ভয়াবহ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। কতিপয় অদক্ষ ও অযোগ্য পাইলট এবং ক্রু দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা, চোরাচালানি চক্রে দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি এবং বিমানবন্দরের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা এ আশংকা তীব্রতর করেছে। এসব কারণে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। এ পরিস্থিতিতে পরিচালক ফ্লাইট অপারেশনের (ডিএফও) ক্যাপ্টেন তোফায়েল আ
হমদের পাইলট লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটসহ সব ধরনের ভিভিআইপি ফ্লাইট থেকে অফলোডের সুপারিশও করেন সিভিল এভিয়েশনের নিযুক্ত বিদেশী ইন্সট্রাক্টর ক্যাপ্টেন মারিও ডি বরোডা। রাজস্ব বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদন, ভিভিআইপিসহ বিমানের অন্যান্য ফ্লাইটের নিরাপত্তা ত্রুটির একাধিক নজির, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টে রাষ্ট্রীয় এই ক্যারিয়ারের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এনবিআরের চোরাচালান সংক্রান্ত প্রতিবেদনে নিরাপত্তার বিষয় এসেছে। অসাধু পাইলটদের ত্রুটিপূর্ণ ট্রেনিং, যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিমান চালানোর জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। বিমানের এমডি ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহম্মেদ বিমানের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে সরাসরি কিছুই বলেননি। তিনি শামীম নজরুল ও ক্যাপ্টেন তোফায়েলের বিরুদ্ধে মারিও ডি বরোডার অভিযোগ হাতে পাননি বলে জানান। জনসংযোগ শাখার মাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেন, বিমানের কোনো অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অসাধু আচরণ ঢালাওভাবে সব কর্মচারীর ওপর চাপানো সঠিক নয়। অসাধু কর্মচারী সব সময়ই সুযোগ সন্ধানী। যারা চোরাচালান ও অন্যান্য অসাধু কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, গত ওআইসি সম্মেলনে যোগদানের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাইজেরিয়াগামী ফ্লাইট বিনা নোটিশে নির্ধারিত নিরাপত্তা কর্মীসহ ৩ জন অনুপস্থিত ছিলেন। ওই ফ্লাইটে নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সিকিউরিটি ট্যাগবিহীন ২০ কেজি আমের ঝুড়ি তুলে দেয়া হয়েছিল। কিছুদিন আগে চীন সফরের সময়ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত একটি কনটেইনার বিমান থেকে গায়েব হয়ে যায়। একই ঘটনা ঘটেছিল প্রধানমন্ত্রীর মালদ্বীপ-ঢাকা ফ্লাইটেও। এ ফ্লাইটে ‘ভিভিআইপি লেখা দুটি স্যুটকেস এসেছিল। এতে নিরাপত্তা ট্যাগ ছিল না। গত বছরের ১২ নভেম্বর ফ্লাইটটি (বিজি-১০০৪) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলেও দীর্ঘদিন পর্যন্ত লাগেজ দুটির মালিক পাওয়া যায়নি। নিরাপত্তা-তল্লাশি ছাড়া ভিভিআইপি ফ্লাইটে আমের ঝুড়ি, দুটি স্যুটকেস তুলে দেয়ার ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর আকাশ পথের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রীর বেলারুশ সফর শেষে ঢাকা ফেরার পথে রহস্যজনক কারণে ফাস্ট অফিসার শামীম নজরুলের ফ্লাইট (টেকঅপ) উড্ডয়নের ঘটনা ছিল খুবই উদ্বেগের বিষয়। এই ঘটনার কোনো তদন্তও হয়নি। এসব কারণে বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঘুষের বিনিময়ে পাইলট ট্রেনিং ও লাইসেন্স অর্জন, অবৈধভাবে ট্রেনিংয়ের পর লাইসেন্স নেয়া ও রেগুলেটরি কমিশনের দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে আকাশ পরিবহনের নিরাপত্তা ঝুঁকিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। চোরাচালানের কাজে ভাড়ায় খাটছে বিমানের অসাধু পাইলট-কেবিন ক্রু থেকে শুরু করে সব বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী। নির্বিঘ্নে বিমানে উঠছে একের পর এক চোরাচালানের পণ্য। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের ফ্লাইটের স্ক্যানিং ব্যবস্থাও খুবই দুর্বল। এ অবস্থায় স্বর্ণ কিংবা অন্যান্য চোরাচালান পণ্যের সঙ্গে যে কেউ নাশকতার জন্য বোমা অথবা বড় ধরনের এক্সপ্লোসিভ নিয়ে ফ্লাইটে উঠলেও কেউ বুঝতে পারবে না। বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, বিমানের পরিচালক ফ্লাইট অপারেশন (ডিএফও) ক্যাপ্টেন তোফায়েল আহমদের ফ্লাইট পরিচালনা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। পাইলট ট্রেনিং মনিটরিংয়ে জড়িত বেবিচক নিযুক্ত বিদেশী ইনসট্রাক্টর মারিও ডি বরড়া সম্প্রতি একটি মেইল বার্তায় প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন। ১৬ নভেম্বর সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক ফ্লাইট সেফটি গ্র“প ক্যাপ্টেন নাজমুল আনামকে তিনি এই বার্তা পাঠান। এতে ফ্লাইট সেফটি সংক্রান্ত ১৫টি মারাত্মক তথ্য তুলে ধরেন। মারিও অবিলম্বে ক্যাপ্টেন তোফায়েলের পাইলট লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশ করেন। একই সঙ্গে তিনি ক্যাপ্টেন তোফায়েলকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ রাষ্ট্রীয় ভিভিআইপির কোনো ফ্লাইট না দেয়ারও সুপারিশ করেন। মেইল বার্তায় তিনি বলেছেন, ২০১৩ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক ট্রেনিংয়ে ক্যাপ্টেন তোফায়েল সবকিছুতে ফেল করেন। কিন্তু বিমানের ডেপুটি চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল অতিরিক্ত সময় দিয়ে ক্যাপ্টেন তোফায়েলকে জোর করে পাস করাতে সহায়তা করান। যে কোনো এয়ারলাইন্সের জন্য এটি ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। নাজমুল আনাম যুগান্তরকে এই চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, চিঠিটি খুবই স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ। চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রীয় ভিভিআইপিদের ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়েও বেশ কিছু সুপারিশ আছে। নাজমুল আনাম জানান, তিনি বিমানের ডিএফও ক্যাপ্টেন তোফায়েল আহমদের ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়ে মারিওর সুপারিশ শিগগিরই বিমান ম্যানেজমেন্টকে জানাবেন। একই সঙ্গে ক্যাপ্টেন তোফায়েলের পাইলট লাইসেন্স থাকবে কি থাকবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সিভিল এভিয়েশনের একজন ইন্সট্রাক্টরকে দিয়ে পরীক্ষা নেবেন। জানা গেছে, ফ্লাইট ম্যানুয়েলের নিয়ম-কানুন না মেনেই ক্যাপ্টেন তোফায়েল ১৪ নভেম্বর ৩শ’ যাত্রী নিয়ে মালয়েশিয়া-ঢাকা রুটের একটি বিমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করিয়েছিলেন। ট্যাক্সিওয়ে (হোটেল সাইড) বন্ধ থাকার পরও তিনি ৮৯ নটিক্যাল মাইলবেগে ফ্লাইটটি ওই ট্যাক্সিওয়েতে ঢুকিয়ে দেয়। পরে ক্যাপ্টেন জামান চিৎকার করে গতিরোধ করান। এ ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন একজন বিমানের চালকের আসনে থাকলে সেই এয়ার ক্রাফট কতটা নিরাপদ থাকবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না বলে মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। সিভিল এভিয়েশনের এফআই (ফ্লাইট ইন্সফেকশন) শাখার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিমানের পাইলটদের প্রধান হল ডিএফও ক্যাপ্টেন তোফায়েল। তার ফ্লাইট অপারেশন যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে তাহলে তিনি কিভাবে অন্য পাইলটদের পরিচালনা করবেন? তিনি অবিলম্বে তোফায়েলকে বিমানের ডিএফও থেকে সরিয়ে তার লাইসেন্স নতুন করে পরীক্ষার দাবি জানান। একই সঙ্গে ২০১৩ সালে ফেল করার পরও ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল কেন তাকে অতিরিক্ত সময় দিয়ে পাস করাতে সহায়তা করল তা তদন্ত করার দাবি জানান। তার মতে, এই তদন্ত করলে বিমানের ট্রেনিং শাখায় পাইলটদের ট্রেনিংয়ে কিভাবে শত শত কোটি টাকার আন্ডারহ্যান্ড ডিলিং হয়েছে তা বেরিয়ে আসবে। বেবিচকের অপর এক কর্মকর্তা জানান, সিভিল এভিয়েশন ও আইকাওর কাছে বিমানের ট্রেনিং শাখার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জমা আছে। এগুলোর মধ্যে অর্থের বিনিময়ে পাইলট-ফাস্ট অফিসারকে ট্রেনিংয়ে পাঠানো, সিনিয়রিটি লঙ্ঘন করা, পছন্দের প্রার্থী না হলে তাকে ট্রেনিংয়ে ফেল করানোর বিষয়ও আছে। এছাড়া একাধিকবার ফেল করা ও দুর্ঘটনা ঘটানো পাইলট ও ফাস্ট অফিসারকে অর্থের বিনিময়ে পাস করানো, নারী কেলেংকারি, ১৮ ক্যাডেট পাইলটকে ৪ বছরেও ট্রেনিং না করিয়ে নতুন করে ১৬ ফাস্ট অফিসার নিয়োগ দেয়ার ঘটনা অন্যতম। এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করে অর্থের বিনিময়ে পাইলট নিয়োগ, বিভিন্ন বিভাগের ডেপুটি চিফদের দিয়ে ফাস্ট অফিসার নিয়োগের যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন অভিযোগগুলোর অন্যতম। অনুমোদন ছাড়াই পাইলট ট্রেনিং : ম্যানেজমেন্টের অনুমোদন ছাড়াই গোপনে বাংলাদেশ বিমানের ডেপুটি চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন শামীম নজরুল লন্ডন থেকে এটিপিএল (এয়ারলাইন্স ট্রান্সপোর্ট পাইলট লাইসেন্স) ট্রেনিং সম্পন্ন করেছে। অনুমোদন ছাড়াই আবার লাইসেন্স পেতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে আবেদনও করেন। চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন ইলিয়াস স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই আবেদন জানানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, ট্রেনিং শাখার শীর্ষ পদে থাকায় এই দুই কর্মকর্তার যোগসাজশে গোপনে এ ধরনের ট্রেনিং করায় বিমানের কোটি টাকার বেশি অর্থ গচ্চা গেছে। অপরদিকে ট্রেনিং শাখার খোদ ডেপুটি প্রধানের এ ধরনের অপকর্মের খবরে আইকাও (ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন) বিস্ময় প্রকাশ করে বিমানের ট্রেনিং শাখাকে ব্ল্যাক লিস্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। চিফ অব ট্রেনিং ক্যাপ্টেন ইলিয়াস যুগান্তরকে টেলিফোনে জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই বলতে পারবেন না। ক্যাপ্টেন শামীম কার নির্দেশে ট্রেনিং করেছে এবং এটিপিএল লাইসেন্স দিতে আপনি কার নির্দেশে সিভিল এভিয়েশনকে চিঠি দিলেন এ প্রসঙ্গে তিনি কোনো তথ্য দিতে পারবেন না বলেও জানান। তবে শামীমের লাইসেন্সের বিষয়ে তিনি শামীমকেই জিজ্ঞাস করার কথা বলেন। ক্যাপ্টেন শামীমকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে টেলিফোন রেখে দেন। তার বিরুদ্ধে কিছু লিখেও কোনো লাভ হবে না বলেও তিনি দম্ভের সঙ্গে জানান। বেবিচক কর্তৃপক্ষ ক্যাপ্টেন শামীম নজরুলের দেয়া আবেদন খারিজ করে উল্টো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিমান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে। সিভিল এভিয়েশনের এফআই (ফ্লাইট ইন্সফেকশন) বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন আইন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই লাইসেন্স দূরের কথা কোনো পাইলটকে এ ধরনের ট্রেনিংয়ে যাওয়ারও বিধান নেই। বিমানের মতো রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী একটি প্রতিষ্ঠানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার এ ধরনের ট্রেনিং নেয়া এবং লাইসেন্স পেতে রেগুলেটরি কমিশনের কাছে আবেদন করা গুরুতর অপরাধ। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ক্যাপ্টেন শামীমের ফাস্ট অফিসারের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাওয়ার বিধান রয়েছে। ভিভিআইপি ফ্লাইটে নিরাপত্তা ত্র“টির নজির : বিমানের ভিভিআইপি ফ্লাইটের বিরাজমান নিরাপত্তা ভিভিআইপিদের আকাশ পথের যাতায়াত নিরাপদ রাখতে পারবে কিনা তা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, জঙ্গিদের নিশানায় রয়েছেন অনেক ভিভিআইপি। কাজেই তাদের বহনকারী ফ্লাইটের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজন। গোয়েন্দা সংস্থার পদস্থ একজন কর্মকর্তা জানান, মালামাল বহনকারী ফ্লাইটেই কেবল পচনশীল দ্রব্য বহন করে থাকে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া খোদ প্রধানমন্ত্রীর নাইজেরিয়াগামী ফ্লাইটে নিরাপত্তা ট্যাগবিহীন ২০ কেজি আম তুলে দেয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়া যেখানে প্রধানমন্ত্রী ফ্লাইট পরিচালনা করার কথা সিনিয়র পাইলটদের সেখানে সামান্য ফাস্ট অফিসার শামীম নজরুল কিভাবে পাইলটের আসনে বসেন তাও রহস্যজনক। এরপরও কিভাবে ওই কর্মকর্তাকে বিমানের এতবড় পদে (ডেপুটি চিফ অব ট্রেনিং) বসানো হল তা নিয়েও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানের একজন রাষ্ট্রপতির ফ্লাইটে আমের ঝুড়ি তুলে দেয়া হয়েছিল। আকাশেই সেই আমের ঝুড়ির ভেতর থাকা বোমা বিস্ফোরণে তিনি নিহত হন। এনবিআরের তদন্ত রিপোর্ট : সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও আকাশ পরিবহন ব্যবস্থাকে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে। বিমান থেকে ১২৪ কেজি স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খানের নেতৃত্বে কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ইতিহাসে চাঞ্চল্যকর এই স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় সংঘবদ্ধ অপরাধসহ নিরাপত্তা ঝুঁকি বিদ্যমান। এসব অপরাধীর সঙ্গে আন্তঃরাষ্ট্রীয় অন্য কোনো অপরাধে সম্পৃক্ততা থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে। চোরাচালান সিন্ডিকেটের কারণে গোটা আকাশ পথই এখন বড় ধরনের নিরাপত্তার হুমকিতে আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব অপরাধী বা সন্ত্রাসী চক্র বিমানের কর্মী ব্যবহার করে সহজেই যে কোনো নাশকতামূলক ঘটনা ঘটাতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণ যাত্রী ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীসহ ভিভিআইপি মুভমেন্টের নিরাপত্তা মারাত্মক বিঘ্নিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৩টি বড় স্বর্ণের চোরাচালান বিমানের ফ্লাইটে হয়েছে। বিমান কর্মীদের সহায়তা ছাড়া এত বড় চোরাচালান সম্ভব নয়। তিনি বলেন, এখনই কঠোর না হলে এসব চোরাচালানির মাধ্যমে যে কোনো সময় বড় ধরনের নাশকতাও হতে পারে।
No comments:
Post a Comment