Thursday, November 27, 2014

একেই বলে মনোবল!:প্রথম অালো

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার ঈশ্বরচন্দ্র সূত্রধর আর লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বাবুল হোসেন—দুই শিশুই জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদের দুই হাতই অকেজো। কিন্তু তাতে কী। পাহাড়সম এ প্রতিবন্ধকতা এতটুকু দমিয়ে রাখতে পারেনি তাদের। দৃঢ় মনোবলে ভর করে বাধাকে পায়ে ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।  ঈশ্বরচন্দ্র (১০) এবার দিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা এবং বাবুল (১৪) দিয়েছে জেএসসি পরীক্ষা। মুখে কলম ধরে লিখে পরীক্
ষা দিচ্ছে তারা। গরিব পরিবারের দুজনই এভাবে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চালিয়ে যাচ্ছে লেখাপড়া। উল্লাপাড়ার পাইকপাড়া গ্রামের প্রফুল্ল চন্দ্র সূত্রধর ও কুন্তি রানীর ছেলে ঈশ্বরচন্দ্র সূত্রধর। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত শক্তিহীন। গত মঙ্গলবার উল্লাপাড়ার বালসাবাড়ি হাজি আমিনুল উচ্চবিদ্যালয় প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মুখে কলম ধরে পরীক্ষার খাতায় লিখছে ঈশ্বরচন্দ্র। মুখ দিয়ে এমন সুন্দর করে যে লেখা যায়, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। ঈশ্বরচন্দ্রের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুই ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোট। ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর দিনমজুর বাবা আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। এ অবস্থায় বিবাহিত বোন রেবা রানী লালন-পালন করেন তাকে। ঈশ্বরচন্দ্রের অদম্য ইচ্ছার কারণেই রেবা রানী তাঁকে পারসোনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এর পর থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক রেজাউল কবিরের সহযোগিতায় সে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষা শেষে কথা হয় ঈশ্বরচন্দ্রের সঙ্গে। সে জানায়, বোন রেবা রানী ও স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতায় সে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে। তার ইচ্ছা উচ্চশিক্ষিত হয়ে একজন উপযুক্ত মানুষ হবে। ওদিকে পাটগ্রামের দোইয়ালেরটারি গ্রামের বাবুল হোসেনের জন্মগতভাবে দুই হাত স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক ছোট ও শক্তিহীন। তবু হারেনি সে। আর দশটা ছেলের মতোই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। ১৪ নভেম্বর জেএসসি পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন উপজেলার মির্জারকোট হাজি মহিমুদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বাবুল মুখে কলমের গোড়া কামড়ে ধরে লিখে যাচ্ছে। কলমটি যেন এদিক-ওদিক না সরে, সে জন্য ছোট দুই হাতের আঙুল দিয়ে কলম ঠেলে ধরছে। বাবুলের বাবা আবদুল করিম কৃষক। আবাদ করে যা পান তাই দিয়েই চলে সংসার। আর মা সখিনা খাতুন গৃহিণী। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট বাবুল হোসেন। পরীক্ষা শেষে বাবুল জানায়, বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যেতে সমস্যা হয় তার। সমস্যা হয় বইয়ের পাতা ওল্টাতেও। এর পরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে জেএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত সে এসেছে। ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করে একটি চাকরি নিয়ে পরিবারের অভাব দূর করাই স্বপ্ন তার।

No comments:

Post a Comment