Sunday, November 30, 2014

এখন খিস্তিখেউড় হয় না সংসদে:প্রথম অালো

পরাজয়ের ভয়ে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে আসেননি। তবে একদিকে ভালোই হয়েছে। এখন আর সংসদে খিস্তিখেউড় হয় না। আজেবাজে বক্তব্য শুনতে হয় না। এ নির্বাচনে দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এসেছে। গতকাল শনিবার বিকেলে হবিগঞ্জের নিউফিল্ডে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকালে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ব্যাপক সন্ত্রাস সৃষ্টি ও মানুষ খুনের অভিযোগ তোলেন। জনসভ
ায় তুমুল করতালির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হবিগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া তিনি শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভাকে উপজেলায় উন্নীত করারও ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী ২৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচন বন্ধ করার জন্য বাসে আগুন দিয়েছেন। মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। তিনি নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছেন। তিনি আসলে কী চেয়েছিলেন? দেশে সামরিক শাসন আসুক? থাইল্যান্ডের মতো পরিস্থিতি হোক? থাইল্যান্ডে নির্বাচন হয়নি। তাই সামরিক শাসন জারি হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াত-বিএনপি মিলে ইসলাম ধর্মের নামে রাজনীতি করে। কিন্তু তারা মসজিদে আগুন দেয়। শত শত পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ায়। প্রধানমন্ত্রী বিগত সময়ে শিক্ষা খাতে তাঁর সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, বেগম জিয়ার পড়াশোনার দিকে খেয়াল নেই। তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় কেবল উর্দু আর অঙ্কে পাস করেছেন। তাই তিনি উর্দু ভালো জানেন। তাঁর হৃদয়ে পাকিস্তান। অঙ্কে পাস করেছেন। কীভাবে দুর্নীতি করে টাকা-পয়সা কামাই করবেন, সে হিসাব-নিকাশ রক্ষা করতে জানেন। শেখ হাসিনা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের উৎপাদন কমিয়েছেন। তবে গ্রেনেড ও বোমা হামলার উন্নতি ঘটিয়েছেন। তাঁর সময়ে হবিগঞ্জের কৃতী সন্তান সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে গ্রেনেড হামলায় হত্যা করা হয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার এবং সিলেটের সাবেক মেয়র কামরানের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। সারা দেশে এক দিনে ৫০০ স্থানে বোমা হামলা হয়েছে। তাঁর সময়ে সন্ত্রাস, মানুষ খুন আর মানি লন্ডারিংয়ের উন্নতি হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়ে লাখ লাখ শহীদের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। এর জন্য একদিন জনতার আদালতে তাঁর বিচার হবে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশে উন্নয়ন হয়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর আমরা এখন খাদ্য রপ্তানি করছি। দেশে কোনো লোক গৃহহারা থাকবে না। হবিগঞ্জে কোনো গৃহহারা থাকলে তালিকা দিন। আমরা তাদের পুনর্বাসন করব। আমরা সব মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে চাই।’ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সাংসদ আবু জাহিরের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তৃতা করেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সংস্কৃতিবিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ স্থানীয় নেতারা। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড সম্প্রসারণ কাজ উদ্বোধন: প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে নবীগঞ্জে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড সম্প্রসারণ এবং বিবিয়ানা-ধনুয়া গ্যাস পাইপলাইন উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি সুসংহত জ্বালানি খাত গড়ে তুলতে চাই। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ছিল চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। আর বর্তমানে ১১ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ক্ষমতা দাঁড়াবে ২০ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সঞ্চালন ও বিতরণ খাতেও ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং শেভরনের প্রতিনিধি বক্তব্য দেন। অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্প: প্রধানমন্ত্রী বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্প-৩, শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর, জেলা আধুনিক স্টেডিয়াম, হবিগঞ্জ নার্সিং ইনস্টিটিউট, জেলা সার্ভার স্টেশন উদ্বোধন, বিবিয়ানা-ধুনুয়া ৩৬ ইঞ্চি গ্যাসবিশিষ্ট উচ্চচাপ পাইপ সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন, ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়ক (এন-২) থেকে বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্রকল্পের সংযোগ সড়কের উদ্বোধন, বিজনা সেতু রসুলগঞ্জ ভায়া রইছগঞ্জ পানিউমদা ৯০ দশমিক ১০০ মিটার গার্ডার আরসিসি সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তরসহ ২৩ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে গোটা হবিগঞ্জে ছিল উৎসবের আমেজ। গোটা শহর ও শহরের প্রবেশমুখের কয়েক মাইলজুড়ে ১০ গজ পর পর সুসজ্জিত তোরণ চোখে পড়েছে। শহরের নিউফিল্ডের জনসভায়ও বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখা গেছে।

No comments:

Post a Comment