পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বিল চূড়ান্ত করল। গতকাল মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে বিলটি চূড়ান্ত হয়। স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেস নেতা শশী থারুর আগামী সপ্তাহে তাঁদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করবেন। তাতে বলা হবে, যত দ্রুত সম্ভব এই বিলটি যেন পাস করা হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের দুই সাংসদ সুগত বসু ও মমতাজ সংঘমিতা মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিলের পক্ষে তাঁরাও সায় দিয়েছেন। সীমান্ত বিল বিশ বাঁও জলে পড়ে যায় পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধিতা করায়। কিন্তু ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিবেশীদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার নীতি বিজেপি নেতৃত্বকে সুর বদলাতে বাধ্য করে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সম্প্রতি দিল্লি এসে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাজ্যের মানুষ চাইলে ছিটমহল হস্তান্তরে তাঁদের আপত্তি নেই। তবে তিনি পুনর্বাসনের ওপর জোর দেন এবং বলেন, রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে কেন্দ্রকেই সব দায়িত্ব নিতে হবে। মঙ্গলবারের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সেই বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হবে, রাজ্য সরকারদের সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রকে পুনর্বহাল ও পুনর্বাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। স্থায়ী কমিটির এক সূত্রের কথায়, বিজেপি সদস্যদের কেউ কোনো আপত্তি জানাননি। তৃণমূল কংগ্রেসের দুই সদস্য দেশের স্বার্থে ও মানবিক কারণে চুক্তি বাস্তবায়নে সম্মতি দিয়েছেন। পঞ্চদশ লোকসভার শেষ দিকে ইউপিএ সরকার একরকম জোর করেই সীমান্ত বিলটি (১১৯তম সংবিধান সংশোধন বিল) রাজ্যসভায় পেশ করে। সে সময় এই বিলের বিরোধিতায় সরব ছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, তৃণমূল কংগ্রেস ও অসম গণপরিষদ। কিন্তু কেন্দ্রে মোদির ক্ষমতাসীন হওয়া ছবিটা পাল্টে দেয়। স্থায়ী কমিটির আগের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দিল্লির রেসিডেন্ট কমিশনার। কিন্তু বারবার জিজ্ঞাসা সত্ত্বেও তিনি কোনো অভিমত জানাননি। গতকালের বৈঠকে তাই সরাসরি সুগত বসুকে তাঁর অভিমত জানাতে বলা হয়। তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই বিল পাস করতে তাঁদের আপত্তি নেই। তবে এ ধরনের বিল বাস্তবায়িত করার আগে সব সময় রাজ্য সরকারদের সঙ্গে কথা বলা উচিত। সুগত বৈঠকে বলেন, সেই আলোচনা হওয়া উচিত রাজনৈতিক স্তরে, আমলা স্তরে নয়। রাজ্য সরকারদের সঙ্গে নিয়ে বিল চূড়ান্ত করার এই প্রস্তাব স্থায়ী কমিটি গ্রহণ করে। সিপিএমের মহম্মদ সেলিম বলেন, তৃণমূল কংগ্রেসের সম্মত হওয়া ইতিবাচক। চূড়ান্ত প্রতিবেদন সুগতর এই সুপারিশ স্থান পাবে বলে কমিটি সূত্রে জানা গেছে। বিলটি স্থায়ী কমিটির চূড়ান্ত করা নিয়ে আসামের বিজেপি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য তিন দিন আগে এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, জাতীয় নেতৃত্ব চাইলে তাঁদের তা মেনে নিতেই হবে। কিন্তু এটাও ঠিক, সীমান্ত নিয়ে আসামের জনগণের একটা ‘সেন্টিমেন্ট’ রয়েছে। সে দিকেও নজর দেওয়া দরকার। তিনি জানান, উলফা নেতা অনুপ চেটিয়ার প্রত্যাবর্তনও ঝুলে রয়েছে। তাঁকে দ্রুত ফেরত পাঠানো দরকার। আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সুপারিশ সরকারকে পেশ করার পর সরকার বিল প্রস্তুত করবে। সংবিধান সংশোধন বিল বলে তা পড়ার জন্য সাংসদদের অন্তত সাত দিন সময় দেওয়া রীতি। সরকার চাইলে সেই রীতি মেনেই ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসের আগে বিলটি পাস করা সম্ভব। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের শেষ হচ্ছে ২৩ ডিসেম্বর। ভারত সফররত বাংলাদেশের সংসদীয় প্রতিনিধিদল গতকাল স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান শশী থারুরের সঙ্গে দেখা করেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের কথা হয়।
No comments:
Post a Comment