ক্ষমতাসীন সরকারকে অবৈধ ও জালিম আখ্যা দিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, এদের হাত থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে সর্বাত্মক আন্দোলনের বিকল্প নেই। গতকাল এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার ভোটচুরির নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। এরা দেশের সব কিছু ধ্বংস করে ফেলেছে। এ সরকারকে হটাতে সর্বাত্মক আন্দোলনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক র
হমানের ৫০তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে দলের উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে তারেকের সুস্থতা ও দীর্ঘজীবন কামনা করে মোনাজাত করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আব্দুল মালেক। পরে তারেক রহমানের রাজনীতি ও লন্ডনে তার কর্মকাণ্ডের ওপর নির্মিত দুইটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারেক রহমানকে আমরা আর দূরে দেখতে চাই না। আমাদের নেত্রীর পাশে তাকে দেখতে চাই। আমাদের বসে থাকার আর সময় নেই। তারেক রহমানের জন্মদিনে শপথ হোক শেখ হাসিনার জালেম সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, সাংবাদিক শফিক রেহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। অনুষ্ঠানের অতিথি আসনে বসে বক্তব্য শোনেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন ড. আর এ গণি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান, আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মাহবুবউদ্দিন খোকন, আহমেদ আজম খান, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, গোলাম আকবর খন্দকার, ফজলুল হক মিলন, হারুন-অর রশীদ, নূর মোহাম্মদ খান, নিতাই রায় চৌধুরী, আসাদুজ্জামান রিপন, আবদুস সালাম, খায়রুল কবীর খোকন, নাজিমউদ্দিন আলম, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, ইসলামিক পার্টির আবদুল মোবিন, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনিসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। অনুষ্ঠানের মঞ্চ সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। ৫০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের যে পতাকা শহীদ জিয়াউর রহমান বহন করেছিলেন সেই পতাকা দেশনেত্রী ৩৫ বছর ধরে বহন করে এখনো উড্ডীন রেখেছেন। সেই পতাকাই তারেক রহমান বহন করছেন। এই পতাকা কোনো ব্যক্তিবিশেষের নয়। এই পতাকা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের। এ জন্যই সব ষড়যন্ত্র তাকে নিয়ে। তাই বলব, আমরা যদি সত্যিকার অর্থে তারেক রহমানকে ভালোবাসি, তাহলে এই জালিম সরকারকে হটিয়ে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জন্মদিনে তাকে যদি আমরা কিছু উপহার দিতে চাইÑ সরকার হটানোই হবে বড় উপহার। এ জন্য নেতাকর্মীদের আন্দোলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। লন্ডনে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানের দীর্ঘজীবন ও আশু আরোগ্য কামনা করেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অভিযোগ করেন, ১/১১ সরকারের আমলে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তারেক রহমানকে গ্রেফতার করে বন্দী অবস্থায় নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তাকে (তারেক রহমান) হত্যারও ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবেছিল, তারেক রহমানকে হত্যা করতে পারলে এ দেশকে পরনিভরশীল, মুখাপেী ও সেবাদাস একটি রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবে। কিন্তু যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন তারেক রহমান আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন এবং দলের নেতৃত্ব দেবেন। দেশবাসীকে উজ্জীবীত করবেন তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার গত বছরের নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৩১০ জন ভাইকে শহীদ এবং ৬৫ জনকে গুম করেছে। এদের ঋণ শোধ করতে হলে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। এটাই হোক তারেক রহমানের জন্মদিনের শপথ। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, লন্ডনের কুইন্স মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে তারেক রহমান যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, আমি আশা করছি, আগামী মাস তিনেকের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই কথাগুলো তিনি বলেবেন। তারেককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের যদি যর্থাথতা থাকে, আমার চিন্তাভাবনা ঋজু হয়, তাহলে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে দেশের চেহারা এমন থাকবে না। মাঝখানের সময়টাতে আন্দোলনে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়বে। আমার ছাত্রতুল্য তারেক রহমানের নতুন দিনের অপোয় আমি রইলাম। খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান বলেন, তারেক রহমান কেবল নেতা নন, তিনি এ দেশের স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও তিনি এ দেশের মানুষ কাছে সরব হয়ে আছেন। আ স ম হান্নান শাহ বলেন, আমাদের ম্যাডাম যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তারেক রহমান সরকারি তহবিল থেকে ২টা টাকাও কোনো দিন খরচ করেননি। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় মন্ত্রী পদমযার্দায় প্রতি মাসে দুই লাখ ডলার বেতন নিচ্ছেন। এরকম বেতন রাষ্ট্রপতিও পান না। এভাবে দেশের অর্থ বিদেশে যাচ্ছে, এজন্য মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা যায়। আগামীতে তা কাযর্কর করা হবে। মির্জা আব্বাস বলেন, মতাসীনেরা বলছে, তারেক রহমান ফেরারি। আমি বলতে চাই, তারেক রহমান ফেরারি নন, তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি যখন সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন, সরকারের তখতে তাউস নড়বড়ে হয়ে যাবে। তারেকের গায়ে হাত দেয়ার মতো সাহস আওয়ামী লীগের নেই। আগামীতেও হবে না। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আমাদের আন্দোলনে নামতে হবে। সরকার পতন না হওয়া পযর্ন্ত চলবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
No comments:
Post a Comment