। এখন উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষক সমিতির অসহযোগিতার আন্দোলন চলছে পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকদের ‘অর্জিত সময়’ থেকে প্রাপ্য সুবিধাদি না দেওয়ার অভিযোগে। গত ২ নভেম্বর এ আন্দোলন শুরু হয়ে তা চলছে এখনো। সম্প্রতি শিক্ষক সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৪২তম সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে ২৭ জন প্রভাষককে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা এর অনেক আগেই পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেন। কিন্তু তাঁদের পদমর্যাদা ও প্রাপ্য সুবিধাদি সভার দিন থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এতে তাঁরা ক্ষুব্ধ। ক্ষোভ নিরসনে গত ২৭ অক্টোবর সমিতি সাধারণ সভার মাধ্যমে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয়। তবে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। এ কারণেই উপাচার্যের সঙ্গে সব বিষয়ে অসহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন প্রথম পাঁচটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্নাতক ডিগ্রি শেষ করলেও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির নীতিমালা প্রণয়ন বিষয়ে উপাচার্য উদাসীন এমন অভিযোগ শিক্ষক সমিতির। এ কারণে ওই শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর বিভাগের ক্লাস করতে পারছেন না। উপাচার্য বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে না থেকে ঢাকায় অবস্থান করেন বলেও অভিযোগ করা হয় সমিতির পক্ষ থেকে। অসহযোগিতার এই আন্দোলন চালানোর পাশাপাশি চলতি মাসের শুরুতে ১২ জন শিক্ষক প্রশাসনিক ও একাডেমিক ২৭টি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। আন্দোলনরত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্যের কাছে কোনো দাবি নিয়ে যাওয়া হলে তিনি কিছুই শুনতে চান না। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চেয়েছি। কিন্তু হয়নি।’ অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী বলেন, ‘একই কথা সাংবাদিকদের বারবার বলতে হচ্ছে। শিক্ষকদের পদোন্নতি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিন্ডিকেটের সভার দিন থেকে পদোন্নতির সব সুবিধা তাঁরা ভোগ করবেন। কিন্তু এর পরও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ স্নাতকোত্তর ডিগ্রির নীতিমালা না হওয়া প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘এই নীতিমালা প্রণয়ন বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগীয় প্রধানদেরই দায়িত্ব। কিন্তু তা না করে আমার ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমি আলোচনা করতে চাইনি এ অভিযোগ ঠিক নয়।’

No comments:

Post a Comment